More

Social Media

Light
Dark

ক্রিকেট স্কিলেও তিনি দুর্দান্ত

একটা ছোট্ট তথ্য দিয়ে শুরু করি। রাকিম কর্নওয়াল অভিষেক টেস্টে ৬৪ ওভার বোলিং করেছেন। ভুল পড়ছেন না, ৬৪ ওভারই। দ্বিতীয় টেস্টে করেছেন ৪৩ ওভার। তৃতীয় টেস্টে ৪৬ ওভার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৫ ম্যাচে গড়ে প্রতি ম্যাচে ৪০ ওভারের বেশি বোলিং করে আসছেন। উইকেট ৩১০টি।

রাকিমকে নিয়ে বাড়তি আগ্রহ, কৌতূহল, বিস্ময়, আলোচনা, সবই স্বাভাবিক। ১৪০ কেজি ওজনের একজন পেশাদার অ্যাথলেট, ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ওজনের ক্রিকেটার – তুমুল আলোচনা না হওয়ার কারণ নেই।

টিমমেটরা পর্যন্ত তাকে ডাকেন ‘জিম্বো’ বলে। ‘বিগ জিম’, ‘মাউন্টেন’, ‘বিগ ম্যান’ নামেও ডাকেন কেউ কেউ।
রাকিমের আগে সবচেয়ে বেশি ওজনের ক্রিকেটার ছিলেন যিনি, সেই ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংকে (১৩৩, মতান্তরে ১৩৯ কেজি) ডাকা হতো ‘বিগ শিপ’ নামে।

ads

আমাদের দেশের ক্রিকেট অনুসারীদেরও আলোচনার কমতি নেই রাকিমকে নিয়ে। তবে সমস্যা হলো ‘ইন্টেনশন’ নিয়ে। সমস্যা আমাদের অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য, মনোভাব নিয়ে।

টিমমেটদের বা কাছের মানুষদের আদুরে কিংবা ভালোবাসার ‘মাউন্টেন’ আর আমাদের অনেকের পাহাড়-পবর্ত-দৈত্য-দানব ডাকার পার্থক্যটা সেখানেই। আমরা ভালো করেই জানি, আমরা কোন অভিপ্রায় বা মানসিকতা থেকে তাকে এসব নামে ডাকছি বা এভাবে উপস্থাপন করছি!

আলোচনা-কৌতৃহল এক ব্যাপার, আর বাড়াবাড়ি কিংবা সীমা ছাড়ানো আরেক ব্যাপার। অবশ্য কোথায় থামতে হয়, কতদূর টানতে হয়, এসবে তো আমাদের বরাবরই অরুচি। ট্রল আর ব্যক্তিগত আক্রমণকে আমরা এক করে ফেলি হেসেখেলে, বডি শেমিংয়ের ফাইনার পয়েন্টস অনুধাবনের আশা করাই নির্বোধের মতো ভাবনা।

আমি অবাক হয়েছি দুটি ব্যাপার দেখে। প্রথমত, তার ফিটনেস নিয়ে অনেকের ধারণা। ফেইসুবক জনতা তো বটেই, আমাদের অনেক সংবাদকর্মীও তার ফিটনেস নিয়ে হাসি-তামাশা করছেন। অথচ এটা একদমই বেসিক ব্যাপার যে ক্রিকেটের ফিটনেস অন্য আর দশটা খেলার চেয়ে আলাদা কিছু। ক্রিকেটে ফিটনেস মানেই শুধু ছুটোছুটি, লাফালাফি, পেটা শরীর নয়। এখানে বিপ টেস্ট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ মাঠের ফিটনেস। বোলিং ফিটনেস, ব্যাটিং ফিটনেস, ফিল্ডিং ফিটনেস, সবই আলাদা।

আমাদের আব্দুর রাজ্জাক, বিপ টেস্টে কখনোই খুব ভালো ছিলেন না। কিন্তু মাঠে নেমে বছরের পর বছর দিন্রতি ৩০-৩৫ ওভার বোলিং করেছেন। তার বোলিং ফিটনেস সেরকমই, বাংলাদেশে আর কেউ এরকম পারেনি, পারে না। আমাদের সাকিব আল হাসান কখনোই বিপ টেস্টে সেরাদের কাতারে ছিলেন না। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হওয়ায়, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হওয়ায় সমস্যা হয়নি।

রাকিমের বোলিং ফিটনেস যে অসাধাারণ, সেটার তথ্য শুরুতেই দিয়েছি। ৩ টেস্টে গড়ে ৫১ ওভার করে বোলিং করেছেন। এটা শুধু এখন নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে খেলার আগে থেকেই তিনি দিনে ৩০-৪০ ওভার বোলিং নিয়মিত করে আসছেন।
২০১৬ সালে জ্যামাইকায় একটি প্রস্তুতি ম্যাচে বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানে, চেতশ্বর পুজারাদের আউট করেছিলেন। পরে টেস্টের আগে কোহলি খবর পাঠিয়ে তাঁকে ডেকে আনেন প্র্যাকটিসের জন্য। নেটে তিনি টানা কয়েক ঘণ্টা বোলিং করেন কোহলিকে।

স্লিপে রাকিম দুর্দান্ত ফিল্ডার। গালি, শর্ট কাভার, শর্ট মিড উইকেটেও ভালো। তাঁর জন্য ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি স্পেশাল টিম আছে, যেখানে নিউট্রিশনিস্ট, স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ আছেন। কাজেই ফিটনেস তিনি হেলাফেলা করেন না।

দ্বিতীয় যেটি অবাক হয়েছি, তাঁর ওজন নিয়ে আলোচনার সিকি ভাগও নেই তাঁর স্কিল নিয়ে। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা তার বোলিংয়ের জন্য বড় আশীর্বাদ, যে কোনো উইকেটেই বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিতে পারেন। চট্টগ্রামে তিন দিনের যে প্রস্তুতি ম্যাচটি হলো, সেখানে ধীরগতির উইকেটেও দারুণ শার্প টার্ন পেয়েছেন তিনি। এমন মন্থর উইকেটেও এতটা শার্প টার্ন করাতে পারলে, বিশেষ এক ক্ষমতা সেটা। বাংলাদেশের জন্যও হুমকি হতে পারেন এই সিরিজে। আর একই জায়গায় টানা বোলিং করে যাওয়ার স্কিল তো তার আছেই।

বোলিংয়ের কারণে তার ব্যাটিং অনেক সময় আড়ালে পড়ে পায়। কিন্তু নিজেকে তিনি অলরাউন্ডারই মনে করেন, পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে চান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি আছে, সিপিএলে বিধ্বংসী কিছু ইনিংস আছে, ব্যাটিং ওপেনও করেছেন।

সব মিলিয়ে রাকিম মানে শুধু ১৪০ কেজির শরীরই নয়, ক্রিকেটীয় স্কিলের দারুণ এক প্যাকেজও – একসময় তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। পরে কিপিং চেষ্টা করেছেন। স্পিন শুরু করেছেন। ক্রিকেট ছেড়ে কিছুদিন ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেছেন। আবার ক্রিকেটের আঙিনায় ফিরে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে আজকের পর্যায়ে এসেছেন। দমে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।

তার পরও যারা তার শরীর নিয়েই পড়ে থাকবেন, তাঁদের জন্য কথা রাকিম আগেই বলে রেখেছেন একটি ইন্টারভিউয়ে, ‘লোকের কথা নিয়ে আমি গবেষণা করি না। আমি জানি আমি কী করতে পারি ও আমার কী করা উচিত। আমার মনোযোগ শুধু এদিকেই থাকে, বাকি কিছু পাত্তা দেই না।’

 

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link