More

Social Media

Light
Dark

দুর্ভাগ্যের শিকার নাকি অন্যায্য বিবেচনা!

না, ভারতের অমল মুজুমদারের মত দুর্ভাগা তাঁকে বলা যাবে না। অমল একেবারে সুযোগই পাননি। তিনি তাও পেয়েছিলেন। পারফর্মও করেছিলেন, সব ফরম্যাটেই। কিন্তু, থিতু হতে পারেননি। হবেনই বা কি করে! অস্ট্রেলিয়া দলে তখন কিংবদন্তিদের মেলা।

হয়তো বলবেন, এ আর নতুন কি! প্রতিটা দেশেই তো এমন দুর্ভাগা থাকে। এটা তো পার্ট অব লাইফ। কথাটা ভুল নয়। আবার একই সাথে এটাও ঠিক যে – দুর্ভাগ্যের যন্ত্রনাটা ব্র্র্যাড হজের চেয়ে বেশি সম্ভবত আর কাউকে সইতে হয়নি।

পুরো নাম ব্র্যাডলি জন হজ। জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সম্ভবত তিনি নিজের প্রজন্মের সবচেয়ে অভাগা ব্যাটসম্যান। তুখোড় এক প্রথম শ্রেণির ব্যাটসম্যান নিজেকে কালক্রমে একজন মাস্টার ব্লাস্টার টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানে রূপান্তরিত করেছেন – তবে কখনোই সেটাকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা যথেষ্ট বলে মনে করেননি।

ads

অন্য যেকোনো দেশে জন্মালে হয়তো দিব্যি শ’খানেক টেস্ট খেলে ফেলতেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম বলে ব্র্যাড হজের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি। ক্যারিয়ারজুড়ে তাঁকে রিকি পন্টিং, ডেমিয়েন মার্টিন, মাইকেল ক্লার্ক, মাইকেল হাসি বা অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসদের সাথে জায়গা নিয়ে লড়াই করতে হয়েছে।

২২৩ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে প্রায় ৪৯ গড় নিয়ে ১৭ হাজারের ওপর রান করেন, সেঞ্চুরি ৫১ টি। টেস্টের অভিষেকে করেন ৬০ রান। তিন ম্যাচ বাদে করেন ২০৩ রান, পার্থে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই ম্যাচে তাঁকে সামলাতে হয় শন পোলক, মাখায়া এনটিনি, চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট কিংবা আন্দ্রে নেলদের।

কিন্তু, দুই টেস্ট বাদেই বাদ পড়েন। আরো দুই বছরের অপেক্ষা। যখন ফিরে অবশেষে খেলার সুযোগ পান, তখন দুই ইনিংসে করেন যথাক্রমে ৬৭ ও ২৭। ব্যাস, এখানেই শেষ। ছয় টেস্টে ৫৬ ছুঁইছুঁই গড়ে ৫০০’র ওপর রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয় হজের।

অথচ, এই সময়ে তিনি ভিক্টোরিয়ার হয়ে শেফিল্ড শিল্ডে রানের পর রান করে গেছেন। তুখোড় ফিল্ডার ছিলেন, চেঞ্জ বোলার হিসেবেও ছিলেন দারুণ। কিন্তু, এত কিছুর পরও নির্বাচকদের বা টিম ম্যানেজমেন্টের মন গলাতে পারেননি তিনি। আসলে তিনি কি দুর্ভাগ্যের শিকার, নাকি তাঁকে নিয়ে জাজমেন্টটাই ভুল ছিল ম্যানেজমেন্টের?

কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, ড্রেসিং রুমের ডিসিশন মেকিং ইউনিটের সাথে কখনোই নাকি সখ্যতা গড়ে তুলতে পারেননি হজ। ফলে, তিনি সব সময়ই ছিলেন ‘সেকেন্ড অপশন’। আবার অন্য যাকেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাঁরা বাজিমাৎ করেছেন।

যেমন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র ৩৭ গড় নিয়ে এসেও মাইকেল ক্লার্ক ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ১৫১ করে ফেলেন। পরে তাঁকে ভবিষ্যতের কাণ্ডারি ভেবেই এগোয় অস্ট্রেলিয়া। কিংবদন্তি হয়ে ক্যারিয়ার শেষ করা ক্লার্ক অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপও এনে দেন।

কিংবা, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। ২০০৬ সালের বক্সিং ডে টেস্টের সেই সেঞ্চুরি দিয়ে সব হিসাব ওলট-পালট করে দেন। কিংবা ‘মিস্টার ক্রিকেট’ খ্যাত মাইকেল হাসির অবেলায় উত্থান – এই সব কিছুই হজের ক্যারিয়ারকে সংক্ষিপ্ত করতে প্রভাবকের ভূমিকা নিয়েছিল।

এবার আসি ওয়ানডের প্রসঙ্গে। ২০০৬-০৭ মৌসুমে তিনি ওয়ানডে দলে সুযোগ পান রিকি পন্টিং বিশ্রামে গেলে। ৯৭ ও ৯৯ রানের দু’টি অপরাজিত ইনিংস তাঁকে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ করে দেয়। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮৯ বলে ১২৩ রান করেন। তবে, সেটাই বিশ্বকাপে তাঁর শেষ ম্যাচ। ফাইনাল-সহ পরের তিনটা ম্যাচ তিনি ড্রেসিংরুম থেকেই দেখেন। হজের ক্যারিয়ারের খুবই পরিচিত একটা দৃশ্য।

যদিও, আধুনিক টি-টোয়েন্টির যুগে এসে তার গ্রহনযোগ্যতা বিশ্বজুড়েই একটু বাড়ে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেগুলোতে হট-কেক ছিলেন ক্যারিয়ারের শেষ দিন অবধি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স, কোচি টাস্কার্স কেরালা ও র‌াজস্থান রয়্যালসের হয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় ভিক্টোরিয়া, মেলবোর্ন রেনেগেডজ, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স ও মেলবোর্ন স্টার্স দলে খেলেছেন।

নিউজিল্যান্ডে নর্দান ডিস্ট্রিক্ট, অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন, ইংল্যান্ডে খেলেছেন ল্যাঙ্কাশায়ার ও লিস্টারশায়ারের হয়ে। এটা বাদে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বরিশাল বার্নার্স, অধুনা বিলুপ্ত শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে (এসএলপিএল) বাসনিহারা ক্রিকেট ডান্ডি’র হয়ে খেলেছেন। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) ২০১৪ সালে খেলার কথা থাকলেও ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি।

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২৭৭ ম্যাচে প্রায় সাড়ে সাত হাজারের মত রান আছে হজের। করেছেন ৪৮ টি হাফ সেঞ্চুরি। যখন অবসরে যান, তখন এই ফরম্যাটে তাঁর চেয়ে বেশি ছিল কেবল ক্যারিবিয়ান দানব ক্রিস গেইলের। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা ওই সময় এতটাই ছিল যে, অস্ট্রেলিয়াও তাঁকে জাতীয় দলে জায়গা দিতে বাধ্য হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেন।

অথচ, কৈশোরে ব্র্যাড হজের আদর্শ ছিলেন ডেনিস লিলি। হতে চাইতেন ফাস্ট বোলার। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বপ্নে এসেছে পরিবর্তন। তবে, এটা ঠিক যে অস্ট্রেলিয়ার ওই সময়কার যে দল ফাস্ট বোলার হলেও দলে জায়গাটা নিশ্চিত হত কি না – বলা মুশকিল!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link