More

Social Media

Light
Dark

রিফিউজি ক্যাম্প থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে

মাত্র ১৮ বছর বয়সেই সুযোগ পেয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবে খেলার, জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপাও। এবার ফ্রান্সের বিশ্বকাপ দলেও জায়গা করে নিয়েছেন নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই। অথচ এই পর্যায়ে উঠে আসতে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর এক পথ। রিফিউজি ক্যাম্প কিংবা আশ্রয়হীন পরিস্থিতি থেকে আজকের এডুয়ার্দো কামাভিঙ্গা হওয়ার যাত্রাটা যে মোটেই সহজ ছিল না।

২০০২ সালে অ্যাঙ্গোলার ক্যাবিনা নামের এক আশ্রয় শিবিরে জন্ম কামাভিঙ্গার। চারিদিকে যুদ্ধ আর মৃত্যুর মিছিলে যেন এক টুকরো ফুল হয়েই আগমণ তাঁর। মাত্র দুই বছর বয়সে থাকাকালীন সময়েই তাঁকে নিয়ে অ্যাঙ্গোলা ছাড়েন তাঁর পিতা-মাতা। আশ্রয় নেন ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী গ্রাম ফুজিয়ার্সে, নিকটতম শহর রেনেস যেখান থেকে ছিল প্রায় ৫০ কিমি দূরে। সেখানেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করে তাঁর পরিবার।

কামাভিঙ্গার মা সবসময় চাইতেন তাঁর সন্তান যেন খেলাধুলা করে। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের পাশাপাশি জুডোতে আগ্রহী করতে তোলবার জন্য তিনি কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু ভাগ্যে লিখা ছিল অন্যরকম, সাত বছর বয়সে কামাভিঙ্গাকে স্থানীয় ফুটবল একাডেমিতে নিয়ে যান তাঁর বাবা। সেখানে বল পায়ে তাঁর দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান কোচরা, কেউ ভাবতেও পারেননি প্রথমবারের মতো ফুটবল পায়ে মাঠে নেমেছে পুঁচকে শিশুটা। সেই থেকে শুরু, আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কামাভিঙ্গাকে।

ads

বয়সভিত্তিক দল আর স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলোতে আলো ছড়িয়ে নজরে আসেন ফরাসি লিগের দল রেনেসের। তাঁরা তাঁদের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে আমন্ত্রণ জানায় কামাভিঙ্গাকে। সবকিছু যখন ধীরে ধীরে সামলে উঠছে কামাভিঙ্গা ও তাঁর পরিবার, সেই সময়ে ঘটে যায় বড় এক দুর্ঘটনা। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় তাঁদের বাড়ি এবং মূহুর্তের মাঝেই তাঁদের পরিবার পরিণত হয় কপর্দকশূন্য অবস্থায়।

যদিও স্থানীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সাহায্য করেছিল তাঁদের। সবাই হাল ছাড়লেও ভেঙে পড়েননি তাঁর বাবা, প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়ে গেছেন নিজের ছেলেকে। জীবনের সেই সময়টাই আরো পরিণত করে তুলেছেন কামাভিঙ্গাকে।

বাবার উৎসাহেই আবারো ট্রেনিংয়ে ফেরত আসেন কামাভিঙ্গা। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি ছিলাম পরিবারের একমাত্র আশা। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে পরিশ্রম করতে শুরু করেছিলাম।’

পরিশ্রম বৃথা যায়নি তাঁর, রেনেসের হয়ে আলো ছড়ানোর সময়ই নজরে আসেন ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের। জিদান তখন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ, তিনিই ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কামাভিঙ্গাকে দলে ভেড়ান। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়ে এই মিডফিল্ডারের।

কামাভিঙ্গার সবচেয়ে বড় গুণ তিনি পুরো নব্বই মিনিট সমানতালে খেলে যেতে পারেন। হয়তো দু:সহ শৈশবের কারণেই হাল না ছাড়া মানসিকতা তাঁর মজ্জাগত। প্রতিপক্ষের কাছে থেকে বল কেড়ে নেবার পাশাপাশি নিজেও সামনে এগিয়ে যেতে পছন্দ করে। বক্সের বাইরে দুরন্ত গতির সব শটে গোল করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। লস ব্লাংকোসদের হয়ে দারুণ পারফর্ম করার সুবাদে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম গত বছরই তাঁকে জাতীয় দলে ডেকে নেন। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই গোল করেছিলেন এই মিডফিল্ডার।

এবারের বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে থাকবেন না ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের দুই কান্ডারি পল পগবা এবং এনগোলো কান্তে। এই দুই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডারের অনুপস্থিতিতে কামাভিঙ্গার কাঁধে তাই বড় দায়িত্ব। তুলনামূলক অনিভজ্ঞ অরিলিয়ের শুয়ামেনি এবং ইউসুফ ফোফানাকে নিয়ে মাঝমাঠে নেতৃত্বের ব্যাটনটা তুলে নিতে হবে তাকেই।

১৯৬২ সালের ব্রাজিলের পর বিশ্বকাপ ধরে রাখতে পারেনি কোনো দেশই। এবারের বিশ্বকাপের ফ্রান্স সেই অপ্রতিরোধ্য ব্রাজিলের পুনরাবৃত্তি করতে চাইলে কামাভিঙ্গাকেই নিতে হবে ত্রাতার ভূমিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link