More

Social Media

Light
Dark

রোহিত শর্মা, ক্যাপ্টেন’স লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট

‘ক্যাপ্টেন’স লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ বলে ক্রীড়াঙ্গনে একটা জনপ্রিয় কথা চালু রয়েছে। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দলকে সেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটিই করছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা । টানা নয় ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে ভারতের আধিপত্য যেমন চলছে, তেমনি রোহিত শর্মার ব্যাটিং আগ্রাসনেও যেন কোথাও বিরতি নেই। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া রোহিতের ব্যাটও দারুণভাবে অবদান রাখছে ভারতের এ ‘অপরাজেয়’ যাত্রায়।

৫৯৪ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার হচ্ছেন বিরাট কোহলি। আর ৫০৩ রান নিয়ে এই তালিকায় রোহিত শর্মা রয়েছেন চতুর্থ স্থানে। তবে দলের জয়ের পিছনে রোহিতের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। বরং প্রায় প্রতি ম্যাচেই তাঁর উড়ন্ত সূচনা দলের একটা জয়ের ভিত্তি তৈরি করেছে। এ ছাড়া তাঁর আক্রমণাত্বক ব্যাটিং ভারতের পুরো ব্যাটিং অর্ডারকেই এক রকম ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। যার কারণে টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার- ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের সংমিশ্রণটা হচ্ছে দারুণ।

শুরুটা করেছিলেন শূন্য দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হয়ে বিশ্বকাপের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি রোহিত শর্মার। কিন্তু শূন্য রানের ফেরার পরই পূর্ণতার পথ খুঁজেছেন ভারতের এ অধিনায়ক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই ফিরে আসলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। আফগানদের বিপক্ষে ৮৪ বলে ১৩১ রানের ইনিংস দিয়ে সেই যে আগ্রাসনের শুরু, এর পর আর রোহিতের ব্যাটিংয়ের চিত্র বদলায়নি।

ads

পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই পেতে পারতেন সেঞ্চুরি। কিন্তু ৮৬ রানে আউট হয়ে তিন অঙ্ক আর ছোঁয়া হয়নি রোহিতের। এরপর অবশ্য কোনো ম্যাচেই শতক হাঁকাতে পারেননি। কিন্তু সিংহভাগ ম্যাচেই প্রতিপক্ষে বোলিং আক্রমণের কাছে রীতিমত ত্রাস হয়ে ছিলেন এ ব্যাটার।

সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪০ বলে ৪৮, একই সংখ্যক বলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৬ রানের ইনিংস খেলেন এ ব্যাটার। আর ইনিংসের শুরুতে তাঁর এমন কার্যকরী ইনিংসের সুতো ধরেই ভারত পেয়ে যায় জয়ের ভিত্তি কিংবা প্রতিপক্ষকে ভড়কে দেওয়ার মতো সংগ্রহ।

কিউইদের বিপক্ষে ম্যাচের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে শতকের পথে হেঁটেছিলেন রোহিত শর্মা। কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ন এবারও দুর্ভাগ্যের শিকার। ৮৭ রানে ফিরে যেতে হয় তাঁকে। রোহিতের ঐ ইনিংস ভারতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা ভারতের ২২৯ দলীয় সংগ্রহের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। যদিও সেই কম পুঁজি নিয়েই ইংল্যান্ডকে ১০০ রানে হারিয়েছিল ভারত। যার নেপথ্যে ছিল ভারতীয় পেসারদের দুর্দান্ত বোলিং , আর না বললেই নয় রোহিতের ৮৭ রানের ইনিংসের সাথে তাঁর জাদুকরী নেতৃত্ব।

রোহিত শর্মা এরপরই একবারই মাত্র এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ রানের ঐ ইনিংসের পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪০ আর ডাচদের বিপক্ষে খেলেন ৬১ রানের ইনিংস। আর রাউন্ড রবিন লিগের ৯ ম্যাচ মিলিয়ে এমন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে কত রেকর্ডেই না রোহিত নাম লেখালেন।প্রায় প্রতিটি ম্যাচে ইনিংসের শুরুতেই রোহিত শর্মা কতটা ব্যাট হাতে কতটা আক্রমণাত্বক ছিলেন, তার প্রমাণ মেলে পাওয়ার প্লে-র পরিসংখ্যানে।

রাউন্ড রবিন লিগ শেষে পাওয়ার প্লে-তে সর্বোচ্চ ৩০৭ রান এসেছে রোহিতের ব্যাট থেকেই। যেখানে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল ১২৯.৫৪। শুধু তাই নয়,পাওয়ার প্লে-তে চার ছক্কা হাঁকানোর দিক দিয়ে এ ওপেনার রয়েছেন সবার শীর্ষে। ওপেনার হিসেবে প্রথম পাওয়ার প্লে অর্থাৎ ইনিংসের ১ থেকে ১০ ওভারের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ টা ছক্কা মেরেছেন তিনি।

একই সাথে, প্রথম পাওয়ার প্লে-তে সর্বোচ্চ ৩৮ টা চারের রেকর্ডও রোহিত শর্মার।  এ ছাড়া, এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে এত দিন সবার ওপরে ছিলেন এ বি ডি ভিলিয়ার্স। ২০১৫ সালে তিনি মোট ৫৮ টি ছক্কা মেরেছিলেন। তবে সেই রেকর্ড এখন অতীত। এরই মধ্যে এ বছরে ৫৯ টা ছক্কা হাঁকিয়েছেন রোহিত।

তবে ব্যক্তিগত অর্জনে তিনি যতই সমৃদ্ধ হউন না কেন, এবারে বিশ্বকাপ জয়ই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। ১৯৮৩ তে কপিল দেব, ২০১১ তে মহেন্দ্র সিং ধোনি, ২০২৩-এসে এবার তাদের পাশে নাম লেখানোর অপেক্ষায় রোহিত। পারবেন তো রোহিত?

 

 

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link