More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

গোলরক্ষক যখন গোলদাতা

গতকাল প্রিমিয়ার লিগে তাজ্জব ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন অ্যালিসন।

গোল থামানো যার কাজ তিনিই কিনা গোলবার ছেড়ে এসে বাঁচিয়ে দিয়েছেন দলকে। শুধু বাঁচাননি, গোল করে দলের  চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্নও বাঁচিয়ে রেখেছেন এখনও। কিন্তু অ্যালিসন বেকারের এই কাজ নতুন কিছু নয়। ২৯ বছরের প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে এর আগেও পাঁচ বার ঘটেছে এমন ঘটনা। সেই সব ঘটনা নিয়েই আজকের লেখা।

  • পিটার স্মাইকেল (অ্যাস্টন ভিলা)

প্রতিপক্ষ: এভারটন; অক্টোবর ২, ২০০১

ads

প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে ধরা হয় পিটার স্মাইকেলকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে ক্যারিয়ারের বড় অংশ কাটিয়ে জীবনের শেষদিকে এসে এক মৌসুমের জন্য অ্যাস্টন ভিলায় নাম লিখিয়েছিলেন পিটার স্মাইকেল। আর সেখানেই প্রিমিয়ার লিগের প্রথম গোল পেয়েছিলেন তিনি।

যদিও গোল করাটা তার কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগে ব্রন্ডবি ও ভিদোভ্রের জার্সিতে মোট ৮ গোল করেছিলেন পিটার। তবে প্রিমিয়ার লিগে ছিল এটার প্রথম। শুধু তার জন্য নয়, ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রিমিয়ার লিগে প্রথম কোনো গোলকিপার হিসেবে করা গোল ছিল এটি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে উয়েফা কাপের ম্যাচেও গোল করেছিলেন তিনি।

এভারটনের বিপক্ষে গুডিনসন পার্কে মুখোমুখি হয়েছিল অ্যাস্টন ভিলা। অতিরিক্ত সময়ে যখন কর্নার পেল ভিলা ততক্ষণে তারা ৩-১ গোলে পিছিয়ে। কর্নার থেকে বল ডিফ্লেক্টেড হয়ে পিছিয়ে গিয়ে পড়ল গটলার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পিটার স্মাইকেলের সামনে। সেখান থেকে নেওয়া দূর্দান্ত ভলিতে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম গোল অর্জন করে নেন স্মাইকেল। গোলরক্ষকের কাছ থেকে গোলের দেখা পেতে প্রিমিয়ার লিগের অপেক্ষা করতে হয়েছে ৯ বছর। যদিও ৩-২ গোলে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাদের।

  • ব্র্যাড ফ্রিডেল (ব্ল্যাকবার্ন)

প্রতিপক্ষ: চার্লটন অ্যাথলেটিক; ফেব্রুয়ারী ২১, ২০০৪

গোলরক্ষকদের কাছ থেকে দ্বিতীয় গোল পেতে তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রিমিয়ার লিগকে। আর এই গোল হতাশ করেনি কাউকে। প্রিমিয়ার লিগের টান টান উত্তেজনাকর ম্যাচের দিক দিয়ে এই ম্যাচের নাম উপরের সারিতেই থাকবে।

ম্যাচের ৮৮ মিনিটের খেলা শেষ, তখনও ২-১ গোলে এগিয়ে আছে চার্লটন। ম্যাচের শেষদিকে কর্নার পায় ব্ল্যাকবার্ন। আর তাতেই সামনে ছুটে আসেন ব্র্যাড ফ্রিডেল। জটলার মধ্যে থেকে চার্লটনের ডিফেন্ডারের ডিফ্লেক্ট হওয়া বল ট্যাপ-ইন করে জালে পৌছে দেন ফ্রিডেল। স্কোরলাইন ২-২ করে আনন্দ করেই বাকি সময়টা পার করে দেয় ব্ল্যাকবার্ন। কিন্তু তখনও গল্পের মূল টুইস্ট বাকি।

ফ্রিডেলের আনন্দ মাটি করে দিলেন ক্লস জেনসেন। অতিরিক্ত সময়ে এসে ব্র্যড ফ্রিডেলকে ফাঁকি দিয়ে করা গোল আবারও পিছিয়ে দেয় ব্ল্যাকবার্নকে। শেষমেশ ৩-২ গোলে হেরে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয় ফ্রিডেলকে।

  • পল রবিনসন (টটেনহ্যাম)

প্রতিপক্ষ: ওয়াটফোর্ড; মার্চ ১৭, ২০০৭

এই গোলের জন্যও প্রিমিয়ার লিগ দর্শকদের অপেক্ষা করতে হয় ৩ বছর। তবে এবারের গোল আগের দুই গোলের থেকে আলাদা। ম্যাচের মাঝামাঝি সময়ে নিজেদের অর্ধ থেকে ফ্রি কিক পায় টটেনহ্যাম। নিজের দলের খেলোয়াড়দের এগিয়ে দিয়ে নিজেই ফ্রি কিক নিতে চলেন টটেনহ্যামের গোলরক্ষক পল রবিনসন।

ফ্রি কিক নিলেন তো নিলেন সবাইকে উড়িয়ে বল গিয়ে পরলো ওয়াটফোর্ডের গোলরক্ষক বেন ফস্টারের সামনে। কিন্তু গোলবার ছেড়ে বল ধরতে এগিয়ে আসা বেন ফস্টার খেই হারিয়ে ফেললেন। বলের ফ্লাইট জাজমেন্ট করতে না পেরে এগিয়ে আসার খেসারত দিতে হলো তাকে। তার মাথার উপর দিয়ে বল পৌঁছে গেল জালে। সেই সাথে ফ্রি-কিক থেকে গোলরক্ষকদের প্রথম গোল দেখল প্রিমিয়ার লিগ।

সেই সাথে প্রথমবারের মতন গোল দিয়ে নিজের দলকে জেতাতে পারলেন কোনো গোলরক্ষক। পল রবিনসনের গোল এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল স্পার্সকে। আর হোসাম ঘালির গোলে ২-১ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ে টটেনহ্যাম।

  • টিম হাওয়ার্ড (এভারটন)

প্রতিপক্ষ: বোল্টন; জানুয়ারী ৪, ২০১২

গোলের পর টিম হাওয়ার্ডের মুখটা ছিল দেখার মতন। সত্যি বলতে যেকোনো ফুটবল সমর্থকের জন্যই সেটা সত্য। এক কথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন এই আমেরিকান গোলরক্ষক। গোলটার জন্য অবশ্য বাতাসকে বেশ খানিকটা ক্রেডিটও দিতে হবে বৈকি, ম্যাচ শেষে টিম হাওয়ার্ড সেটা দিয়েছেনও।

প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলাতে ব্যাকপাস করছিলেন এভারটনের খেলোয়াড়েরা। ব্যাক পাস করতে করতে বল এসে ঠেকে টিম হাওয়ার্ডের পায়ে। হাওয়ার্ড তার স্বভাবমতো বল বাড়িয়ে দেন সামনে। কিন্তু এতটাই জোড়ে শট করেন যে বল উড়ে গিয়ে পরে প্রতিপক্ষ ডি-বক্সের সামান্য বাইরে। সেই বল এভারটন আর বোল্টনের খেলোয়াড়দের ফাকে গলে পৌছে যায় জালে। বোল্টনের গোলরক্ষকও ভাবতে পারেননি এভাবে বল জালে জড়াতে পারে। কিন্তু টিম হাওয়ার্ড সেটা করে দেখিয়েছিলেন।

যদিও ম্যাচটা জেতা হয়নি তার। ২-১ গোলে হেরে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল সেদিন।

  • আসমির বেগোভিচ (স্টোক)

প্রতিপক্ষ: সাউদাম্পটন; নভেম্বর ২, ২০১৩

আসমির বেগোভিচের গোলটাকে টিম হাওয়ার্ডের একটু উন্নত ভার্সন বলেও চালিয়ে দেওয়া যায়। যাবেই বা না কেন? বেগোভিচ আর হাওয়ার্ডের গোল বলতে গেলে একেবারে কপি-পেস্ট ছিল। কিন্তু বেগোভিচ তার গোল দিয়ে নাম লিখিয়েন গিনেস বুকে।

হাওয়ার্ড ডি-বক্সের মাথা থেকে শট নিলেও বেগোভিচ তার শট নিয়েছিলেন ডি-বক্সের ভেতরে থাকা ছোট বক্সের ভেতর থেকে। সেখান থেকে বল ড্রপ খায় প্রতিপক্ষ ডি-বক্সের সামনে। অফিশিয়ালি তার দূরত্ব ছিল ৯১.৯ মিটার বা ৩০১ ফুট ৬ ইঞ্চি, যা ছিল বিশ্বরেকর্ড।

শুধু তাই নয়, তার শট থেকে হওয়া গোল সবচেয়ে দূর থেকে নেওয়া শটে গোল হিসেবেই জায়গা করে নিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। বেগোভিচের গোলের কল্যাণে ম্যাচটা শেষ হয়েছে ১-১ গোলে।

  • অ্যালিসন বেকার (লিভারপুল)

প্রতিপক্ষ: ওয়েস্ট ব্রম। মে ১৬, ২০২১।

প্রিমিয়ার লিগের এই ছোট্ট তালিকার সর্বশেষ সংযোজন হলেন ব্রাজিলিয়ান এই গোলরক্ষক। তবে অ্যালিসন তার গোলে ভেঙ্গেছেন অন্য সকলের রেকর্ড। অন্য সকলের গোলই এসেছে পা থেকে, কিন্তু অ্যালিসন গোল করেছেন কর্নার থেকে সরাসরি হেডে।

ম্যাচের শেষ মিনিট চলছে, লিভারপুলের সামনে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ালিফাই করার বাঁচা মরার লড়াই। এই ম্যাচে ড্র করলেই পথ হারাবে তারা। আর সেই সময়েই ত্রাতা হয়ে আসেন অ্যালিসন। ট্রেন্ট আলেক্সান্দার আর্নল্ডের নেওয়া কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে ২-১ গোলের এক অবিস্বরণীয় জয় এনে দেন অ্যালিসন। সেই সাথে বেঁচে থাকে তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link