More

Social Media

Light
Dark

অভিবাসীদের অভ্যুত্থান

প্রতিটি বিশ্বকাপই জন্ম দেয় নতুন তারকার। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেই দারুণ সব গোল করে আলোচনায় এসেছেন বেশ কয়েকজন স্ট্রাইকার। অভিবাসী হিসেবে জীবন শুরু করলেও তাঁরা থেমে থাকেননি, বরং বিশ্বকাপের মঞ্চে জানান দিয়েছেন নিজের প্রতিভার। আসুন দেখে নেয়া যাক, প্রথম রাউন্ডে গোল করা ফুটবলারদের যারা কিনা প্রতিনিধিত্ব করছেন জন্মভূমি নয়, বরং তাঁদের ‘পালক’ দেশের।  

  • বুকায়ো সাকা – ইংল্যান্ড

আর্সেনালের ঘরের ছেলে বনে যাওয়া বুকায়ো সাকা এবারের মৌসুমে আছেন দারুণ ফর্মে। বিশ্বকাপেও প্রথম ম্যাচে করেছেন জোড়া গোল। ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেললেও সাকার পূর্বপুরুষের ভিটা নাইজেরিয়াতে।

ads

উন্নত জীবনের আশায় সাকার জন্মের আগেই লন্ডনে নিবাস গড়েন তাঁর বাবা-মা। মজার ব্যাপার হল সাকা নামটা এসেছে নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইয়ুরুবা গোত্রের অধিবাসীদের থেকে। 

  • রাহিম স্টার্লিং – ইংল্যান্ড

 

জ্যামাইকার কিংস্টনে জন্ম হলেও মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই লন্ডনে স্থানান্তরিত হন রাহিম স্টার্লিংয়ের পরিবার। একদম ছোট বয়সে থাকাকালীন সময়ে স্টার্লিংয়ের বাবা এক অ্যামবুশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

ফলে তাঁর মাকেই দায়িত্ব নিতে হয় ছোট্ট স্টার্লিং এবং তাঁর ছোটবোন লাকিমার ভরণপোষণের। লিভারপুল দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ম্যানচেস্টার সিটি ঘুরে স্টার্লিং বর্তমানে খেলছেন চেলসিতে। ক্যারিয়ারে নানা উত্থান-পতন আসলেও ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট বরাবরই ভরসা রেখেছেন তাঁর উপর। 

  • মার্কাস রাশফোর্ড – ইংল্যান্ড

ক্যারিয়ারের একদম শুরু থেকেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকদের নয়নের মণি মার্কাস রাশফোর্ড। ফুটবল মাঠে দারুণ পারফরম্যান্সের পাশাপাশি নানা সেবামূলক কর্মকান্ডেও অংশ নিতে দেখা যায় এই তারকাকে।

করোনা মহামারীর সময়ে গরীব শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন রাশফোর্ড। সতীর্থ রাহিম স্টার্লিংয়ের মত তাঁর পরিবারের আদিনিবাসও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। তাঁর দাদির পরিবারের আবাসস্থল সেন্ট কিটস এন্ড নেভিসে। জাতীয় দলে একাদশের নিয়মিত মুখ না হলেও সুপার সাব হিসেবে নেমে ম্যাচের চিত্রনাট্য পাল্টে দিতে সক্ষম এই তরুণ। 

  • টিমোথি উইয়াহ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

আফ্রিকান ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহ। প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র আফ্রিকান ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, নির্বাচিত হয়েছেন লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র দু:খ ছিল বিশ্বমঞ্চে খেলতে না পারা।

তবে সেই দু:খ ঘুচিয়ে দিয়েছেন তারই ছেলে টিমোথি উইয়াহ। জাতীয় দলের জার্সি বদলে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বিশ্বকাপ অভিষেকেই গোল পেয়েছেন এই তরুণ স্ট্রাইকার। জর্জ উইয়াহর ব্যালন জেতার পাঁচ বছর পর ব্রুকলিনে জন্ম টিমোথির। চারটি দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থাকলেও জাতীয় দলের প্রশ্নে টিমোথি বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকেই।

  • কিলিয়ান এমবাপ্পে – ফ্রান্স

আফ্রিকান ফুটবল প্রতিভাদের মিলনমেলা যেন ফ্রান্স। আর সেই ফ্রান্স দলের মূল তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। গত বিশ্বকাপে সেরা তরুণ ফুটবলারের পুরষ্কার জেতার পাশাপাশি ফ্রান্সকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ ট্রফি। পেলের পর দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে পেয়েছেন গোলের দেখা। এমবাপ্পের জন্য কাতার বিশ্বকাপ তাই অমরত্ব লাভের। অথচ ফ্রান্সের হয়ে খেলারই কথা ছিল না তাঁর।

এমবাপ্পের বাবা ছিলেন ক্যামেরুনের এবং তাঁর মা ফাইজা লামারি ছিলেন আলজেরিয়ার হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। ফলে প্যারিসে জন্ম নিলেও এমবাপ্পের সামনে সুযোগ ছিল তিন দেশের যেকোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করার। ভাগ্যিস তিনি ফ্রান্সকেই বেছে নিয়েছিলেন!

  • এলকাই গুন্ডোগান – জার্মানি

১৯৯০ সালে গেলসেঙ্কিরচেনের তুর্কিশ পরিবারে জন্ম জার্মান মিডফিল্ডার এলকায় গুন্ডোগানের। তাঁর দাদা তুরস্কের বালিকশেইর শহর থেকে জার্মানিতে চলে আসেন খনিশ্রমিক হিসেবে। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে তাঁর বাবা এরফানসহ পরিবারেরই সকলেই চলে আসেন জার্মানিতে। সেখানেই ফুটবলার হিসেবে বেড়ে ওঠা এবং ক্যারিয়ার শুরু গুন্ডোগানের।

  • মিচি বাতশুয়াই – বেলজিয়াম

পিতা-মাতার আদিনিবাস হওয়ার সুবাদে বেলজিয়ামের স্ট্রাইকার মিচি বাতশুয়াইয়ের সামনে সুযোগ ছিল কঙ্গোর হয়ে খেলার। ১৯৯৩ সালে ব্রাসেলসে জন্ম নেয়া বাতশুয়াই এমনকি ২০১৩ সালে কঙ্গোর প্রাথমিক দলেও ডাক পেয়েছিলেন।

কিন্তু, এর আগেই বেলজিয়ামের বয়সভিত্তিক দলে খেলে ফেলা বাতশুয়াই সেই ডাক উপেক্ষা করে জানিয়ে দেন তিনি জাতীয় পর্যায়ে কেবল বেলজিয়ামের হয়েই খেলতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link