More

Social Media

Light
Dark

হাল্যান্ড বনাম নুনেজ: নব দ্বৈরথে স্বাগতম

সর্বশেষ ডারউইন নুনেজ এবং আর্লিং হাল্যান্ড একে অপরের সাথে যখন মুখোমুখি হয়েছিলেন তারা নিতান্তই কিশোর ছিলেন। তারা হয়তো কল্পনাও করেননি যে আবার তারা যখন ফুটবল মাঠে নিজেদের মুখোমুখি হবেন সারা বিশ্বের চোখ তাদের উপরই নজর রাখবে।

২০১৯ সালের মে মাসে, লডজের স্টেডিয়ান মিজস্কি উইডজেওয়াতে অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপের একটি গ্রুপ ম্যাচে মাত্র ৫০০০ দর্শকের সামনে শেষ দেখা হয়েছিল প্রিমিয়ার লিগের নতুন দুই তারকার।

লিভারপুলের নতুন ৬৪ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা আক্রমণভাগের খেলোয়াড় নুনেজ এই ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছিলেন। ৩-১ ব্যবধানে পাওয়া জয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে তার ড্রিবলিং, ফার্স্ট টাচ ও গতিতে ফার্নান্দো টরেসের ছায়া দেখেছিলেন অনেকে।

ads

এই গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে ৫৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে যোগদান করেন হাল্যান্ড। ২০১৯ সালে হওয়া সেই ম্যাচ তার জন্য ছিল হতাশার। হেড থেকে পাওয়া তার একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল করে হয়। হতাশা ঝাড়তে পরবর্তীতে তিনি হন্ডুরাসের বিপক্ষে পাওয়া গোলবন্যার ম্যাচে ম্যাচে নয়টি গোল করেন। হাল্যান্ডের দল জিতে ১২-০ ব্যবধানে।

২০১৯ সালের অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপে নরওয়ের দ্রুত প্রস্থান সত্ত্বেও হাল্যান্ড গোল্ডেন বুট বিজয়ী হন। নুনেজের উরুগুয়ে শেষ ১৬ তে ইকুয়েডরের কাছে পরাজিত হয়েছিল যারা শেষ পর্যন্ত তৃতীয় স্থানে থেকে টুর্নামেন্টটি শেষ করে।

আক্রমণভাগের এই দুই খেলোয়াড় এবার লিস্টারে কিং পাওয়ার স্টেডিয়াম এফএ কমিউনিটি শিল্ডে মুখোমুখি হন। এই ম্যাচটিকে সাধারণত একটি মহিমান্বিত প্রাক-মৌসুম ছাড়া অন্য কিছু নয় বলেই মানা হয়। তবে প্রতিপক্ষ যখন লিভারপুল এবং সিটি অনেকেই তাই দুর্দান্ত একটি ম্যাচের আভাস পেয়েছিল।

নুনেজ এবং হাল্যান্ডের জন্যও এটা ছিল নিজেদেরকে তুলে ধরার সুযোগ। উভয়ই বড় নাম ডাক নিয়ে ইংল্যান্ডে এসেছেন, এবং এখন তারা মাঠে তা প্রমাণ করবেন সমর্থকরা তাই কামনা করে।

৩০ জুলাই হয়ে যাওয়া ম্যাচটি আসলেই অন্য সব কমিউনিটি শিল্ডে ম্যাচের থেকে আলাদা ছিল। লিভারপুল এবং সিটি দুর্দান্ত গতিশীল এক ম্যাচ উপহার দিয়েছে যেখানে অল রেডরা ৩-১ সিটিজেনদের হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছে।

কাকতালীয়ভাবে এই ম্যাচেও অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপের মত স্কোর লাইন ছিল ৩-১ এবং তা নুনেজের পক্ষে। একটি দুর্দান্ত হেডের মাধ্যমে ম্যাচের শেষ গোলটি করেন তিনি। এছাড়াও পেনাল্টিতে করা মোহাম্মদ সালাহর করা দ্বিতীয় গোলটিতেও তার অবদান রয়েছে, তার করা হেডে হাত লাগে সিটির রক্ষণের খেলোয়াড় রুবেন দিয়াজের এবং পেনাল্টির সিধান্ত দেওয়া হয়।

লিভারপুলের বিপক্ষে হয়ে যাওয়া কমিউনিটি শিল্ডের ম্যাচটিতেও পরাজয়ের দেখা পান হাল্যান্ড। বেশ কয়েকবার নিজের মুভমেন্ট দিয়ে অল রেডদের রক্ষণে সমস্যা তৈরি করেন তিনি তবে সিটি যেন এখনো একজন নাম্বার নাইন নিয়ে খেলতে অভ্যস্ত না তা তাদের খেলা দেখে মনে হয়েছে।

ফোডেনের শট আদ্রিয়ান ঠেকানর পর রিবাউন্ডে বল পেয়ে যান হাল্যান্ড, গোলরক্ষক এবং পোস্ট থেকে অল্প কিছু দূরে দাড়িয়ে তিনি যখন শট নেনে অনেকেই হয়তো গোল হবে ভেবেছিল কিন্তু তা গোলবারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। পুরো ম্যাচ জুড়ে এমন অনেক হতাশার চিত্র দেখা গেছে। তাই সাত আগস্টে ওয়েস্ট হ্যামের কপালও কি হন্ডুরাসের মত পুড়ে নাকি সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

প্রাক-মৌসুমের ম্যাচেই অবশ্য দুজনে গোলের দেখা পেয়ে গিয়েছিলেন। সিটির জার্সিতে প্রথমবার মাঠে নামার মাত্র ১২ মিনিটেই হাল্যান্ড তার প্রথম গোলের দেখা পান, গ্রিন বে-তে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল বায়ার্ন মিউনিখ এবং নুনেজ দর্শনীয় ফ্যাশনে তার গলখরা দূর করেন। আরবি লিপজিগকে ৫-০ গোলে হারান ম্যাচে তিনি লিভারপুলের হয়ে ৪টি গোল করেন।

সিটি এবং লিভারপুলের পরবর্তী বিবর্তনের জন্য যা দরকার ছিল হাল্যান্ড এবং নুনেজ ঠিক তাই। ইউর্গেন ক্লপ এবং পেপ গার্দিওলা তাদের পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপের জন্য এমন খেলোয়াড় খুজছিলেন। উভয় ম্যানেজারের জন্যই একজন বিশেষজ্ঞ নাম্বার নাইনকে দলে টানা নতুন কিছু, ভিন্ন কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে।

লিভারপুল এবং সিটি উভয়ই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রচলিত নাম্বার নাইন ছাড়া খেলেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে উভয়ই এই মৌসুমে নিজেদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। পরবর্তী সমাধানের সন্ধানে দলবদলের বাজারে তাঁরা ভাল পরিমান অর্থই ঢেলেছে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সাদিও মানে এবং রাহিম স্টার্লিংকে অনুমতি দিয়েছে দল ত্যাগ করার।

নুনেজ এবং হাল্যান্ড কত দ্রুত নিজেদের দলের সাথে মানিয়ে নিতে পারেন এবং কত দ্রুত তাদের সতীর্থরা তাদের নতুন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের খেলার ধরণের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয় তা এই মৌসুমের শিরোপার ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হবে।

ইউরোপে লিভারপুল এবং সিটির খেলার ধরণ সম্ভবত সবচেয়ে সুস্পষ্ট, সকলেই জানে তারা কি ভাবে খেলে তাই এই দুই খেলোয়াড় এক্ষেত্রে কোথায় এবং কীভাবে দলে ফিট হয় তা দেখতে অনেকেই আগ্রহী।

নতুন দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে থাকা মিল এবং অমিল সম্পর্কে এই সপ্তাহে ক্লপ বলেন যে সিটির এবং তাদের সমস্যা একই। তিনি আরও বলেন যে সিটি যেমন হাল্যান্ড এর পতিপক্ষের রক্ষণের পেছনে দৌড়নো তে অভ্যস্ত নয় তেমনি তারাও এখনো নুনেজের একই ধরণের দৌড়ে পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে পারেননি।

গার্দিওলাও তার দলের খেলার ধরণের বিবর্তন সম্পর্কে বলেন যে তারা যতটা সম্ভব বল বক্সে ক্রস করবেন। সিটিতে তিনি এমন একটি দল তৈরি করেছেন যেখানে স্টার্লিং বা ফিল ফোডেনের মতো খর্বাকৃতির ওয়াইড খেলোয়াড়দেরকেই দলের আক্রমণের কেন্দ্রে ফলস নাইন হিসেবে খেলানো হত।

গত মৌসুমে জ্যাক গ্রিলিশ মাঝেমধ্যে এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কেভিন ডি ব্রুইন, বার্নার্ডো সিলভা এবং এমনকি ইল্কাই গুন্ডোগান সকলেই ‘ফলস নাইন’ হিসেবে খেলেছেন।

এদিকে, ট্র্যাডিশনাল নাম্বার নাইনের ভূমিকায় সাধারণত খেল গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং এমনকি সার্জিও আগুয়েরো, যিনি সিটির সর্বকালের রেকর্ড গোলদাতা, তাদেরকে স্কোয়াড খেলোয়াড় হিসেবেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। আর জেসুসেরক্ষেত্রে তাকে ওয়াইড খেলোয়াড় হিসাবে নিজেকে বদলে ফেলতে হয়েছিল।

অন্যদিকে, লিভারপুলের সিস্টেমটি এতদিন ধরে রবার্তো ফিরমিনোকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। সম্ভবত আধুনিক খেলোয়াড়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘ফলস নাইন’ ভূমিকা তার নামের সাথে ব্যাবহার করা হয়েছে।

এই ব্রাজিলিয়ানের বল প্রেস করার প্রচেষ্ঠা, বলের দিকে আসার এবং তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, মানে এবং সালাহকে ইনসাইড ফরোয়ার্ড হিসেবে সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এরই ফলস্বরূপ ফুল ব্যাক ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ড এবং অ্যান্ডি রবার্টসনকেও ওভারল্যাপের সুযোগ তৈরি করে দেয়। ফিরমিনো দলের সৃজনশীলতার ভিত্তি হয়ে উঠেন।

ক্লপ সহজেই স্বীকার করেন যে নুনেজ একজন ভিন্ন ধরনের স্ট্রাইকার। তিনি গত মৌসুমে বেনফিকার হয়ে ৩৪ টি গোল করেছেন এবং যিনি ফিরমিনো বা ডিয়োগো জোতার চেয়ে বেশি পেনাল্টি-বক্সে উপস্থিতি প্রদান করবেন।

পর্তুগালে তিনি বাম দিক দিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণে ঢোকার ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল দেখিয়েছিলেন, কিন্তু লুইস ডিয়াজ জানুয়ারিতে পোর্তো থেকে আসার পর থেকে সেই বিশেষ ভূমিকাটি পেয়েছেন তাই নুনেজকে বেশিরভাগ সময় নাম্বার নাইন হিসেবেই দেখা যাবে।

এছাড়া প্রতিপক্ষ রক্ষণের পিছনে দৌড়ানের মাধ্যমে তিনি লিভারপুলের জন্য আক্রমণের আরও নতুন পথ খুলে দিবেন,যদিও এটি সমাধানের সাথে সাথে নতুন আরও অনেক ধাঁধাও উপস্থাপন করবে, যেমন আক্রমণভাগে দলের আকৃতি কেমন হবে? ইত্যাদি।

বুধবার সালজবার্গের বিপক্ষে হারের পর ক্লপ ব্যাখ্যা হিসেবে বলেন যে যখন ডারউইন যখন প্রতিপক্ষ রক্ষণের পিছনে দৌড় লাগান তখন তাকে সব সময় বল দেওয়া, যা দলের জন্য সবসময় সঠিক সিধান্ত ছিল না।

যদিও ক্লপের কথা নেতিবাচক শোনায়, আদতে ক্লপ নুনেজকে নিয়ে যতটা উচ্ছ্বসিত মানে বা সালাহ সম্পর্কেও ঠিক তাই বই বেশি উচ্ছ্বসিত ছিলেন না। এই ২৩ বছর বয়সী ফুটবলার যে কতটা বিপজ্জনক হতে পারেন গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে লিভারপুলের খেলোয়াড়রা তা প্রত্যক্ষ করেছেন।

নুনেজ সম্পর্কে আলেকজান্ডার আর্নল্ড বলেন যে তারা জানতেন যে সে একজন বিশেষ খেলোয়াড় ছিল, তিনি আরও বলেন যে যখন দলের সবাই জানতে পারে যে তাকে দলে ভেড়াতে ক্লাব আগ্রহী তখন সকলেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে।
নুনেজকে তার পূর্ণ ক্ষমতায় দেখতে পাওয়ার আগে তার সময়ের প্রয়োজন হতে পারে, এবং এটি হ্যাল্যান্ডের জন্যও প্রযোজ্য। গত তিন মৌসুমে ডর্টমুন্ড, সালজবার্গ এবং নরওয়ের জন্য তিনি ছিলেন গোল মেশিন এই ব্যাপারে কোন তর্ক নেই।

কমিউনিটি শিল্ড ম্যাচে দুজনেই পরপুরিভাগে নিজেদের তুলে ধরতে পারেননি কিন্তু শীঘ্রই শুরু হতে যাওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২০২২-২০২৩ মৌসুমে এই ফুটবলারদের উপরই সবার নজর নিবদ্ধ থাকবে। সবাই এই অপেক্ষায় যে গোল্ডেন বুটের লড়াই মত্ত হয়ে উঠবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link