More

Social Media

Light
Dark

গন্তব্যহীন যাযাবর আমি

‘চল্লিশেই চালসে’, কথাটার সাথে এখনকার মানুষেরা খুব একটা সহমত পোষণ করবে না।

অনেকের জীবনই যে শুরু হয় ৪০-এর পরে। কিন্তু খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এই কথাটা বেশ সত্য। একজন খেলোয়াড়ের খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হয়ে যায় ৪০-এর পরেই। আর সেই হিসেবে একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার খুব বেশি হলে চলে ২০ থেকে ২৫ বছর। এই সময়ে কয়টি ক্লাবের জার্সি গায়ে জড়াতে পারেন একজন? ৫ টি, ৬ টি? কেউ কেউ তো আবার এক ক্লাবেই শেষ করে দেন পুরো ক্যারিয়ার।

‘জার্নিম্যান ফুটবলার’ কনসেপ্টটা নতুন কিছু নয় ফুটবল বিশ্বে। ভালো অফার পেলে এক ক্লাব ছেড়ে অন্য ক্লাবে ভেরা নতুন কিছু নয়। বরং নতুন ক্লাবে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে চাওয়া খেলোয়াড়ের অভাব নেই। এক ক্লাব থেকে অন্য ক্লাবে যেতে যেতে রেকর্ড গড়ে ফেলেন অনেকে। ফুটবল ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক ক্লাবে খেলা খেলোয়াড়দের সম্পর্কে জানা যাক। বলা বাহুল্য এই লিস্টে শুধু পেশাদার লিগে খেলা খেলোয়াড়দের ধরা হয়েছে। অনেক খেলোয়াড়ই রয়েছেন যারা অপেশাদার লিগে অনেক ক্লাবে খেলেছেন, তাঁদেরকে মূল তালিকায় রাখা হয়নি।

ads
  • অ্যান্ডি কোল: (১২ ক্লাব)

অ্যান্ডি কোলের প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল আর্সেনালের জার্সিতে। কিন্তু আর্সেনালের হয়ে অভিষেকের পর আর কখনোই সে জার্সি গায়ে চড়ানো হয়নি তার। বরং ধারে যোগ দেন ফুলহ্যাম, এরপর ব্রিস্টল সিটিতে।

নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের হয়ে এক মৌসুমে ৩৪ গোল ১২ অ্যাসিস্ট করে নজর কাড়েন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। এরপরের আট মৌসুম কাটান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে। সেখানেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি পান কোল। ৫ প্রিমিয়ার লিগ ট্রফির সাথে ছিল ১২১ গোল। ছিলেন ট্রেবলজয়ী ইউনাইটেড দলের সদস্যও।

২০০১ সালে ইউনাইটেড ছেড়ে যোগ দেন ব্ল্যাকবার্নে। এরপর একে একে ফুলহ্যাম, ম্যানচেস্টার সিটি, পোর্টসমাউথ, সান্ডারল্যান্ড, বার্মিংহ্যাম সিটি, বার্নলি, নটিংহ্যাম ফরেস্টের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু ইউনাইটেডের মতন সাফল্য আসেনি তার ক্যারিয়ারে। অবশেষে ২০০৯ সালে ফুটবল জার্সি আজীবনের মতো তুলে রাখেন তিনি।

  • ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরি: (১২ ক্লাব)

ইতালিয়ান লিগের অন্যতম ডেকোরেটেড স্ট্রাইকারের তালিকায় সবার উপরে নাম থাকবে ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরির। বিশ্বকাপের জয়েন্ট হায়েস্ট স্কোরার, দুই লিগের সেরা গোলদাতা ভেরিকে এই তালিকায় দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ানো ভিয়েরি ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন মোট ১২ ক্লাবে। বেশিরভাগই অবশ্য ইতালির ভেতরেই।

ভিয়েরির অভিষেক হয়েছিল তোরিনোর জার্সিতে। সেখান থেকে এক মৌসুম করে খেলেছেন পিসা, র‍্যাভেনা, ভ্যানেজিয়া, আতালান্তা, জুভেন্টাস, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, লাৎজিওতে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৮ বছরে ৮ ক্লাবের জার্সি গায়ে হড়িয়ে ভেরির মনে হলো নাহ, এবার থিতু হওয়া যাক। ১৯৯৯ সালে এসে ইন্টার মিলানে থিতু হন ভেরি। সেখানে ১৯০ ম্যাচে ১২৩ গোল করে খ্যাতি পান বিশ্বজুড়ে।

কিন্তু, ২০০৫ সালে ইন্টার ছাড়ার পর থেকে আবার শুরু হয় বেদুইনের জীবন। এরপর থেকে এক মৌসুম করে খেলেছেন এসি মিলান, মোনাকো, আতালান্তা, ফিওরেন্তিনায়। শেষমেষ ২০০৯ সালে এসে আতালান্তায় নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ভেরি। শেষ হয় তার ক্লাবে ক্লাবে ঘুরে ঘুরে বেদুইনের জীবন।

বলা বাহুল্য কোনো ক্লাবে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাপারটা এমন নয়, বরং যেখানেই গিয়েছেন নাম অনুযায়ী পারফরম্যান্স দিয়েছেন। কিন্তু ইন্টার বাদে কোনো ক্লাবেই আর থিতু হয়ে উঠা হয়নি। ভিয়েরি সেই বিশেষ কয়েকজন খেলোয়াড়ের একজন, যারা ইতালির বড় তিন ক্লাব (ইন্টার, মিলান, জুভেন্টাস) এর জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন গায়ে।

  • মার্কাস বেন্ট: (১৪ ক্লাব)

তালিকায় এ পর্যায়ে এসে একটু অপরিচিত খেলোয়াড়কে পরিচয় করিয়ে দিতে হচ্ছে। ইংলিশ খেলোয়াড় মার্কাস বেন্টের পরিসংখ্যান খুব একটা খারাপ না। ৫৭৩ ম্যাচে ১০০ গোল করা বেন্ট খেলেছেন মোট ১৪ ক্লাবে। একটি বাদে যার সবগুলোই ইংলিশ লিগে। এবং তিনি এই তালিকায় একমাত্র অবসর না নেওয়া খেলোয়াড়।

বেন্টের অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৫-৯৫ মৌসুমে বেন্টফোর্ডের হয়ে। তিন মৌসুম সেখানে কাটিয়ে পাড়ি দেন ক্রিস্টাল প্যালেসে। সেখান থেকে শুরু হয় ক্লাব থেকে ক্লাব ঘোরার সূচনা। ক্রিস্টাল প্যালেস, পোর্ট ভেইল, শেফিল্ড ইউনাইটেড, ব্ল্যাকবার্ন, ইস্পউইচ টাউন, লেস্টার, এভারটন, চার্লটন, উইগান, বার্মিংহ্যাম, মিডলসব্রো, কিউপিআর, উলভস, শেফিল্ড।

১৫ বছর ইংলিশ লিগে কাটানোর পর ২০১২ সালে ইংল্যান্ড ছাড়েন বেন্ট। যোগ দেন ইন্দোনেশিয়ান ক্লাব মিত্রা কুক্যারে। সেখানে এক মৌসুম খেলেই ফুটবল ছাড়তে হয় তাকে। তার নামে মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগ আসে। যে কারণে ৫ বছর ফুটবল থেকে দূরে থাকেন তিনি। ২০১৭ সালে এসে আবারও ফুটবলে যোগ দেন বেন্ট। এখনও খেলছেন কনকার্ড ইউনাইটেডের হয়ে। কিন্তু সেগুলো পেশাদার লিগ না হওয়ায় তা রাখা হয়নি এই তালিকায়। রাখা হলে মোট ১৬ ক্লাব হতো সবমিলিয়ে।

  • রিভালদো: (১৫ ক্লাব)

এই তালিকার সবচেয়ে বড় তারকা সম্ভবত রিভালদো। সম্ভবত নয়, অবশ্যই। ব্রাজিলের জার্সিতে বিশ্বকাপ জেতা রিভালদো ছিলেন ব্রাজিলের বিখ্যাত ‘ট্রিপল আর’ ট্রিওর একজন। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, স্ট্রাইকার এমনকি উইংইয়েও ছিল তার সমান দক্ষতা। ২০০২ বিশ্বকাপজইয়ী তারকাও খেলেছেন মোট ১৫ টি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে।

১৫ ক্লাবের মধ্য সবচেয়ে স্বরণীয় হয়ে আছে তার বার্সায় কাটানো ৫ বছর। এই ৫ বছরেই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হয়ে উঠেছিলেন রিভালদো। তবে এই বার্সা ছিল তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ক্লাব। রিভালদোড় অভিষেক সান্তা ক্রুজের হিয়ে। এরপর মোগি মিরিম, করিন্থিয়ান্স, পালমেইরাস ঘুরে এসেছিলেন স্পেনে। স্পেনে ১ মৌসুম দেপোর্তিভো লা করুনার হয়ে চমক দেখিয়ে জায়গা করে নেন বার্সা দলে। ক্রুইসের বার্সার জার্সিতে সব জিতে পারি দেন ইতালির এসি মিলানে।

একে একে খেলেছেন গ্রিক, তুর্কি, উজবেকিস্তান, অ্যাঙ্গোলার লিগেও। শেষ পর্যন্ত ছোটবেলার ক্লাব মোগি মিরিমের জার্সিতে ২০১৫ সালে ইতি টানেন তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের।

  • জন ব্যারিজ: (২৯ ক্লাব)

সংখ্যা দেখেই ভড়কে যাচ্ছেন? ভড়কে যাবেন না। তার ক্যারিয়ারটাও ছিল তার ক্লাব সংখ্যার সমান, ২৯ বছরের। পুরো ক্যারিয়ারই তিনি কাটিয়েছেন ইংল্যান্ডে। খেলেছেন ইংল্যান্ডের বড় বড় দলগুলোতেও। ব্যারিজ ছিলেন আশির দশকের খেলোয়াড়। যার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ওয়ার্কিংটনের হয়ে। সবচেয়ে বেশি সময় খেলেছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দল ব্ল্যাকপুলের হয়ে। খেলেন ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ১৩১টি ম্যাচ।

সেখান থেকে অ্যাস্টন ভিলা, সাউদেন্ড ইউনাইটেড, ক্রিস্টাল প্যালেস, কিউপিআর, উলভারহ্যাম্পটন, ডার্বি কাউন্টি শেষে আবার থিতু হন শেফিল্ড ইউনাইটেডে। সাখানে ৩ মৌসুম কাটিয়ে আবার শুরু হয় ইংলিশ লিগে যাত্রা। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত ২ বছর করে ছিলেন সাউদাম্পটন, নিউক্যাসল ও হাইবারনিয়ানে।

এরপর তার ক্যারিয়ার হয়ে যায় মিউজিক্যাল চেয়ার, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭; ৪ বছরে খেলেছেন মোট ১৪ ক্লাবে। কোনো ক্লাবেই স্থায়ী হতে পারা দূরে থাক, ৫ টি ম্যাচও খেলেননি তিনি। স্কারবোরো, লিংকন সিটি, এনফিল্ড, অ্যাবারডিন, নিউক্যাসল, ডানফার্মলিন অ্যাথলেটিক, ডাম্বারটন, ফালকার্ক, ম্যানচেস্টার সিটি, নটস কাউন্টি, উইটন অ্যালবিয়ন, ডার্লিংটন, গ্রিমসবি টাউন, গেটসহেড, নর্দাম্পটন টাউন, কুইন অফ দ্য সাউথ, পারফ্লিট এবং ব্লিথ স্পার্টান। মূলত ছিলেন দলের ব্যাক-আপ কিংবা ব্যাক-আপের ব্যাক-আপ।

১৩টি ক্লাবের জার্সি গায়ে চড়ানোর সৌভাগ্যই হয়নি তাঁর। সেগুলো বাদ দিলেও সবার উপরে থাকেন তিনি। ১৯৯৫ সালে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে মাঠে নেমে গড়েছিলেন প্রিমিয়ার লিগে খেলা সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়ের রেকর্ড।

১৯৯৭ সালে প্লেয়ার-ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন ব্লিথ স্পার্টানে। সেখানেই খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানেন তিনি। ফুটবল ইতিহাসে সম্ভবত এই একটা রেকর্ড, যা লোকের ধরা ছোয়ার বাইরে।

বলা বাহুল্য এখানে অপেশাদার লিগের খেলোয়াড়দের ধরা হয়নি। কারণ একজন খেলোয়াড় চাইলে এক মৌসুমে দুই কিংবা তিনটি অপেশাদার লিগের দলের হয়ে নাম লেখাতে পারেন। এতে করে তাদের ক্লাব সংখ্যাও বাড়ে হু হু করে। সেক্ষেত্রে ট্রেভর বেঞ্জামিনের ২৯, রিচার্ড পাক্যুয়েতের ৩২ টি, জেফারসন লুইসের ৩৮ ক্লাবে খেলার রেকর্ডকেও গোণায় আনতে হবে। যা পেশাদার লিগে খেলা খেলোয়াড়দের জন্য টেক্কা দেওয়া বেশ কঠিনই বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link