More

Social Media

Light
Dark

যে কৌশলে বাটলারকে পরাস্ত করলেন হাসান মাহমুদ

মিরপুরে ম্যাচ শুরুর আগে ইংলিশ ধারাভাষ্যকর ডমিনিক কর্ক একটা কথা বারবার বলছিলেন, ‘এই ধরনের উইকেটে বল জোরের উপর পিচ করাতে হবে। তবেই পেসাররা সফল হবে।’ সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটারের এমন টোটকাতেই বোধহয় বাংলাদেশি পেসাররা একটা তৎক্ষণাৎ দীক্ষা পেয়ে গিয়েছিল। না হলে যে মুস্তাফিজের প্রধান অস্ত্র কাটার, সেই মুস্তাফিজই বা কেন নতুন বলে পেসের উপর নজর দিবেন!

সে যাই হোক, মিরপুরের এই ম্যাচে ম্যাচ জেতার পথে প্রথম কাজটা সেরেছিলেন পেসাররাই। শুরুটা হয়েছিল পেসার তাসকিনের বুদ্ধিদীপ্ত এক বোলিংয়ে। ডেভিড মালান বারবার ফোর্থ স্ট্যাম্প বরাবর বলগুলো ক্রসে খেলতে চাচ্ছিলেন। তাসকিনও ঠিক ঐ ফাঁদেই মালানকে ফেলেছিলেন। যখন দেখছেন মালান বারবার পুল বা স্কোয়ার লেগে শট খেলতে চাচ্ছেন ঠিক তখনই তাসকিন পরের ডেলিভারিটি একই লেন্থে বল করেছেন। আর তাসকিনের সেই ফাঁদ পাতা কৌশলেই ধরা দেন মালান। ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে টপসাইড এজ হয়ে ঠিক হাসান মাহমুদের কাছে ক্যাচ।

হাসান মাহমুদের কথা যখন আসলো তখন নিশ্চয়ই জশ বাটলারকে করা এক ইয়র্কারে বোল্ডের ছবিটা ভেসে উঠছে? কোনো রকম দ্বিধাহীন ভাবেই বলা যায়, ম্যাচের সেরা ডেলিভারিটি ছিল হাসান মাহমুদের করা ঐ ইয়র্কার বলটি। তর্ক-সাপেক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা ইয়র্কার ডেলিভারির স্বীকৃতিও হয়তো দেয়া যেতে পারে।

ads

কী এমন বিশেষত্ব ছিল সেই বলটিতে? মজার ব্যাপার হল, এখানেও মনস্তাত্ত্বিক খেলায় পরাস্ত হয়েছেন এই ইংলিশ ব্যাটার। হাসান মাহমুদ এখানে দারুণ একটি বোলিং সেন্স কাজে লাগিয়েছেন। হাসান মাহমুদের ঐ ওভারটি যদি আবারো ফ্ল্যাশব্যাকে আনা যায় তাহলে দেখা যাবে, ঐ ওভারের প্রথম পাঁচটি বলই তিনি ব্যাক অফ দ্য লেন্থ কিংবা শর্টার লেন্থে করেছেন।

আর সেই ওভারের ৬ ওভারের ৪ টি বলই খেলেছিলেন বাটলার। এখন প্রত্যেকটি বল শর্টার লেন্থে হওয়ার বাটলার পুল শট খেলার চেষ্টা করেছেন। এমন কি ওভারের পঞ্চম বলটাতে তিনি স্কুপও খেলতে গিয়েছিলেন। এখানে বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাপারটা হচ্ছে, বাটলার হাসানের বোলিং লেন্থটাতে ততক্ষণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অর্থাৎ হাসান মাহমুদ টানা এক লেন্থে বল করায় বাটলারও পাল্টা অ্যাটাক করার জন্য বারবার প্রথম স্ট্যাম্প বরাবর স্ট্যান্স নিয়ে শট খেলতে চাচ্ছিলেন। তাঁর ভাবনাতেও ছিল না, আচমকা কোনো একটা বল ইয়র্কার লেন্থে আসতে পারে।

হাসান মাহমুদ ঠিক এখানেই ফায়দাটা নিয়েছেন। যখনই দেখছেন তাঁর প্রতিটা বলই বাটলার দুই পা সামনে এনে পুল করার চেষ্টা করছেন, তখনই একটি ইয়র্কার দিয়েছেন। অর্থাৎ বাটলারকে একই বল খেলিয়ে প্রস্তুত করে হঠাতই ইয়র্কার ছুঁড়েছেন। যেহেতু বাটলার পুল করার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এজন্য তিনি ঐ সময়ে অমন একটা বল খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই কোনো রকম প্রতিরোধ গড়ারই সুযোগ পাননি। দারুণ এক ইয়র্কারে সজোরে স্ট্যাম্পে গিয়ে বলের আঘাত। জশ বাটলার বোল্ড।

অবশ্য অমন ইয়র্কারে বাটলারের দর্শক বনে যাওয়া ছাড়া উপায়ও ছিল না। আগের ম্যাচেও এই হাসান মাহমুদের বলেই আউট হয়ে ফিরেছেন বাটলার। টানা দুই ম্যাচে হাসান মাহমুদের শিকার, স্বাভাবিক ভাবেই এখন পর্যন্ত পেসার হাসান মাহমুদ, বাটলারের জন্য কোনো সুখকর অভিজ্ঞতা না।

বাটলারের জন্য সুখকর না হলেও কিছুটা সুখানুভূতি আসতেই পারে বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিটে। বেশ ক’বছর ধরেই বাংলাদেশের পেসাররা দারুণ ছন্দে রয়েছে। দলের মধ্যে পেসারদের সুস্থ প্রতিযোগিতাটাও দেখা যাচ্ছে বেশ। শেষ ওয়ানডেতে দুর্দান্ত বল করা এবাদত হোসেন এখন পর্যন্ত দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একটিতেও একাদশে জায়গা পাননি।

অর্থাৎ এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে পেসারদের মধ্যে অপশন অনেক। এটাই পেসারদের উন্নতির একটা বার্তা দেয়। বেঞ্চ গরম করার জন্য এর আগে শেষ কবেই বা কোনো ফর্মে থাকা পেসারকে দেখা গিয়েছে। পেসাররা তাই এক ধরনের দিন বদলের গানই রচনা করে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। এই ধারা অব্যাহত থাকুক।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link