More

Social Media

Light
Dark

বাবার স্বপ্নের দুই ভাই

স্বপ্নটা দেখেছিলেন একজন বাবা।

দুই ছেলেকে নিয়ে দেখা স্বপ্নপূরণ করতে নিজের জীবিকা-জীবন বাজি ধরেছিলেন। স্বপ্ন ছিলো, ছেলে দুটো একসাথে ভারতের জার্সি গায়ে খেলবে। জীবদ্দশায় সেই ঘটনাটা দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু স্বপ্নটার জোর ছিলো। অবশেষে কান্নায় ভিজে সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন হার্দিক ও ক্রুনাল পান্ডিয়া।

প্রথমে হার্দিক পান্ডিয়া তারপর ক্রুনাল পান্ডিয়া, ছোট ভাইর পর জাতীয় দলে অভিষেক হলো বড় ভাইয়ের।

ads

ইরফান পাঠান ও ইউসুফ পাঠানের পর ভারতের হয়ে দ্বিতীয়বার একসাথে দুই ভাই জাতীয় দলে খেললো। এমন গৌরবের দিনে অশ্রুসিক্ত হলেন দুই ভাই! অভিষেকের দিনেই রেকর্ড গড়লেন ব্যাট হাতে। বড় ভাই ক্রুনালের অভিষেকের রেকর্ড ফিফটিতে ড্রেসিং রুম থেকে ছোট ভাই হার্দিকের চোখে আনন্দের অশ্রু, কি যেনো একটা নেই তাঁদের মাঝে! কি যেনো একটার অভাব!

হ্যাঁ, হিমাংশু পান্ডিয়া – এই মানুষটাকেই দুই ভাই সবচেয়ে বেশি মিস করেছেন। আজকের হার্দিক-ক্রুনাল জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন তার শুধুমাত্র এই মানুষটিরই অবদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু দুই ছেলের এই খুশির দিনটা দেখে যেতে পারলেন না হিমাংশু!

চলমান সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জাতীয় দলে অভিষেক হয় ক্রুনাল পান্ডিয়ার। ইরফান ও ইউসুফ পাঠানের পর দ্বিতীয় বার ভারতের হয়ে দুই ভাই জাতীয় দলের হয়ে খেলার গৌরব অর্জন করেন। নিজের অভিষেক ওয়ানডেতেই খেললেন রেকর্ড গড়া ইনিংস।

৩১ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৫৮ রানের ইনিংসের পথে অভিষেকে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন ক্রুনাল। এর আগের রেকর্ডটি ছিলো নিউজিল্যান্ডের জন মরিসের, যিনি অভিষেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৫ বলে ফিফটির রেকর্ড গড়েন। তাকে টপকেই গতকাল নতুন রেকর্ডের মালিক হয়েছেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। এছাড়াও অভিষেকে ৫০ এর বেশি রান করা খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট এখন ক্রুনালের।

১৮৭.০৯ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেন ক্রুনাল। তার উপরে রয়েছে পাকিস্তানি কিংবদন্তি শহীদ আফ্রিদি। যিনি অভিষেকে ৪০ বলে শতক গড়ার রেকর্ড করেন। সেই ম্যাচে তিনি ২৫৫ স্ট্রাইক রেটে খেলেছিলেন, যা অভিষেকে এখন পর্যন্ত সেরা স্ট্রাইক রেট। জন মরিসকে টপকে অভিষেকে দ্বিতীয় সেরা স্ট্রাইক রেট এখন জন মরিসের।

ক্রুনাল পান্ডিয়া – যাকে সবাই জানে অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার বড় ভাই হিসেবেই। দুই ভাই জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবার একসাথে মাঠে নামেন। ছোট ভাইয়েএ কাছ থেকে অভিষেক ক্যাপ নেওয়ার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে স্বরণ করেন ক্রুনাল। তারপর হঠাৎই হার্দিককে জড়িয়ে কেদে উঠেন ক্রুনাল! যেই বাবা তার জীবনের সবটা বিসর্জন দিয়েছিলেন দুই ছেলেকে ক্রিকেটার বানাবেন বলে, সেই দুই ছেলের একসাথে জাতীয় দলে খেলছে সেটা দেখতে পেলেন না তাদের বাবা হিমাংশু পান্ডিয়া। যিনি গত জানুয়ারিতে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।

গুজরাটের একটি গাড়ির ছোট ব্যবসা করতেন হিমাংশু। ক্রিকেটের প্রতি তার বেশ ঝোঁক ছিলো। তাই ছোট থেকেই তার দুই ছেলে হার্দিক ও ক্রুনাল পান্ডিয়াকে ক্রিকেটার বানাতে চেয়েছিলেন হিমাংশু পান্ডিয়া৷ হার্দিকের বয়স যখন মাত্র ৫ বছর তখনি দুই ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে চলে আসেন বরোদায়। আর্থিক সমস্যায় তার পরিবারকে বেশ কিছু সময় হিমশিম খেতে হয়েছিলো।

বরোদায় এসেই দুই ছেলেকেই একসাথে ভর্তি করে দেন সাবেক ক্রিকেটার কিরণ মোরের একাডেমিতে। দিনরাত পরিশ্রম করেন ছেলেদেরকে ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে। ব্যাট কেনার মতো সামর্থ্য না থাকায় অন্যর ব্যাট ধার করে খেলতেন দুই ভাই। বরোদায় থাকলে ক্রিকেটার হতে বেশ সময় লাগবে দেখে আরোও উন্নত কোচিংয়ে ভর্তি করতে সেখান থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে মুম্বাইতে চলে আসেন হিমাংশু। এখান থেকে প্রতিভা দেখিয়া ক্রিকেটে পথা চলা হার্দিকের।

বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট ও ক্লাবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এর পর সুযোগ পেয়ে যান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। এরপর সেখান থেকেই সরাসরি জাতীয় দলের সুযোগ পান তিনি। এরপরের পথটা সবারই জানা। তবে বয়স ভিত্তিক দলে একবার আচরণজনিত কারণে বাদ পড়ে গিয়েছিলেন হার্দিক। বড় ভাই ক্রুনালের তুলনায় অনেকটা ধীরে ছিলেন হার্দিক, তবুও পাওয়ার হিটিং এবিলিটি আর একা হাতে বেশ কিছু ম্যাচ জয়ের রেকর্ড তাকে টেনে নিয়েছিলো আইপিএলে।

তবে অলরাউন্ডার হওয়া সত্ত্বেও শুরুর দিকে পারফরম্যান্স খুব ভালো করতে না পারায় বেশ পিছিয়ে পড়েছিলেন ক্রুনাল।

এরপর আইপিএলে মুম্বাইর হয়ে দূর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, রঞ্জি ট্রফির পর ভিজয় হাজারে ট্রফিতে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স দিয়ে শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন ক্রুনাল। তার বাবার স্বপ্ন ছিলো দুই ছেলেকে একসাথে খেলতে দেখবেন তিনি। কিন্তু জানুয়ারির ১৬ তারিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান হিমাংশু পান্ডিয়া। যিনি নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে দুই ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন দুই ছেলেকে একসাথে জাতীয় দলে খেলতে দেখার। সেটি না দেখেই পরপারে পাড়ি জমান তিনি।

তাদের বাবা হিমাংশু পান্ডিয়ার গাড়ির প্রতি বেশ শখ ছিলো! তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম শতক করার পর তার বাবাকে একটি গাড়ি উপহার দেয় হার্দিক পান্ডিয়া। বাবার কষ্টের কথা কখনোই ভুলেননি দুই ভাই। আর কাল অভিষেকের ম্যাচ বাবার কথা মনে পড়ায় ছোট ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন ক্রুনাল। দুই ভাই ই ছিলেন অশ্রুসিক্ত! অভিষেকে রেকর্ড ফিফটি করে আকাশপানে তাকিয়ে বাবার প্রতি সেটি উৎসর্গ করলেন ক্রুনাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link