More

Social Media

Light
Dark

জার্মান ফুটবল, গ্রেটদের বঞ্চিত করার ‘ওস্তাদ’

জার্মানি বা পশ্চিম জার্মানি ১৯৫০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সবথেকে বেশি ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে (আটবার) এবং এরই সাথে সবথেকে বেশি বার (১৩ বার) টপ ফোরে ফিনিশ করে। ইতালির সাথে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ডও তাদের। সুতরাং বলা যায়, এই টুর্নামেন্টের অন্যতম সফল দল হচ্ছে জার্মানি।

জার্মানির অনেক জয় ছিল তৎকালীন সময়ের ভক্তদের সবথেকে প্রিয় দল কিংবা প্রিয় খেলোয়াড়কে কাঁদিয়ে। এর মধ্যে এমন ফুটবলার রয়েছে যারা তাঁদের প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বকালের সেরা বলে বিবেচিত।

  • ফেরেঙ্ক পুসকাস (১৯৫৪)

যখন ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালের কথা আসে,তখন পশ্চিম জার্মানি ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরিকে ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত করার চেয়ে বড় বিপর্যস্ত ঘটনা খুব কমই আছে। হাঙ্গেরি ফাইনালে আসার পথে সব টিমকেই ডমিনেট করে হারিয়ে এসেছে। এর মধ্যে গ্রুপ পর্বে পশ্চিম জার্মানিকেও ৮-৩ গোলে হারের স্বাদ দিয়েছিল তারা। তবে ফাইনালে ফ্রিটজ ওয়াল্টারের দল হাঙ্গেরিয়ানদের ফাইনালে হারিয়ে দেয়।

ads

৬ মিনিটের মাথায় হাঙ্গেরির গোল্ডেন জেনারেশনের অধিনায়ক পুসকাস গোল করে এগিয়ে নেন হাঙ্গেরিকে। অষ্টম মিনিটে হাঙ্গেরির ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জোল্টান জিবোর। পরবর্তী দশ মিনিটে জার্মানির হয়ে গোল শোধ করেন ম্যাক্স মরলক এবং হেলমুট রাহন।রাহন ৮৪ মিনিটে আন্ডারডগদের হয়ে জয়সূচক গোলটিও করেন।

পরবর্তীতে পুরো ম্যাচজুড়ে পুসকাস একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করলেও ফিনিশিং ব্যর্থতায় গোল পাননি। ৮৬ মিনিটে পুসকাস এর শেষ চেষ্টার গোলটিও অফসাইড হয়। পশ্চিম জার্মানি এভাবেই তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জেতে।

টুর্নামেন্ট জিততে ব্যর্থ পুসকাস কিন্ত ঠিকই জিতেছিলেন গোল্ডেন বল। তার সতীর্থ স্যান্ডর কোসিস জিতেন গোল্ডেন বুট।পুসকাস ইতিমধ্যেই ফুটবলের অন্যতম বড় নাম,ক্লাব পর্যায়ে এবং হাঙ্গেরির সাথে অসংখ্য সম্মাননা জিতেছেন। পুসকাস লস ব্লাঙ্কোসের হয়ে ২০০ টিরও বেশি গোল করেছেন, প্রতি খেলায় একটি গোলেরও বেশি, এবং তাদের হয়ে একাধিক ইউরোপীয় কাপ এবং লিগ শিরোপা জিতেছেন। কিন্ত, বিশ্বকাপ ট্রফিটা ছোঁয়া হয়নি পশ্চিম জার্মানি নামক অভিশাপের কারণে।

  • ইয়োহান ক্রুইফ (১৯৭৪)

নেদারল্যান্ড যখন ১৯৭৪ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে তখন তারা ১৯৫৪-এর হাঙ্গেরির মতো টুর্নামেন্টের ফেভারিট কোনো দল ছিলো না। ১৯৩৮ এর পর এই টুর্নামেন্টে এটিই ছিলো তাদের প্রথমবার অংশগ্রহণ। কিন্ত, এই দলই কিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছায়।

ইয়োহান ক্রুইফের নেতৃত্বে রিনাস মিশেলের দল টোটাল ফুটবল দিয়ে রীতিমতো ঝড় তুলে সেই টুর্নামেন্টে। একে একে উরুগুয়ে,বুলগেরিয়া,আর্জেন্টিনা, পশ্চিম জার্মানি এবং ব্রাজিলের মতো দলকে হারিয়ে ফাইনালে তারা স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানির মুখোমুখি হয়।

ম্যাচের শুরুতেই ক্রুইফ একটি পেনাল্টি জিতে জোহান নিসকেন্স যেটিতে গোল করে ডাচদের লিড এনে দেন। পরবর্তীতে পল ব্রিটনার এর পেনাল্টিতে গোল পরিশোধ করে পশ্চিম জার্মানি। তারপর গার্ড মুলারের লিডে কামব্যাকের গল্প লিখে পশ্চিম জার্মানি। নেদারল্যান্ডস কয়েকবার ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও স্বাগতিকরা জেতে ২-১ গোলেই।

ক্রুইফ ১৯৭৪ সালে তৃতীয়বারের মতো ব্যালন ডি ওর জিতেন। নেদারল্যান্ডকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক দশক পর বার্সেলোনাকে লা লিগা জেতান তিনি সে বছর। জীবনে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে ক্রুইফের জীবনে অনেক সাফল্য ধরা দিলেও ১৯৭৪ সাল ছিলো তার খেলোয়াড়ই জীবনের সেরা বছর। কিন্ত, অপূর্ণতা ঐ সেরা বছরে কেবল বিশ্বকাপ।

  • ডিয়েগো ম্যারাডোনা (১৯৯০)

এই লিস্টে একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা তার আগের বিশ্বকাপের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আর্জেন্টিনার এই গোল্ডেন বয় আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতায়। চার বছর পর ইতালিতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ আসে তাঁর সামনে।

কিন্ত, ৯০-এর ম্যারাডোনার মধ্যে ৮৬-এর ম্যারাডোনাকে তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি, ঠিক তেমনি দলগত ভাবে ৮৬-এর আর্জেন্টিনার ধারেকাছেও ছিল না ৯০-এর আর্জেন্টিনা দলটা। এমনকি তারা তাদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে রজার মিলার ক্যামেরুনের কাছে হেরেছে।

কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনা ম্যাজিকে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলকে হারায় ১-০ তে। ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় পশ্চিম জার্মানির, যেই দলকে মেক্সিকোতে ৮৬ এর ফাইনালে পরাজিত করেছিলো তারা। মেক্সিকোর ফাইনাল যেদিকে ছিলো এক ক্লাসিক ফাইনাল, সেদিকে ইতালির ফাইনাল ছিলো ভুলে যাওয়ার মতোই। ম্যাচের একমাত্র গোলটি পেনাল্টি থেকে করেন আন্দ্রেয়াস ব্রেহমে।

  • লিওনেল মেসি (২০১৪)

মেসিকে একবার নয় ৩ বার বিশ্বকাপের আসর থেকে বিদায় করেছিলো জার্মানি। ২০০৬ এবং ২০১০ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে হলেও ২০১৪ সালে ছিলো ফাইনালে।

আর্জেন্টিনা ২০১৪ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে খুবই শক্তিশালী আক্রমণভাগ ও গড়পড়তা মধ্যমাঠ ও রক্ষণ নিয়ে। তারা গ্রুপ স্টেজের সব ম্যাচ জেতে,যেখানে মেসি ৪ গোল করে। নকআউট স্টেজে ডি মারিয়া এবং হিগুয়েনের গোল সুইজারল্যান্ড এবং বেলজিয়ামকে হারায় তারা।

অপরদিকে জার্মানি ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারিয়ে তারাই যে বিশ্বকাপ জেতার ফেভারিট সেই বার্তাই দিয়ে রাখে।আর্জেন্টিনা ফাইনালে শুরুটা ভালো করলেও, দুই দলের কেউ ৯০ মিনিটে গোল দিতে পারেনি। অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোতজের গোলে বিশ্বকাপ চতুর্থবারের মতো জেতে জার্মানি। মেসি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে।

এভাবেই সময়ের সেরা ৪ ফুটবলারকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত রাখে জার্মানি। এছাড়াও ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ দুই বিশ্বকাপের মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্স তাদের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার খুব কাছাকাছি ছিল, কিন্ত দুইবারই পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে তাদের এই স্বপ্নের ইতি হয়।

১৯৮২ সালে সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে পেনাল্টিতে হারায় পশ্চিম জার্মানি। যদিও পশ্চিম জার্মানি ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে যায়। ১৯৮৬ সালেও আন্দ্রেয়াস ব্রেহমে এবং রুডি ভোলারের গোলে ফ্রান্সকে হারায় পশ্চিম জার্মানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link