More

Social Media

Light
Dark

ইনজুরিতে গ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা

পিঠ ও হাঁটুর ইনজুরি তাঁকে বিশ্ব সেরা হতে দেয়নি। এমনকি নিউজিল্যন্ড ক্রিকেট ইতিহাসেরও সেরাদের তালিকায় তাঁর নাম থাকবে না। তবুও হাতে গোনা যে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন সেখানেই প্রমাণ করেছেন যে তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার যথেষ্ট কারণ ছিল। বলা হয়, দুই দিকের স্যুইং আদায় করে নেয়া যদি একটা শিল্প হয় তাহলে সেই শিল্পের মাস্টারের নাম সাইমন ডওল।

১৯৬৯ সালে নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণের এক শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সাইমন ডউল। ছয় ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার এই পেসারকে নিয়ে নিউজিল্যান্ড স্বপ্ন দেখেছিল বেশ। তবে সাইমনও তাঁদেরই একজন ইনজুরি যাদের সেরা হতে দেয় না। তবুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ছোট্ট যেই যাত্রা, সেখানে বারবার নিজের দাগ রেখে গিয়েছেন।

১৯৯২ সালে জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য প্রথম নিউজিল্যান্ড দলে ডাক পান এই পেসার। তবে সেই সফরে নিজের ছাপ রাখতে পারেননি সাইমন। এছাড়া সেই সময়ে কিউই পেস অ্যাটাক বেশ শক্তিশালী হওয়ার কারণে দলে জায়গা হারান। বছর দু’য়েক পরে ১৯৯৪ সালে আবার নিজেকে প্রমাণ করে ফিরে আসেন নিউজিল্যান্ড দলে।

ads

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৪২ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ওই অল্প পুঁজি নিয়েও প্রথম ইনিংসে লিড আদায় করতে পেরেছিল কিউইরা। আসলে কাজটা করে দিয়েছিলেন সাইমন ডওল। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম ৫ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে আঁটকে দেন ২১৫ রানেই।

এরপর পুরো বছর ধারবাহিক পারফর্মেন্স করে যাচ্ছিলেন সাইমন। ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় দারুণ একটি সিরিজ কাটান তিনি। তিন টেস্ট ম্যাচ সিরিজে সাইমন তুলে নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট। তবে ওই সময় নিউজিল্যান্ড অধিকাংশ ম্যাচ হারায়। তাঁর এই কীর্তি গুলো নিয়ে আলোচনা হত কমই।

এরপর মাঝে ইনজুরিতে লম্বা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। কিন্তু যখনই ফিরেছেন তখনই প্রমাণ করেছেন তিনি বিশেষ কিছু। সবাইকে স্বীকার করতে বাধ্য করেছেন তিনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের সেরাদের একজন হতে পারতেন। বিশেষ করে লাল বলের ক্রিকেটে তিনি ছিলেন অদম্য।

১৯৯৮ সালে বক্সিং ডে টেস্টে ভারতের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের সেই বোলিংটাই করেন। আগে ব্যাট করতে নেমে ভারত মাত্র ১৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে। মজার বিষয় হলো, সেই সময় ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের প্রথম চারটি উইকেটই নিয়েছিলেন সাইমন ডউল।

এরপর দুই ভারতীয় গ্রেট – শচীন টেন্ডুলকার ও মোহম্মদ আজহারউদ্দিন মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তবে এবারও শচীনকে ফেরান সাইমনই। ভারতের প্রথম পাঁচ উইকেটই তুলে নেন এই পেসার।

সাইমন এরপরও থামেননি। ভারতের পরের দুই উইকেটও গিয়েছিল সাইমনের পকেটেই। এক সময় তো মনে হচ্ছিল ভারতের পুরো দশ উইকেটই তুলে নিবেন এই পেসার। শেষ পর্যন্ত ২৪ ওভার বল করে ৬৫ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। এটিই সাইমনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। নিউজিল্যান্ডের কোন বোলারেরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চতুর্থ সেরা বোলিং ফিগার।

সব মিলিয়ে ৩২ টেস্টে তাঁর ঝুলিতে আছে ৯৮ উইকেট। এর মধ্যে ছয় বার ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে। পাশাপাশি ব্যাট হাতেও আছে ৫৭০ রান। ওদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি।

তবে ব্যাট হাতে পিঞ্চ হিটার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের জন্য কয়েকটি ইনিংস খেলেছেন সাইমন। ৪২ ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ৩৬ উইকেট। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের নিউজিল্যান্ড দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।

সাইমন ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন। এরপর পিঠ ও হাঁটুর ইনজুরির কারণে আর সেভাবে মাঠে ফিরতে পারেননি তিনি। ইনজুরি না থাকলে দিব্যি হয়তো আরো কিছুদিন সার্ভিস দিতে পারতেন দলকে।

ফলে খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাইমনের পথচলা। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর অবশ্য কমেন্ট্রিতে মনোযোগ দিয়েছেন তিনি।

এখন তিনি নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় রেডিও ও টিভি কমেন্টেটর। বিশ্বের নানা প্রান্তে ধারাভাষ্য দিয়ে বেড়ান, হয়তো মনের মধ্যে ক্যারিয়ার বড় না করতে পারার আক্ষেপটা ধারাভাষ্যেই ভুলতে চান তিনি।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link