More

Social Media

Light
Dark

কোহলি-গম্ভীর আলিঙ্গন, আইপিএলের বিরাট বিজ্ঞাপন

বিরাট কোহলির হাসি এখনও নির্মল। গম্ভীর থাকলেও হাসলে ভালই লাগে গৌতমকে। আইপিএলের বড় বিজ্ঞাপন হতেই পারে কোহলি আর গম্ভীরের আলিঙ্গন।

যুদ্ধ ভুলে, একে অপরের দিকে ধেয়ে না এসে মন ভালো করে দেওয়া হাসি উপহার দিলেন গম্ভীর আর কোহলি। মোনালিসার হাসির নাকি অর্থ বিভিন্ন। গম্ভীর-কোহলির নির্ভেজাল হাসিরও কি একাধিক অর্থ হতে পারে? হতেই পারে।

আজকাল হাসিমুখ খুব একটা দেখা যায় না। চিন্তা-চাপ-টেনশন কেড়ে নিচ্ছে মানুষের সহজ সরল হাসি। সবাই গোমড়া থোরিয়াম। সেই জায়গায় কোহলি-গম্ভীরের হাসি মন ছুঁয়ে যায়। অজান্তে আমার মুখেও খেলে যায় হারিয়ে যাওয়া হাসি।

ads

এই দৃশ্য দেখে কেউ বলছেন যুদ্ধবিরতি। কেউবা বলছেন শান্তি। আমার মনে হচ্ছে, চিরশত্রুতা কি থাকে কখনও? শত্রুতা ভুলে ‘কাছে’ এসেছিলেন সর্বকালের সেরা মোহাম্মদ আলী আর জো ফ্রেজিয়ার। মৃত্যুর আগে বৈরীতা ভুলে বন্ধু হয়েছিলেন স্বয়ং ম্যারাডোনা আর পেলেও।

ম্যারাডোনার মৃত্যুতে পেলে লিখেছিলেন, ‘আশা করি পরলোকে আমরা একসঙ্গে ফুটবল খেলব।’ এরকম উদাহরণ বিশ্বে অনেক রয়েছে। খেলার মাঠ ভুলিয়ে দেয় দ্বেষ-হিংসা। কাছে টেনে নেয় একে অপরকে।

ভারত-পাক ক্রিকেট বন্ধ কতবছর ধরে। সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে দুই প্রতিবেশি দেশের। সবাই বলছেন, ক্রিকেট বন্ধ, তাই সম্পর্কের বরফও গলছে না। শুরু হোক ক্রিকেট।

বন্ধু তোমার সাথে আড়ি–এই গানের সুর বদলে যায় খেলার মাঠেই। আড়ি থেকে কখন হয়ে যায় ভাব, শুধুই ভাব।

বদলে গিয়েছে দেশ। অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন মানুষজন। বিরুদ্ধ মত আর গ্রহণীয় নয়। সবাই পক্ষাপক্ষিতে বিশ্বাসী। হয় শুক্ল পক্ষ, না হয় কৃষ্ণ পক্ষ। উইঙ্কল টুইঙ্কল নাটকের সেই লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে, ‘দয়া করে একটা পক্ষ ধরুন।’

হয় রোহিত, না হয় হার্দিক। হয় কোহলি, নইলে গম্ভীর। আইপিএলের প্রথম দিন থেকে হার্দিক আর রোহিতকে নিয়ে গণমাধ্যম-সমাজমাধ্যমে ঢেউয়ের পর ঢেউ।

শালীনতা-অশালীনতা নিয়ে আগ্নেয়গিরির উদগীরন। রোহিত শর্মার কোচ বলছেন, ‘আমি কিছু বলা মানেই নতুন করে বিতর্কের আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়া।’

শিষ্যের অসম্মান সহ্য করতে পারেন না গুরু। কিন্তু মুখে কিছু বলছেন না। চুপ করে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছেন বুদ্ধিমান মুম্বাইকর। কোহলি আর গম্ভীরের হাসি ছিটিয়ে দিল শান্তির জল। কোহলি–তুমি আর নেই সে তুমি। গম্ভীরও আর গম্ভীর নন। তিনিও সব ভুলে এগিয়ে এসেছেন অনুজের কাছে।

এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব ভুলে দুই মহাতারকা অন্য এক চিত্রনাট্যর জন্ম দিয়ে গিয়েছেন এতদিন। বেঙ্গালুরুর সন্ধির পরেও গাভাসকর টীপ্পনী কাটলেন, ‘ওরে ওদের এবার অস্কার দে।’

দুনিয়াজোড়া নাম কোহলির। ক্রিকেটের ধারক ও বাহক। কিন্তু মাঠের মধ্যে মেজাজ হারান, অতিরিক্ত আগ্রাসনের নামে ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করেন– এমন কলঙ্ক অদৃশ্যভাবে লেগে গিয়েছিল তাঁর শরীরে। কেউ বলতেন, কোহলির দ্বৈত সত্তা। ব্যাট হাতে এই ডক্টর জেকিল তো আচম্বিতেই মিস্টার হাইড।

সেই কোহলি নিজের ছায়া থেকে ক্রমে সরে আসছেন। প্রায়শ্চিত্ত করছেন মিস্টার ইন্ডিয়া। সদ্য দ্বিতীয়বার বাবা হয়েছেন। আগের থেকেও কি পরিণত হয়েছেন কোহলি? হয়তো তাই।

কোহলিকে দেখে মনে হয় তিনি আর যুদ্ধ এগিয়ে নিতে যেতে চান না। শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে চান দিকে দিকে। থাকতে চান নিজের ক্রিকেট নিয়ে। ফুল-ফল-ছায়া দিয়ে হয়ে উঠতে চান বনস্পতি।

বিশ্বকাপের সময়ে গোটা দেশ দেখেছে যুযুধান আফগান যুবক নবীন উল হকের সঙ্গে সন্ধির রাস্তায় হেঁটেছেন বিরাট। ওই হাসিতেও ছিল অদ্ভুত এক সারল্য। ওই হাসি মন ভালো করে দেয়। সেই হাসি আবার ছোঁয়াচেও। কখন যে মন চুরি করে নেয়।

বেঙ্গালুরুর মাঠে গম্ভীরের কাছে আসার হাসি দেখে অবিশ্বাস্য সেই গানের লাইন মনে পড়ে যায়, ‘তুই হেসে উঠলেই সূর্য লজ্জা পায়..আলোর মুকুট খানা তোকেই পরাতে চায়।’

আলোর মুকুট তো সেই কবে থেকেই তাঁর মাথায়। শুক্ররাতের পর সেই আলো আরও তেজিয়ান হল। তার উজ্জ্বলতা বাড়ল আরও কয়েকগুণ।

গোটা দেশের অদৃশ্য রিং টোন বোধহয় এটাই, সব তর্ক হোক শেষ, সব রাগ-সব দ্বেষ, সকল বালাই বলো শান্তি বলো শান্তি। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক কোহলি আর গম্ভীরের হাসিমুখ। এক হাসিতে ভুবন জিতে নেওয়া যায়। রাষ্ট্রনায়করা ভাবতে পারেন না এমন হাসির কথা? তাহলে মিটে যেত হানাহানি, রক্তারক্তি। পৃথিবী কত সুন্দর হত।

মাদার টেরেসা যে বলে গিয়েছেন, ‘পিস বিগিনস উইথ আ স্মাইল।’ শান্তির সূচনা হয় হাসির মাধ্যমেই।

খেলার মাঠ জীবনের সহজ পাঠ শিখিয়ে যায়। ধুঁকতে থাকা, নুয়ে পড়া জীবন নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে। দুই তারকার সহজ-সরল হাসি বলে দিয়ে যায়, হাসি নিয়ে থাকো, হাসিমুখে থাকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link