More

Social Media

Light
Dark

সৌদি বিপর্যয়, দায় কি রোনালদোর একার!

সবাইকে চমকে দিয়ে এবারের শীতকালীন দলবদলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরে পাড়ি জমান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। যদিও বিশ্ব সেরা এই তারকাকে নিয়ে লিগ শিরোপা জিততে পারেনি দলটি।

ফলে ব্যর্থতার অনেকটা দায় ভার রোনালদোর কাঁধে আসলেও দলটিতে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন এই তারকা। আসুন দেখে নেয়া যাক, সৌদিতে রোনালদোর প্রথম ছয় মাসের খুঁটিনাটি। 

  • আগের চাইতে ভালো? 

কয়েক দিন আগেই রোনালদো দাবি করেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদের সময়টা মোটেই ভালো কাটেনি তাঁর। ম্যানেজমেন্টের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ক্লাব ছাড়েন এই তারকা। 

ads

যদিও পরে রোনালদো বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের অংশ এটা। আমাকে আগের চাইতে ভালো হতে সাহায্য করেছে ঘটনাগুলো।’

কিন্তু সত্যিটা হলো রোনালদো ইদানীংকালে নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। মাঠেই বেশ কয়েকবার মেজাজ হারাতে দেখা গেছে তাঁকে।

পানির বোতলে লাথি মেরেছেন, সেলফির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, জার্সি বদলে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, এমনকি প্রতিপক্ষের ফুটবলারকে টেনে মাঠে শুইয়ে দেন। এছাড়া দর্শকদের সাথেও বাজে আচরণ করতে দেখা যায় তাঁকে।  

  • ব্যক্তিগত জীবন 

সৌদি আরবে প্রবেশের পরই নিজের পরিবার নিয়ে উটকো এক ঝামেলার সম্মুখীন হন রোনালদো। পর্তুগিজ এই তারকা এবং তাঁর সন্তানদের মা জর্জিনা রদ্রিগেজ এখনো বিয়ে করেননি।

অন্যদিকে, সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া দুজন নারী-পুরুষ এক ছাদের তলায় থাকতে পারবেন না। যদিও সহজেই সেই সমস্যা মেটানো গিয়েছিল পরে। তবে রোনালদোর মনে বিরূপ প্রভাব রেখেছিল এই ঝামেলা। 

এছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সাংবাদিকদের নানা গুজবে বিরক্ত হয়েছিলেন এই তারকা। একবার তো বলেছিলেন, ‘হিংসুটেরা গুজব রটায় আর গাধারাই কেবল সেগুলো বিশ্বাস করে।’  

  • জীবনে সুখী নন এই তারকা 

ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রিভালদো বলেন, ‘কখনো কখনো খেলোয়াড়েরা সৌদি আরবের ক্লাবগুলোর বড় অংকের চুক্তির লোভে পড়ে বোকার মতো কাজ করে বসেন।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু সেখানকার জীবন বেশ কঠিন এবং ফুটবল খেলাটা এতটাও সহজ নয়। সম্ভবত সে হতাশাপূর্ণ এক সময় পার করছে। টাকার অংকটা কি নিশ্চিতভাবেই তাঁকে খুশি করার জন্য যথেষ্ট নয়?’ 

এক স্প্যানিশ দৈনিকের মতে, সৌদির ক্লাবগুলোর অবকাঠামো নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন এই তারকা। তাঁর মতে, এখনো আধুনিক ফুটবল থেকে অনেক পিছিয়ে এখানকার ক্লাবগুলো।

তবে আল নাসের অবশ্য তাঁকে খুশি রাখতে চেষ্টার কমতি করছে না। গত কয়েক মাসে দুবার ক্লাবের পক্ষ থেকে বিশেষ কেক কাটা হয়েছে তাঁর জন্য। একবার তাঁর জন্মদিনে, অন্যবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে মাঠে নামার জন্য। 

  • সতীর্থদের উৎসাহিত করা  

রোনালদো যেখানেই খেলেন, সেই দলের ফুটবলারদেরই উৎসাহিত করেন নিজেদের খেলায় আরো উন্নতি আনার জন্য। 

আল নাসরেও ফুটবলারদের নিজেদের ট্যাকটিক্যাল ব্যাপারে উন্নতির পাশাপাশি ফিটনেস এবং স্বাস্থ্য নিয়ে ফুটবলারদের সচেতন করে তুলেছেন এই তারকা।

দলটির পুষ্টিবিদ জোসে ব্লেসা বলেন, ‘ও দারুণ পেশাদার একজন ফুটবলার। তাঁর সাথে ফিটনেস কিংবা ডায়েট নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁকে আসলে শেখানোর কিছু নেই। সে  নিজেই আসলে আমাদের সবাইকে শেখাচ্ছে কিভাবে আরো উন্নতি আনা যায়।’

  • তাঁর মানের ফুটবলার সম্মান পাবার যোগ্য! 

রোনালদোকে দলের ভেড়ানোর জন্য আল নাসরকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল ক্যামেরুনের তারকা ভিনসেন্ট আবুবককে। কেননা সৌদি লীগের নিয়মে কোন দলের বিদেশি ফুটবলার ভেড়ানোর সংখ্যাটা সীমিত। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল দলটি। 

কেবল তাই নয়, একদম শুরুতেই আল নাসরের অধিনায়কত্ব পেয়ে যান এই তারকা। সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও দলের তারকারা অবশ্য খুশিমনেই মেনে নিয়েছিলেন সেটা।

দলটির উজবেক মিডফিল্ডার জালালউদ্দিন মাশারিপভ বলেন, ‘আমরা এটা আশা করেছিলাম। রোনালদোর আসার আগে আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছিল তুমি তাঁকে সাত নম্বর জার্সি ছেড়ে দেবে? আমি কিভাবে না দিয়ে পারি! এটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তার মানের ফুটবলার সব সময় সম্মান পাবার যোগ্য। আমি সাত জার্সিটা বিনা দ্বিধায় তাঁর জন্য ছেড়ে দিয়েছি।’

  • কোচের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন

রোনালদোর নেতৃত্বে শিরোপা হারালেও অনেকের দাবি আল নাসরের ব্যর্থতার পেছনে কোচ রুদি গার্সিয়ার দায়ই বেশি। 

রোনালদো দলে নাম লেখানোর পর থেকেই দুজনের মাঝে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। এমনকি সংবাদমাধ্যমে গার্সিয়া দাবি করেন রোনালদো নয়, বরং দলে ভেড়ানোর জন্য তাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন লিওনেল মেসি।

এছাড়া আল ইত্তিহাদের কাছে ৩-১ গোলে হারের পর রোনালদোকে সরাসরি দোষারোপ করেন এই ফরাসি কোচ। যদিও ইতোমধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে এই কোচকে।  

  • মরিনহো নাকি জিদান, কে হবেন নতুন কোচ 

রোনালদোর সাথে বাজে সম্পর্কের কারণেই চাকরি হারাতে হয়েছে রুদি গার্সিয়াকে। যদিও মাঠের পারফরম্যান্সও তাঁর বিপক্ষেই কথা বলবে, লিগ শিরোপা হারানোর পাশাপাশি কিং কাপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল আল নাসেরকে। 

দলটি নতুন কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে রোনালদোর দুই সাবেক কোচ হোসে মরিনহো এবং জিনেদিন জিদানের নাম।

যদিও সৌদি আরবের ফুটবলে তাদের পাড়ি জমানোর সম্ভবানা কম। তবে রোনালদোর আকর্ষণে এই দুজনের একজনকে আল নাসরের ডাগ আউটে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।  

  • রোনালদো কি ক্লাব ছাড়বেন? 

রোনালদোর সাথে আল নাসরের চুক্তি রয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তাছাড়া কেবলমাত্র মাঠের ফুটবলে নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে সৌদির ফুটবলকে আলাদা পরিচয় এনে দিয়েছেন এই পর্তুগিজ তারকা। 

যদিও সব সময় জেতার মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামা রোনালদো লিগ শিরোপা হারিয়ে মোটেই খুশি নয়। সেই কারণেই যেকোনো সময় তাঁর ইউরোপে ফেরার গুঞ্জন শুরু হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে থাকা যেকোনো ক্লাব তাঁর আগ্রহী হয়ে উঠলে কি ঘটবে সেটা বলা মুশকিল। এছাড়া কয়েক মাস আগেও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে নাম লেখানোর গুঞ্জন ছিল তাঁর। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link