More

Social Media

Light
Dark

গিলের ব্যাটে যেন শচীনের প্রতিচ্ছবি

বাইশ গজের ক্রিকেটে শচীনের সাথে শতকের সখ্যতা যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনি তার বিপরীতে নার্ভাস নাইন্টিতে কাঁটা পড়ে বিষণ্ন শচীনের মাঠ থেকে প্রস্থানের দৃশ্যও কম দেখা যায়নি। ক্যারিয়ারে ১৭ বার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছেন এ ব্যাটিং কিংবদন্তি। 

কিংবদন্তির সাথে উঠতি, সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের তুলনাটা ঠিক যায় না। তবে পূর্বসূরির পদচ্ছাপ অঙ্কন করে উত্তরসূরি কতটা এগিয়ে নিলেন, কতটা সাদৃশ্যতা নিজের মধ্যে ধারণ করলেন তা নিয়ে চর্চা, আলোচনা সর্বদাই প্রবাহমান। 

সুনীল গাভাস্কারের পর ভারতীয় ক্রিকেটে একজন শচীন এসেছেন। এরপর শচীনকে মানদণ্ড ধরে বিরাট কোহলি নিজেকে নিয়ে গেছেন কিংবদন্তিতুল্য আসনে। এ ধারাবাহিকতায় ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বশেষ সংযোজন তরুণ ব্যাটিং সেনসেশন শুভমান গিল। চলতি বছরে সর্বোচ্চ রান এসেছে যার ব্যাট থেকে। 

ads

 

বিশ্বকাপের মঞ্চেও যে গিল দারুণ কিছু করতে চলেছেন তার আভাস পাওয়া গিয়েছিল আগেই। অনেকে তো তাঁকে এ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবেই দেখে ফেলেছিলেন। তবে সেই পথে বাঁধা হিসেবে আসলো গিলের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া। জ্বরের কারণে ভারতের হয়ে প্রথম তিনটা ম্যাচ খেলতেই পারলেন না৷ 

এরপর ফিরলেন। তবে গিল হয়ে ফিরতে পারলেন না। পুরো বিশ্বকাপে একটি মাত্র ফিফটি গিলের সঙ্গী। এমন পরিসংখ্যান তাঁর নামের পাশে বড্ড বেমানান। তবে পুরো বছর জুড়ে যার ব্যাটে রানফোয়ারা ছুটেছে, সেই গিল চেনারূপে ফিরতে সময় নিলেন না। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেললেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। তবে শতকের পথে হেটেও শেষ পর্যন্ত ৯২ রানে আউট হয়েছেন এ ব্যাটার। 

আর এখানেই এবার খোলাসা করা যাক, শচীনের নার্ভাস নাইন্টির কথা দিয়েই কেন শুরু করা হলো এই স্ক্রিপ্ট। 

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামকে তো শচীনেরই মাঠ বলা হয়। কতশত স্মৃতি জড়িয়ে এই মাঠকে ঘিরে। তাই ক্রিকেট থেকে অবসরের পরও এই মাঠে আসেন প্রায়শই। হয়তো কিংবদন্তির চোখ দিয়ে কারো মাঝে খুঁজে দেখতে চান ভারতের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ। 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও এ দিন মাঠে ছিলেন শচীন৷ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকার উপস্থিতিতে তাই নিজেকে চেনাতে ভুল করেননি গিল। শুরুতে রোহিত শর্মার উইকেট হারিয়ে যেটুকু চাপে পড়েছিল ভারত, তা এক নিমেষেই দূর করে দেন এ ব্যাটার কোহলির সাথে গড়ে তোলেন ১৮৯ রানের জুটি। আর তাতেই বড় সংগ্রহের একটা ভিত্তি পেয়ে যায় ভারত। 

শুরুতে রয়েশেয়ে পঞ্চাশ পূরণ করলেও সেঞ্চুরির পথে গিল ছুটেছিলেন দুরন্ত গতিতেই। তবে সেই তাড়াহুড়োতেই কিনা ৯২-এ এসে ধরা দিলেন গিল। নার্ভাস নাইন্টিতে আউট হওয়ার আক্ষেপ বোধহয় শচীনের চেয়ে বেশি আর কারো নেই। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে গিলের এটাই তো প্রথম নব্বইয়ের ঘরে আউট হওয়া। 

গ্যালারিতে বসেই বোধহয় গিলের সেই আক্ষেপটা অনুভব করেছেন শচীনও। তবে শচীন হয়তো সেই ভবিষ্যদ্বাণীও ইতোমধ্যে এটে ফেলেছেন,— ভারতীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হতে যাচ্ছে গিল। 

১১ চার, ২ ছক্কায় ৯২ বলে ৯২ রানের ইনিংস। এমন ইনিংস গিলের ক্যারিয়ার বিবেচনায় আহামরি কোনো ইনিংস না। এ বছরেই তো তিনি হাঁকিয়েছেন ৫ সেঞ্চুরি। তবে এই ইনিংসের মাহাত্ম্য অন্য জায়গায়। বিশ্বকাপের মঞ্চে এখন পর্যন্ত এটিই গিলের ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস। 

হয়তো ম্যাচশেষে সেঞ্চুরির আক্ষেপে পুড়বেন। তবে সেই আক্ষেপের সাথে গিলদের তো একটা তৃষ্ণাও তৈরি হয়, সেঞ্চুরির তৃষ্ণা। ভারতীয় ক্রিকেটে এই তৃষ্ণাই তো একেকটা সুনীল, শচীন, বিরাট তৈরি করেছে। শুভমান গিলও হয়তো সেই পথেই এগোচ্ছেন। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link