More

Social Media

Light
Dark

সুপার ফ্লপ সুপার টেস্ট

সুপার টেস্ট। ২০০৪-০৫ মৌসুমে অভিনব এক ধারণা নিয়ে আসে আইসিসি। মূলত বিষয়টা একটা ক্রিকেট সিরিজ। তাতে একটা টেস্ট হবে আর তিনটা ওয়ানডে ম্যাচ হবে। ম্যাচের একটা দল ও তাঁর কুশীলবরা নির্ধারিত। অস্ট্রেলিয়া দল – দ্য মাইটি অস্ট্রেলিয়া। টানা তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল। টেস্টের এক নম্বর দল অস্ট্রেলিয়া।

আরেকটা দল? হ্যাঁ এখানেই হল আসল চমক। আরেকটা দল হল বিশ্ব একাদশ। আজকালকার মত অবসর প্রাপ্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে গঠিত বিশ্বকাপ দল নয় – রীতিমত সময়ে সেরা কিংবদন্তিদের নিয়ে গড়া বিশ্ব একাদশ। যদিও, নামকরা তারকারা প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। হারে সবগুলো ম্যাচেই। আইসিসির এই সুপার সিরিজের ধারণারও সেখানেই সমাপ্তি ঘটে।

আইসিসি সুপার টেস্টের মূল উদ্দেশ্যই ছিল প্রতি চার বছর পরপর আয়োজনের। সেখানে টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বরে থাকা দলটির সাথে বিশ্ব একাদশের মুখোমুখি লড়াইয়ে একটি টেস্ট ও তিন ওয়ানডের একটি সিরিজ হবে। এই আইসিসি বিশ্ব একাদশ বাছাই করা হয় অন্যান্য দেশ হতে নির্বাচিত বাঘা বাঘা ক্রিকেটারদের নিয়ে। 

ads

২০০৫ সালের ১৪ অক্টেবার। আইসিসি বিশ্ব একাদশ প্রথম এবং একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি খেলার জন্য মাঠে নামে। প্রতিপক্ষ ছিলো তৎকালীন র‍্যাংকিংয়ে থাকা এক নম্বর দল অস্ট্রেলিয়া। যদিও আইসিসির এমন প্রস্তাব ম্যাচগুলোর আন্তর্জাতিক মর্যাদা নিয়ে বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়েছিল। 

এর আগে ওয়ানডে সিরিজে ধরাশায়ী হয় বিশ্ব একাদশ। হারে সবগুলো ম্যাচ।  তারপরও  সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডেশুরু হওয়া ছয় দিনের সুপার টেস্টটি বেশ প্রতিযোগিতামূলক হবে বলেই আশা করা হচ্ছিল।

কারণ, তারকা বা কার্যকারিতা কোনো কিছুরই অভাব ছিল না বিশ্ব একাদশের। আইসিসি বিশ্ব একাদশের নেতৃত্বে ছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। সাথে বীরেন্দ্র শেবাগ, রাহুল দ্রাবিড়, ব্রায়ান লারা, ইনজামাম উল হক, জ্যাক ক্যালিস, মার্ক বাউচার, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, স্টিভ হার্মিসন এবং মুত্তিয়া মুরালিধরনকে নিয়ে তৈরি হয়ছিল একাদশ।

অস্ট্রেলিয়া দলও কম নয়। ছিলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক, সাইমন ক্যাটিচ, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়াটসন, শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাকগ্রা, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল। 

গ্রায়েম স্মিথ এবং বীরেন্দ্র শেবাগ ছিলেন বিশ্ব একাদশের হয়তে ওপেনিং এর দায়িত্বে। তখনকার সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে গ্রায়েম স্মিথ ছিলেন সুপারস্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ব্যাট হাতে খুব কম অধিনায়কই সফল হয়েছেন। কিন্তু সুপার টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গ্রায়েম নিজের জৌলুস বজায় রাখতে পারেননি। দুই ইনিংসেই ব্যর্থ ছিলেন বলা যায়। প্রথম ইনিংসে শেবাগ ৭৬ রান করে দলকে ভালো অবস্থানে যেতে সাহায্য করেছিলেন।

রাহুল দ্রাবিড়, ব্রায়ান লারা, ইনজামাম উল হক এবং মার্ক বাউচার এই চারজন ছিলেন বিশ্ব একাদশের মিডল অর্ডারের দায়িত্বে। এই মিডল অর্ডার বেশ ব্যর্থ হয়েছিলেন। যা সুপার টেস্ট ম্যাচটি হারতে বেশ প্রভাবিত করেছে বিশ্ব একাদশকে। বিশেষ করে ইনজামাম উল হক দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র এক রান করেন। মার্ক বাউচার উইকেট রক্ষণের দায়িত্বেও ছিলেন।

আইসিসি বিশ্ব একাদশে সেই যুগের সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন জ্যাক ক্যালিস এবং অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। ফ্লিনটফ ছিলেন ইউনিটের দ্বিতীয় প্রধান পেসার। ক্যালিস যদিও খেলায় মোট দশ ওভার বল করেছিলেন, মাত্র একটি একটা উইকেট নিয়েছিলেন।

ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, স্টিভ হার্মিসন এবং মুত্তিয়া মুরালিধরন – তিনজন ছিলেন দলের মূল স্ট্রাইক বোলার। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি তখন বেশ ফর্মে ছিলেন। স্পিন বিভাগে মুরালিধরনের সঙ্গী ছিলেন ভেট্টোরি। ওই সময়ের পেসারদের মধ্যেই অন্যতম সেরা ছিলেন স্টিভ হার্মিসন।

সুপার টেস্টে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ওভারেই হার্মিস, অজি ওপেনার জাস্টিন ল্যাঙ্গারের উইকেট তুলে নিয়ে বিশ্ব একাদশ ভালো শুরু করে। যাই হোক, ম্যাথু হেইডেনের একটি সেঞ্চুরি এবং অ্যাডাম গিলক্রিস্টের একটি ৯৪ রানের ইনিংস অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে সম্মানজনক ৩৪৫ রানে পৌঁছে দিয়েছিল।

অ্যাশেজের নায়ক, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ৪/৫৯ বোলিং ফিগারে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন। ওদিকে মুরালি দুটি উইকেট তুলেছিলেন। মজার বিষয় হল, অস্ট্রেলিয়া শেন ওয়ার্ন এবং স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের দুই লেগ স্পিনারকে দলে নিয়েছি। তাঁরা উভয়েই বিশ্ব একাদশের ব্যাটসম্যানদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বিশ্ব একাদশের স্মিথ (১১), দ্রাবিড় (০) এবং লারা (৫) স্কোরবোর্ডে – ৫০ রান পার করার আগেই ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ায় বিশ্ব একাদশের শুরুটা ভয়ঙ্কর ছিল। বিশ্ব একাদশের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন শেবাগ। ওয়ার্নের বলে তিনি আউট হওয়ার আগে শেবাগ ও ক্যালিস জুটি ৯১ রান যোগ করেন।

ক্যালিস ৪৪ এবং ফ্লিনটফ চারটি ছক্কায় ৩৬ রান করেন। তবে লোয়ার অর্ডার থেকে খুব বেশি সমর্থন ছিল না। ফলে বিশ্ব একাদশ মাত্র ১৯০ রানে অলআউট হয়। ওয়ার্ন এবং ম্যাকগিল  মাত্র ৬২ রানে সাতটি উইকেট ভাগ করে নেন।

ফ্লিনটফ, হার্মিসন এবং মুরালি তিনটি করে উইকেট তুলে নেয়ায় অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬০/২ অবস্থান থেকে ১৯৯ রানে অলআউট হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে হেইডেন আবারও সর্বোচ্চ ৭৭ এবং রিকি পন্টিং ৫৪ রান করেন। তারপরও লিড ছিল ৩৫৪ রান এবং সেই কঠিন পিচে ৩৫৫ রানের টার্গেট খুব একটা সহজ ছিল না।

বিশ্ব একাদশ শুরুতেই তাদের ওপেনারদের হারিয়েছিল। মিডল অর্ডার থেকে কিছুটা প্রতিরোধ থাকলেও, শেন ওয়ার্ন একাই দ্রাবিড় এবং লারা – দু’জনের উইকেট তুলে নেন। আর ম্যাকগিল ঝড়ে লোয়ার অর্ডার গুড়িয়ে যায়। বিশ্ব একাদশ ৫০ ওভারে ১৪৪ রানেই অলআউট হয়। ম্যাচটি ২১০ রানে হেরে যায়। ম্যাকগিল দ্বিতীয় ইনিংসে ফাইফার নিয়েছিলেন। ম্যাচ শেষে তার ফিগার ছিল ৯/৮২। আর ওয়ার্নের ছিল ৬/৭১। এই দু’জন মিলেই বিশ্ব একাদশকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলেন।

ম্যাচের এই বেহাল দশার পর ক্রিকেট ইতিহাসে সুপার টেস্টের পুনরাবৃত্তি আর ঘটেনি। তবে ইতিহাসের পাতায় অস্ট্রেলিয়ার এমন বিধ্বংসী রূপ, এমন অনায়াস জয়ের ঘটনা উজ্জ্বল হয়েই থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার রূদ্রমূর্তির চূড়ান্ত রূপ যেন ছিল সেই সুপার টেস্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link