More

Social Media

Light
Dark

ট্রাভিস হেড, হেক্সাজয়ের রাজকীয় চরিত্র

নীল জনস্রোতে ভেসে ওঠা স্টেডিয়াম। আনন্দমুখর সেই জনতার সাথে আবার ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’ কোরাস। ‘ফাইনাল’ জেতার পূর্বাভাস যেন পেয়েই গিয়েছিল ভারতের সমর্থকরা। তাই আগাম উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল ম্যাচ শুরুর আগেই।

কিন্তু ম্যাচ যতদূর গড়িয়েছে, আহমেদাবাদে যেন নেমে এসেছিল শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ভারতীয় সমর্থকদের নীরব দর্শক বানিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। আর অজি শ্রেষ্ঠত্বের হেক্সাজয়ের সে গল্পে নায়ক হয়ে রইলেন ট্রাভিস হেড।

প্রথমে ব্যাট করে ভারতের স্কোরবোর্ডে জমা মাত্র ২৪০ রান। ম্যাচের মাঝ বিরতিতেই তাই জয়ের একটা সুবাস পেয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে ঘরের মাঠ বলে কথা। ভারতীয় পেসারদের তোপে শুরুতেই ছত্রখান অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ৪৭ রানের মাঝেই নেই ৩ উইকেট।

ads

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ের পথে অনিশ্চয়তা শুরু তখন থেকেই। তবে শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে ট্রাভিস হেড এরপরে যে পথে হাটলেন, তাতে আর বাঁধা হতে পারলো না কেউ। ম্যাচ পরিস্থিতিতে স্ট্রাইক  রোটেশন, মোক্ষম সময়ে পাল্টা আক্রমণ, উইকেট আগলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বলতে গেলে একাই জেতালেন ট্রাভিস হেড।

অবশ্য এ দিন ট্রাভিস হেডকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছিলেন মার্নাস লাবুশানে। শুরু থেকেই সতর্ক ব্যাটিং করেছেন তিনি। আর তাঁর যোগ্য সঙ্গ পেয়েই সাবলীল ব্যাটিং করে গেছেন ট্রাভিস হেড। কুলদ্বীপ যাদব আর জাদেজা উইকেট থেকে টার্ন আদায় করে নিচ্ছিলেন ঠিকই। তবে সেই কুলদ্বীপকে স্লটে পেয়েই ছক্কা হাঁকিয়ে খোলস ছেড়ে বের অজি এ ব্যাটার।

ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের শুরু সেখান থেকেই। দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর অস্ট্রেলিয়াকে ধাতস্থ করে আনতে শুরু করেন হেড ও লাবুশানে। এক প্রান্তে লাবুশানে উইকেট ধরে রাখার দিকেই মনযোগী ছিলেন। আর অন্য দিকে আক্রমণাত্বক এপ্রোচে ব্যাটিং করতে থাকেন হেড। আর তাতেই সাময়িক বিপর্যয় কাটিয়ে ম্যাচ জয়ের দিকে এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

সেমিফাইনালে ফিফটি পেয়েছিলেন ট্রাভিস হেড। সেই ধারা এবার যেন থাকলো ফাইনালের মঞ্চেও। ৫৮ বলেই ৫০-এ পৌঁছে যান অজি এই ব্যাটার। তবে ফিফটি নয়, শতকের ছোঁয়াও পেয়ে যান হেড। ৯৯ বলে ১০০ রান পূরণ করেন এ ব্যাটার। আর এই সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আবারো কোনো ফাইনালে সেঞ্চুরির সাক্ষী হলো বিশ্ব ক্রিকেট।

তবে ট্রাভিস হেড এই সেঞ্চুরিতে পৌঁছে গেলেন দুটি কীর্তিতে। অরবিন্দ ডি সিলভার পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে রান তাড়ায় সেঞ্চুরি করলেন ট্রাভিস হেড। ১২০ বলে ১৩৭ রানের ইনিংসে ছাপিয়ে গেলেন ডি সিলভাকে। এটিই এখন ফাইনালের মঞ্চে রান তাড়ায় সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড।

গল্পের রদবদল বুঝি একেই বলে। চোটে পড়ে বিশ্বকাপের প্রথম অংশে ছিলেনই না হেড। অস্ট্রেলিয়া কার্যত ভারতে এসেছিল ১৪ জন খেলোয়াড় নিয়ে। তবে অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান ঠিকই রেখেছেন এ ব্যাটার।

বিশ্বকাপে নেমে প্রথম ম্যাচেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। এরপর সেমিফাইনালে হয়েছেন ম্যাচসেরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ফাইনালেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠলো তাঁর হাতে। সেমির পর ফাইনালে ম্যাচ সেরা। অস্ট্রেলিয়ার হেক্সাজয়ের গল্পে অনবদ্য এক চরিত্র বনেই গেলেন ট্রাভিস হেড।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link