More

Social Media

Light
Dark

ভারতীয় ক্রিকেট ও ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি

ক্রিকেট একটি টিম গেম। একক নৈপুণ্যে কিছু ম্যাচ জেতা গেলেও নির্দিষ্ট করে কোনো শিরোপা জিততে গেলে টিম পারফরম্যান্স অবশ্যই প্রয়োজন। তারপরও মিডিয়া কিংবা যে কারণেই হোক নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেট সব সময়ই লাইম লাইটে চলে আসেন। সেখান থেকেই দলে ব্যক্তি পূজা ব্যাপারটা চলে আসে। ব্যক্তি পূজার মোহাচ্ছন্নে আড়ালে চলে যায় দলের কিছু ক্রিকেটার। সম্প্রতি ভারতের সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন। 

গৌতম গম্ভীর বরাবরই নিজের মতামত প্রকাশে অকপট ছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ছাড় দেননি তাঁর সতীর্থ ক্রিকেটারদেরও। যে কথা কেউ বলে না সে কথা গম্ভীরই যেন বলে ফেলেন কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই। এবার কথার তীর ছুঁড়েছেন বিরাট কোহলি আর মহেন্দ্র সিং ধোনির দিকে।  

তিনি বলেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেট সংস্কৃতিতে হিরোইজম ব্যাপারটা খুব চলে। ২০০৭ আর ২০১১ বিশ্বকাপটা আমরা দলীয় প্রচেষ্টায় জিতেছিলাম। অথচ ব্যক্তি পূজা হয়েছিল একজনকে নিয়ে। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। মিডিয়ায় এমন ঢঙ্গে সে সাফল্য যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাতে মনে হয় যে ধোনি একাই বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন। একই রকমভাবে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্বটা শুধু কপিল দেবকে দেওয়া হয়। অথচ ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে আরও অনেক ক্রিকেটারের অবদান আছে। প্রায় ৪ দশক আগের সেই সংস্কৃতি এখনো চলমান। আগে ধোনি ছিল, এখন বিরাট কোহলিকে নিয়ে ব্যক্তি পূজা হয়।’

ads

বিরাট কোহলিকে নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আফগানিস্তান ম্যাচে সেঞ্চুরি করে বিরাট ১০২০ পর সেঞ্চুরি পেয়েছে। এটা অবশ্যই স্বস্তির। কিন্তু সে ম্যাচেই কিন্তু আরেকজন দুর্দান্ত বোলিং করে ৫ উইকেট নিয়েছিল। অথচ সেই ভুবি পড়ে রইলো আড়ালে। কিন্তু তাকে নিয়েও সমান আলোচনা, প্রশংসা হওয়াটা উচিত ছিল। কিন্তু মিডিয়া থেকে সবাই পড়ে রইল কোহলির বন্দনায়। এই ব্যাপারগুলোই দলের মধ্যে অসমতা তৈরি করে। ড্রেসিং রুমে ভারত দলটাই একটা মনস্টার, এখানে একজনকে মনস্টার তৈরি করা ঠিক না। ২/৩ জনকে নিয়ে ভারত দলটা চলে না, ড্রেসিংরুমের ১৫ জনকে একটা ভারত দল চলে। সবার অবদান আছে। আর ব্যক্তি ইমেজে যে ব্র্যান্ড তৈরি হয় সেটা মিডিয়া তৈরি করে অন্য কেউ না।’

এই ব্যক্তি পূজা কারা তৈরি করে এমন প্রশ্নে গৌতম গম্ভীর বলেন, ‘এটা দুই ভাবে তৈরি হয়। প্রথমত সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ার্স দ্বারা। আর এটাই সম্ভবত সবচেয়ে ফেক ব্যাপার যে, নিজের ফলোয়ার দ্বারাই একজন ক্রিকেটারে ক্রিকেট স্বত্ত্বা যাচাই করা হচ্ছে। আর আরেকটি কারণ হলো মিডিয়ার কাভারেজ। প্রতিনিয়ত এক জনকে নিয়ে কথা বললে একটা সময় সেটিতো ব্যক্তিপূজাই তৈরি করে।’

এমন বক্তব্যে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়াই পেয়েছেন গৌতম গম্ভীর। অনেকে মনে করছেন গৌতম গম্ভীর যথার্থই বলেছেন। আবার অনেকে মনে করছেন এটা নিশ্চিতভাবেই গৌতম গম্ভীর নিজের ঈর্ষা থেকে এ কথাগুলো বলেছেন। তবে এটা ঠিক যে, ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার পর ধোনি যেমন লাইম লাইট পেয়েছেন তার সামান্য অংশও পাননি গৌতম গম্ভীর।

অথচ, দুই ফাইনালেই দলের সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটার ছিলেন তিনি। ২০০৭ এর ফাইনালে তিনি খেলেছিলেন ৭৫ রানের ইনিংস আর ১১ এর ফাইনালে আউট হয়েছিলেন সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে থাকতে। কিন্তু এরপরও তেমনভাবে কখনোই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পারেননি গম্ভীর। সব সময়ই ধোনিকে নিয়ে মিডিয়ার উচ্ছ্বাসের আড়ালে ব্রাত্য হয়েই ছিলেন তিনি। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link