More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

জার্মান বধ, জার্মান লিগের ফসল

কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করে জোরে। আসলে ফেল করতে করতে কেউ হঠাৎ যোগ্য হিসেবে পাস করে গেলে অবাক দৃষ্টিতে বাকিরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কী করে পারল? লাস্ট বেঞ্চে বসা চুপচাপ স্টুডেন্টটা গটমট করে সবার আগে মার্কশিট নিয়ে বেরিয়ে গেল, হাউ ইস ইট পসিবল! হয় হয়, গুরু হয়। অদম্য জেদ বস্তুটা এখনও হারায়নি পৃথিবী থেকে। না হলে ফুটবলটাই উবে যাওয়ার যোগাড় হয়েছিল কিছুদিন আগে!

কেন জিতল জাপান? কী জাদু করল মাঠে? একটু ঘাঁটলে উত্তর বেরিয়ে আসে। ইদানিংকালের ফুটবলে এশিয়া থেকে অনেক এক্সপোজার হয়েছে। কেইসুকে হন্ডার পর ভাল স্ট্রাইকার ওরা পায়নি ঠিকই, কিন্তু পেয়েছে তাবড় কিছু মিডফিল্ডার। যাদের অধিকাংশই ঐ দ্বীপ থেকে সুদূর ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে। টমিয়াসু অনেকদিন খেলছে আর্সেনালে এবং ফার্স্ট ইলেভেনে প্রায় নিয়মিত।

জাপানের অধিনায়ক এবং সেন্টার ব্যাক মায়া য়োসিদা এককালে সাউদাম্পটনে খেলার পর এখন চলে গেছে জার্মান সিস্টেমে, শালকেতে। কামাডা, তানাকা, শিবাস্কি – খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জাপানের ২৬টা প্লেয়ারের মধ্যে মাত্র ৭ জন জাপান লিগের ফসল। তাও তাদের ৪ জন রিজার্ভ। বাকি সবাই ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে এবং বেশিরভাগ জার্মানিতে সেটলড। অনেক বছর ধরে একই সিস্টেমে অভ্যস্ত এই জাপান আগে থেকেই জানে কাউন্টার প্রেসিং কি জিনিস। সুতরাং, ‘ফুটবলায়ঃ নমঃ।’

ads

শুরুতেই ডানদিক থেকে ক্রস তুলে একটা ঝটকা দিয়েছিল তাই। লাইন ব্রেকে অফ সাইড বলে গোলটা হল না। আর জার্মানি শুরু থেকে হাই ব্যাকলাইনে খেলে এল, গুন্দোগান একাই বক্স টু বক্স মিডে লিঙ্ক আপ প্লে খেলতে শুরু করল। যার ফলস্বরূপ বাঁ-দিকে প্রচুর বল পেতে থাকল রাউম আর ওয়াল খেলে চট করে মাঝে ঢুকছিল মুসিয়ালা। দারুণ স্ট্র্যাটেজি।

রাউম তখন আর লেফট ব্যাক নেই, লেফট ওয়াইড মিড। ৪-২-৩-১ ছকে শুরু করে ৩-৫-২ হয়ে গেল, ডানদিকে সাইডব্যাক থেকে ফুলব্যাক হয়ে গেল সুল। আর এই সময়েই জার্মান প্রেসিংয়ের ধারাবাহিকতা দেখাল গোটা টিম। কিন্তু যে শঙ্কাটা ছিল, মানে গোল করার লোক তো নেই উপরন্তু নাম্বার টেন হিসেবে মুলার প্রায় অচলই একটু, তাই ফিনিশিংয়ে মার খাচ্ছিল।

ঠিক এটার সুযোগ নিল জাপান আর লাইন ব্রেকিং পাসে মিড থেকে আপফ্রন্টে দরজা খুলতে শুরু করল। জার্মানিরই আমদানি কাউন্টার প্রেসিংয়ে এল প্রথম গোল। বাঁ-দিক থেকে যখন শট নিচ্ছে তখন অলরেডি মাঝে প্লেয়ার ঢুকে গেছে। গোলের সামনে একটা সেন্টার ব্যাক ছাড়া কেউ নেই তখন। দ্বিতীয় গোলটায় টাইট অ্যাঙ্গেল থেকে শট। জার্মানির নিউমেরিক্যাল সূপ্রিমেসি ঘেঁটে ঘ!

ব্যক্তিগত মত, ১-০ অবস্থায় গুন্দোগানের মত বক্স মিডকে তুলে অপেক্ষাকৃত স্লো এবং ডিফেন্সিভ ব্লকার গোরেৎজকাকে নামানো চরম ভুল ফ্লিকের। রিজার্ভ বেঞ্চ যে তৈরি নেই বোঝা গেল। দ্বিতীয়, জামাল মূসিয়ালাকে তুলে আনফিট গটজেকে নামানো। গোল পাওয়ার তাগিদে গটজেকে নামানো হলেও পুরো আনফিট একটা প্লেয়ারকে ব্লকেজে ফেলতে খুব বেশি খাটতে হল না জাপান ডিপ ডিফেন্সকে। ফলে মাঝখান থেকে কিমিখের চ্যানেলটা পুরোপুরি গেল বন্ধ হয়ে!

জাপান এশিয়ার বেস্ট টিম। কাগজে-কলমে নয়, অন দ্য ফিল্ড জাপানের স্ট্রেন্থ যে কোনও ইউরোপীয়ান টিমকে পাল্লা দেওয়ার জন্য কাফি। এই ম্যাচের পর তো আরও বেশি করে মালুম হবে এটা। জার্মানি আর স্পেনের সাথে একই গ্রুপে বিরাজমান জাপান এই গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নেক্সট রাউন্ডে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। আসলে এটা একদিনের ফসল নয়।

দিনের পর দিন জে-লিগের মত একটা ধারাবাহিক জিনিসকে চালিয়ে প্লেয়ার সেখান থেকে তৈরি করে নিতে পেরেছে জাপান। ইউরোপ থেকে নামজাদা প্লেয়াররা এখন জাপানে খেলতে গেছে। জাপানের কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে ইউরোপ ডাকছে তাদের। শুধু কি জাপান? সাউথ কোরিয়া নিজেদের ফুটবল লিগকে উত্তরোত্তর শক্তিশালী করার দিকে ভালই এগোচ্ছে। এর আগেও আমরা শিনজি কাগওয়া, পার্ক জি সুংদের দেখেছি। দেখছি সন হিউন মিনকে, মিনামিনোকে। এটা অনেকদিনের একনিষ্ঠ সাধনার ফল হিসেবে এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। হতেই হত, যে লেভেল অফ ইনফ্রাস্ট্রাকচার তাতে করে না হলেই বরং অবাক হওয়ার ছিল।

তাই ম্যাচে জাপানের তৈরি ইতিহাস বেশিরভাগের কাছে হতবাকের সিচুয়েশন তৈরি করলেও, এই সিস্টেমের একত্র টিম গত সাড়ে চার বছরের। বেশিরভাগ প্লেয়ার পাওয়ার প্রেসিং সিস্টেমে জার্মান লিগ বুন্দেশলিগাতে লাস্ট চার বছর ধরে খেলছে। জার্মানিরই প্রেসিংয়ে জার্মানিকে হারিয়েছে। ইতিহাস তো বটেই!

কুডোস সূর্যের দেশ, ইলেক্ট্রনিকসের দেশ।হ্যাঁটা হতে হতে কখন যে নিজেকে বড় মঞ্চের জন্য চুপিসারে তৈরি করে ফেলেছে কেউ টেরটাও পায়নি।

দুনিয়ায় সবার দিন আসে। জেদ, অধ্যবসায় দরকার। জাপানের সেটা বরাবর ছিল, আছে, থাকবেও। যারা হিরোশিমা-নাগাসাকির মত ট্র্যাজেডি থেকে ১০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সারভাইভ করে নেয়, তারা যে একদিন চার বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়ে দেবেই এতে আর আশ্চর্য কি! কী বলেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link