More

Social Media

Light
Dark

কপিল এবং ফিল্ডিং, একটি আন্ডাররেটেড আলোচনা

‘…the Indian Skipper has done a tremendous job to get back there ……marvellous running catch…’

গত শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচের ভিডিওর সঙ্গে সঙ্গে ধারাভাষ্যকারের এই বাক্যাংশটি যে কতবার শুনেছি তার লেখাজোখা নেই। আপনারাও নি:সন্দেহে দেখেছেন ও শুনেছেন। কপিলের ক্যাচটি অসাধারণ ছিল এ বিষয়ে সন্দেহ না থাকলেও আজকের ফিল্ডিঙের নিরিখে এটা বলাই যায় যে এই ধরনের ক্যাচ ধরাটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের কাছে প্রত্যাশিত।

সুতরাং, ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং – বোলিঙের পাশাপাশি যে ফিল্ডার কপিলও জাদেজা – যুবরাজ – কাইফ – আজহারের সমগোত্রীয় তার প্রমাণ কি এই ক্যাচের ভিডিও ছাড়া আরও কোথাও রয়েছে? সেই বিষয়ে আলোচনার জন্যেই এই লেখা।

ads

ব্যাটিং – বোলিংয়ের ক্ষেত্রে যেমন সংখ্যা দিয়ে ক্রিকেটারের গ্রেটনেসের কিছুটা ধারণা করা যায়, ফিল্ডিং বিশেষ করে আউট ফিল্ডিঙের ক্ষেত্রে তা প্রায় অসম্ভব। সুতরাং ভরসা কিছু পুরনো ভিডিও এবং সে সময়ের ক্রিকেটার / দর্শকদের অভিজ্ঞতা।

নিজের ক্যারিয়রের সিংহভাগ সময় কপিল আউট ফিল্ডে ফিল্ডিং করতেন। এবং আজাহার আসার আগে দলের সেরা ফিল্ডার হওয়ার দরুন তিনি এমন জায়গায় ফিল্ডিং করতেন যেখানে বল যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকত। আজকালকার ফাস্ট বোলারদের মতো আন্ডার আর্ম বল ছুঁড়তে কোনদিন দেখি নি কপিলকে।

বরং, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিরমানি বা মোরের পেতে রাখা গ্লাভসে সশব্দে আছড়ে পড়ত কপিলের ছোঁড়া বল, কিপারকে নিজের গ্লাভস সরাতে হত না এক চুলও। কপিলের কাছে ক্যাচ ওঠা মানে আপনি ১০০% নিশ্চিত থাকতে পারেন যে সেটি ধরা হবে। হ্যাঁ, ভিভের ঐ ক্যাচ ১০০ বারের মধ্যে ১০০ বারই ধরতেন কপিল।

হয়ত তাই যখন সবাই ওনাকে সেই ক্যাচ নিয়ে আজ প্রশ্ন করে, তাকে একটু বিব্রতই দেখায়। ভাবখানা, এই ক্যাচ ধরার জন্যে এত মাতামাতি কীসের? পরবর্তী কালে ভিভকেও বলতে শোনা গেছে, যখনই তিনি দেখলেন যে ক্যাচ ধরার জন্যে কপিল ছুটছেন, তিনি বুঝে গেছিলেন তাকে এবার প্যাভিলিয়নে ফিরতে হবে।

আরও কিছু প্রমাণ খুঁজলে পাবেন ইউ টিউবে। একটা যেমন ‘Nail Biting Thriller’ ক্যাপশনে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের ম্যাচ। কপিলের বলে হ্যাডলি বোল্ড হওয়ায় শেষ অব্দি এক রানে ম্যাচটা জেতে ভারত। এবং সেই একটি রান বাঁচানোর কৃতিত্ব কপিলেরই – চিতাবাঘের ক্ষিপ্রতায় সীমানার ধারে পা দিয়ে বল থামিয়ে একটা নিশ্চিত চার আটকে দেন কপিল।

দেখলাম একজন লিখেছেন, তখন হামেশাই ছুটে চার রান নিতেন ব্যাটসম্যানরা। না, নিতেন না। এবং ফিল্ডারের নাম কপিল দেব হলে নেওয়ার কথা চিন্তাও করতেন না।

আরও একটা ভিডিও কথা বলি। ‘Top Wicket Taker 1985/86 World Series Cup – All 20! Plus Three Mega Run Outs.’ দেখে ফেলুন। কতগুলি দুরন্ত আউট স্যুইং – ইয়র্কারের পর তিনটি রান আউট দেখতে পাবেন। তিনটিতেই কপিলই বোলার।

স্লগ ওভারে উইকেটের সামনে বল পুশ করে খুচরো রান নেওয়ার চল তখনও ছিল, এখনও রয়েছে। কিন্তু বোলারের নাম কপিল হলে এই ধরনের প্ল্যান প্যাভিলিয়নেই ছেড়ে রেখে আসতেন বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান। কারন লম্বা লম্বা দুই তিন স্টেপে বলের কাছে পৌঁছে কপিল বলটিকে তুলে যখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন তখন তার মুখ অলরেডি নন স্ট্রাইকারের দিকে।

সেখান থেকে একটিপে উইকেট ভেঙ্গে দেওয়া তার পক্ষে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেওয়ার মতোই সহজ কাজ ছিল। এখানে মাত্র একটা টুর্নামেন্টে তিনটে রান আউট দেখতে পাবেন। অন্য কোনো বোলারের ক্ষেত্রে গোটা ক্যারিয়র জুড়েও এই কীর্তি এতবার দেখি নি। আপনাদের মধ্যে কেউ দেখিয়ে দিতে পারলে কৃতার্থ হব।

এবার শেষ ভিডিও। ‘Can the Great Kapil Dev help India Defend 113’. না, কপিল পারেন নি। তবে কিছুক্ষণের জন্যে তার আউট স্যুইং ও বাউন্স হিমস্রোত বইয়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপে। পাঁচটা স্লিপ নিয়ে একসময় বল করছিলেন কপিল।

তিনটে উইকেট, দুটো ড্রপ ক্যাচ, একটা নিশ্চিত এল বি’র আবেদন নাকচ না হলে হয়ত ভারত ম্যাচটা জিতত। কিন্তু কপিলের বোলিং নয়, আমাদের আলোচনার বিষয় তার ধরা একটা অসাধারণ ক্যাচ। চেতন শর্মার হাফ ভলিকে জোরালো শটে মিড অন এবং মিড উইকেটের মাঝখান দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে ব্যাট চালান ভারতের প্রাক্তন কোচ জন রাইট।

কিন্তু বল নয়, উড়তে দেখা গেল কপিলকে। শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে উড়ন্ত বল লক্ষ করে তার ডাইভ দিয়ে ধরা ক্যাচটি আমার দেখা সেরা ক্যাচগুলির অন্যতম। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে কপিল সাধারণত ডাইভ দিতেন না। বলা উচিৎ ডাইভ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ত না তার। দুরন্ত anticipation এর দৌলতে তিনি আগে থাকতেই বলের কাছে পৌঁছে যেতেন অনায়াসে।

পুরনো দিনের ভিডিও দেখার সময় খেয়াল করলে এরকম বেশ কিছু ভিডিও খুঁজে পাবেন কপিলের অসাধারণ ফিল্ডিং দক্ষতার (একটা যেমন ১৯৮৫র মিনি ওয়ার্ল্ড কাপে, ভারত-নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে তার ঘটানো রান আউট। সেই টুর্নামেন্টে আরও একটা রান আউটের মূল কারিগর ছিলেন কপিল। ১৯৮৩র বিশ্বকাপেও সবচেয়ে বেশি ক্যাচ কপিলই নেন।) পরবর্তী কালে স্লিপেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফিল্ডিং করতেন কপিল।

কিছুদিন আগে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের আত্মজীবনী পড়লাম। এক জায়গায় ভিশি লিখেছেন তিনি ইমরান এবং হ্যাডলিকে প্রকৃত অলরাউন্ডার মনে করেন না কারন এই দুজন ফিল্ডার হিসেবে সাধারণ মানের ছিলেন। অন্যদিকে কপিল এবং বথাম ব্যাটিং – বোলিঙের সঙ্গে ফিল্ডিঙেও দুরন্ত ছিলেন।

কিন্তু, বোথামের চেয়ে আবার অধিনায়ক কপিল বেশ খানিকটা এগিয়ে। সুতরাং ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, অধিনায়কত্ব ধরলে সম্ভবত একমাত্র স্যার গ্যারি রয়েছেন যিনি কপিলের পাশের সিটে বসতে পারেন। কিন্তু রানিং বিটউইন দ্য উইকেটও ধরলে? অথবা টেস্ট / একদিনের ম্যাচ / টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট – সব ধরনের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ধরলে?

হয়ত স্যার গ্যারি এখানেও সসম্মানে পাস করে যাবেন। আর কেউ আছেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link