More

Social Media

Light
Dark

শচীনই কী সর্বকালের সেরা!

সর্বকালের সেরা ব্যাটার এর কথা বললেই নি:সন্দেহে আমাদের মাথায় তিনটি নাম আসে। তারা হলেন – স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ভিভ রিচার্ডস এবং শচীন টেন্ডুলকার। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন যুগে খেলতেন বলে এদের তিন জনকে নিজেদের মধ্যে তুলনা করা সম্ভব নয়। তবে যদি ‘কে সেরা’ এই প্রশ্ন করা হয় কাউকে, তিনি হয়ত নিজের পছন্দের খেলোয়াড় হিসেবে বা নিজের দেশের হিসেবে পক্ষপাতিত্ব করে উত্তর দিবেন।

আপনি যদি একজন ভারতীয় হন, আপনি তাঁকে ভালোবাসেন। এর বাইরে কোনো অবস্থান নেই। বলছিলাম ভারতীয় ক্রিকেট বিস্ময় শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের কথা। কারো কারো কাছে তিনি ক্রিকেট ঈশ্বরের অবতার। আবার কারো কাছে তিনি কেবল রক্ত মাংসের মানুষ। তিনি যখন বিশ্বকাপে খেলতেন, কিংবা মাঠে নেমে একের পর এক রেকর্ড ভাঙতেন, তখন তিনি জানান দিতেন – তিনি এবং একমাত্র তিনিই ক্রিকেটের ঈশ্বর।

ভারতীয় দলে তাঁর যখন আবির্ভাব হয় তখন সেখানে ভালো মানের ব্যাটারের অভাব ছিল। সেকালে ভারত একটি বিশ্বকাপ জয়ী দল হওয়া সত্ত্বেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দল হিসেবে তাদের বিবেচনা করা হতো না।

ads

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীনের অভিষেক ঘটেছিল মাত্র ষোল বছর বয়সে। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর ওয়াকার ইউনুস, ওয়াসিম আকরাম, ম্যালকম মার্শাল, ক্রেগ ম্যাকডারমটের মতো ফাস্ট বোলারদের মুখোমুখি হচ্ছেন!

শচীন, দ্রাবিড়, সাঙ্গাকারা, লারা, পন্টিংএর মধ্যে মাত্র দুজন ব্যাটার ছিলেন, বোলাররা যাদের সবচেয়ে বেশি ভয় পেতেন। তারা হলেন লারা ও শচীন। শারজাহতে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর শেন ওয়ার্ন প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন শচীন সেই সিরিজে তাঁর দু:স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।

শচীনের সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে শচীনই সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক হওয়া এবং সবচেয়ে দেরীতে অবসর নেয়া ক্রিকেটার। আপনি যদি আমাকে পন্টিং, লারা, দ্রাবিড়, ক্যালিস কিংবা সাঙ্গাকারার সাথে শচীনের তুলনা করতে বলেন, তবে আমি শচীনকে শুধুমাত্র ব্রায়ান লারার সাথে তুলনা করব।

কারণ লারা হচ্ছেন ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্টাইলিশ ব্যাটার। কিন্তু শচীনও কম যান না। তিনি ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটার এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ টি সেঞ্চুরির মাইলফলক অর্জন করা একমাত্র ক্রিকেটার। তাছাড়া ওডিআই এবং টেস্টের ঘরানায় ও তাঁর সর্বোচ্চ রান রয়েছে যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অবদান ও আধিপত্যের সাক্ষী।

বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) শচীন সম্পর্কে লিখেছিল, ‘হেলমেটের নিচে, সেই এলোমেলো কোঁকড়া চুলের গভীরে, কপালের ভিতরে, বৈজ্ঞানিক বোঝাবুঝির বাইরে এমন কিছু আছে যা আমরা জানি না। এমন কিছু যা তাকে উড়তে দেয়, খেলার এই দুনিয়ায় ঘোরাঘুরি করতে দেয়। আমাদের কথা বাদ দিন, এমন কি যারা তার পাশে খেলার জন্য যথেষ্ট প্রতিভাবান তারাও তা অনুধাবন করতে পারে না। তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন মানুষ টিভি সেটে নিমগ্ন হয়ে জীবনের বাকি সব ভুলে যায়।’

সাবেক ক্রিকেটার ও সাংবাদিক পিটার রোবাক শচীনকে নিয়ে ভারতের উন্মাদনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘শিমলা থেকে দিল্লী যাওয়ার ট্রেনে, একটি স্টেশনে বিরতি ছিল। ট্রেনটি যথারীতি কয়েক মিনিটের জন্য থামল। শচীন তখন সেঞ্চুরির কাছাকাছি, ৯৮ রানে ব্যাট করছেন। ট্রেনের যাত্রী, রেল কর্মকর্তা, ট্রেনের সবাই অপেক্ষা করছিলেন কখন সেঞ্চুরি পূর্ণ করবেন শচীন। ভারতে এই জিনিয়াস রীতিমত সময়কেও থামিয়ে দিতে সক্ষম!’

অজি ব্যাটার রিকি পন্টিং, এক সময় শচীনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা যাকে নিয়েছিল তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর যতগুলো ইনিংস দেখেছি, আমি মনে করি তিনি একজন আশ্চর্যজনক খেলোয়াড়। তাঁর পরিসংখ্যান এবং রেকর্ডগুলি দেখুন, মাত্র ২০ বছর ধরে খেলতে থাকা কারো পক্ষে এটি বেশ অবিশ্বাস্য। তিনি আমার মতো পুরুষদের জন্য মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছেন যেন তাঁর রেকর্ড তাড়া করে যতটা সম্ভব তাঁকে ছোঁয়া যায় সেই চেষ্টা করা যায়। যদি আমাকে ২০ বছর ধরে ক্রিকেটে টিকে থাকতে হয়, সম্ভবত আমি হুইল চেয়ারে বসে ব্যাটিং করতাম!’

শারজাহতে একটি ম্যাচ চলাকালীন একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘মরে গেলে ঈশ্বরের দেখা পাব, কিন্তু ততক্ষণ আমি শচীনকে দেখব।’ সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ম্যাথু হেইডেন এর উক্তিটি ছিল এমন, ‘আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। তিনি ভারতের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করেন।’

ইংল্যান্ডের একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘শচীন যখন ব্যাটিং করছে সেই সুযোগে তোমার সব পাপ করে নাও। পাপগুলো অগোচরে চলে যাবে, কারণ গড নিজেও খেলা দেখছেন।’ এরকম হাজারটি উক্তি পাওয়া যাবে যা প্রমাণ করে শচীনই হলেন ‘দ্য গড অব ক্রিকেট’।

ভিভ রিচার্ডস তাঁর সময়ের সবচেয়ে মারকুটে ব্যাটার ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ছক্কা মারতেন বলে বেশিরভাগ বোলার তাকে বোলিং করতে ভয় পেতেন। কিন্তু রিচার্ডস এমন একটি প্রভাবশালী দলের অংশ ছিলেন যেখানে তাকে মার্শাল, গার্নার, হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস এর মতো শক্তিশালী বোলারদের মোকাবেলা করতে হয়নি প্রতিপক্ষ হিসেবে। কারণ তারা সতীর্থ ছিলেন। 

অন্যদিকে, সুনীল গাভাস্কার সব থেকে ধ্বংসাত্মক বোলারদের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁর সময়ে। এবং তা সত্ত্বেও তিনি ৩৪ টি সেঞ্চুরি করেছিলেন যা ছিল বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু তিনি ওয়ানডে ঘরানায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। তাই এখানেও শচীন সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন। 

আবার ব্র্যাডম্যান যখন আশির দশকেরও আগে খেলতেন তখন ক্রিকেট কেবল টেস্ট ঘরানার খেলা ছিল। ওডিআই কিংবা টি- টোয়েন্টি ঘরানার আবিষ্কার তখনো হয়নি। তাই এই দুই ঘরানা বাদ দিয়ে চিন্তা করলে সেই আমলে ব্র্যাডম্যান তাঁর সময়কালীন সেরা ব্যাটার ছিলেন। কিন্তু শচীন রাজ করেছেন ক্রিকেটের তিন ঘরানাতেই। তাই তিনি এক্ষেত্রে ব্র্যাডম্যানকেও ছাড়িয়ে গেছেন।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একের পর এক রেকর্ড করে শচীন নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়। তাই এক কথায় স্বীকার করা যায়, শচীনই ছিলেন সর্বকালের সেরা ব্যাটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link