More

Social Media

Light
Dark

বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার এখন ভিখারি

জীবন একটা নদীর মত; কখনো সেই নদীতে জোয়ার আসে, আর কখনো ভাটার টান দেখা যায়।আর তাই জীবনে যেমন রয়েছে উত্থান তেমনি আছে পতনও। অনিশ্চিত ভাগ্যের ছোঁয়ায় কেউ হয়তো হুট করেই পেয়ে যান অর্থ খ্যাতি, আবার কেউ ভাগ্যের পরিহাসে বনে যান পথের ফকির। এমনই একজন দুর্ভাগা কানাডিয়ান ফুটবলার পল জেমস।

১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করা পল জেমসের এখন বয়স প্রায় ষাটের ঘরে। ফুটবল ছেড়েছেন অনেকদিন আগেই। কিন্তু অন্য অনেক সাবেক ফুটবলারের মত রাজসিক জীবন নয়, তাঁকে বেছে নিতে হয়েছে ভিক্ষা বৃত্তির পেশা। লন্ডনের রাস্তায় এখন মানুষের দয়াদাক্ষিণ্য প্রার্থনা করে বেড়ান তিনি। এমনকি গত ছয় বছর ধরে নিজের কোন স্থায়ী আশ্রয়টুকুও নেই জেমসের।

ওয়েলশে জন্মগ্রহণ করলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে কানাডার প্রতিনিধিত্ব করেছেন পল জেমস। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে কানাডিয়ান জাতীয় দলের হয়েই খেলেছিলেন তিনি।

ads

সবমিলিয়ে নিজের ক্যারিয়ারে ২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এই ফুটবলার অবসরের পর কানাডা অনূর্ধ্ব ২০ দলের কোচের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। কিন্তু গত তেরো বছর ধরে বেকার সাবেক এই ফুটবলার; করোনা মহামারির আগে জীবন বদলের লক্ষ্যে কানাডা ছেড়ে ইংল্যান্ডে এলেও ঘোরেনি ভাগ্যের চাকা।

কেন এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে পল জেমসের জীবনে সেই উত্তর লুকিয়ে আছে তাঁর মাঝেই। প্রচণ্ড মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার কারণেই মূলত অর্থসম্পদ হারিয়ে পথে বসেছেন তিনি। এই মিডফিল্ডার নিজেই স্বীকার করেছেন সেটা।

একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন মাদক কিভাবে তাঁর থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। অতিরিক্ত কোকেইন গ্রহণের ফলে পল জেমসের নামের পাশে পড়েছিল কলঙ্কের ছাপ, আর এজন্য চাকরি হারিয়েছেন বলে মনে করেন এই ফুটবলার।

একটি সাক্ষাৎকারে অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করে পল জেমস বলেন, ‘আমার ফুটবল ক্যারিয়ারই ছিল সবকিছু। আমাকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া মোটেই উচিত নয়। আমি যদি আগামীকাল আমার জীবন শেষ করে দিই, যা আমি করব না, লোকেরা বুঝবে কারণ এটি কতৃপক্ষের নিষ্ঠুরতা।’

এছাড়া পল জেমস মনে করেন কাউকে মাদকাসক্ত, কোকেন আসক্ত বা জাঙ্কি ইত্যাদি বলা উচিত নয়। তাঁর মতে শব্দগুলো যথেষ্ট অযৌক্তিক। শুধু তাই নয়, এই ধরনের শব্দ যাদের জন্য ব্যবহার করা হয় তাদেরকে অপরাধী, ভীতিকর, অবিশ্বস্ত, রোগাক্রান্ত, নোংরা, অলস হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কতৃপক্ষের এমন মনোভাবের কারণেই আজ এমন দুরবস্থায় পড়তে হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

পল জেমস বলেন, ‘আপনি বুঝতে পারছেন যে, এমন মনোভাব কতটা জঘন্য? আপনি কিভাবে একটি গৃহহীন মাদকাসক্ত উপাধি পাওয়ার পর সেটি দূর করবেন? আমার তো মনে হয় কেউই পারবে না সেটা।’

পৃথিবীর অনেক দেশেই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ স্লোগান প্রচলিত রয়েছে। আর এটি মেনে সেসব দেশগুলো নেশাজাতীয় পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় এবং নির্মুল করা হয়। তবে এমন কিছুকে ভ্রান্তিকর বলেই দাবি করেছেন পল জেমস।

সাবেক এই ফুটবলারের বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয় না, জড় বস্তুের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করা সম্ভব হবে? বরং যুদ্ধ হয় মানুষের বিরুদ্ধে। নেশার দুনিয়ায় ঢুকে পড়া মানুষদের উপর কলঙ্কের ছাপ লাগিয়ে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। আর এই যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি এসব হচ্ছে। তাদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়, বর্জন করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই দারিদ্র্য একসময় গ্রাস করে নেয় এসব মানুষদের।’

পল জেমস যেমনটাই ভাবেন না কেন, মাদক জাতীয় পণ্যের প্রতি ইতিবাচক ধারণা কখনো তৈরি করা উচিত নয়। পৃথিবীর সব জাতির জন্যই এটি ক্ষতিকর – শারিরীক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে। তিনি নিজেও যদি নেশায় ডুবে না যেতেন তাহলে হয়তো অনেক কিংবদন্তি কোচদের সাথে তাল মিলিয়ে দল পরিচালনা করতে পারতেন। একমাত্র মাদকই তাঁর ধ্বংস ঢেকে এনেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link