More

Social Media

Light
Dark

শূন্য গ্যালারির হতাশা, তারপরও…

বাংলাদেশের মাটিতে কোন আন্তর্জাতিক সিরিজ মানে ক্রিকেট উৎসব।

মাঠে বসে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য টিকিট নিয়ে হাহাকার। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট নামক সোনার হরিণ সংগ্রহ করার চ্যালেঞ্জ। কিন্তু দীর্ঘ ১০ মাস বিরতির পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেও মিরপুরে নেই উৎসবের আমেজ। শূন্য গ্যালারি জানান দিচ্ছে করোনা পাল্টে দিয়েছে পরিস্তিতি; বদলে দিয়েছে দৃশ্যপট।

গত নভেম্বরে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৮ হাজার দর্শক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলো বাফুফে। এই সময় বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আয়োজন করলেও দর্শক ফেরাতে আগ্রহী হয়নি। বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানিয়েছিলেন ক্রিকেটের সাথে ফুটবল মেলাতে চাননা তাঁরা। দর্শকদের মাঠে ফেরাতে আরো সময় নেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

ads

তবে যাদের নিয়ে এতো কথা, কি ভাবছেন সেই দর্শকরা?

এই সময়টা সবচেয়ে হতাশায় কাটছে সেই গ্রুপগুলোর; যারা দল বেঁধে মাঠে গিয়ে উৎসব করতেন। সেই দর্শকদের মনের অবস্থাটা জানতে আমরা কথা বলেছিলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকদের বিভিন্ন সংগঠন ও গ্রুপের প্রতিনিধিদের সাথে; যারা দেশ বিদেশে বাংলাদেশের সব খেলাতেই গ্যালারি থেকে গর্জন দেয় টাইগারদের জন্য। বিসিবির এমন সিদ্বান্তে হতাশ হলেও বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই জানিয়েছেন মাঠে যেতে না পারলেও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাতেই খুশি তাঁরা।

পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাংলাদেশ মাঠে নামুক গ্যালারিতে গর্জন দিতে দেখা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) সদস্যদের। তবে করোনার কারণে এবার মাঠে নেই বিসিএসের সদস্যরা। কস্টকর হলেও বিসিবির সিদ্বান্তকে সম্মান জানিয়ে সংগঠনটির প্রেসিডেন্টস জুনায়েদ পাইকার জানিয়েছেন মাঠে না গেলেও তাদের অফিসে দল বেঁধেই খেলা দেখবেন তাঁরা।

জুনায়েদ পাইকার বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় ছিলাম মাঠে যাওয়ার জন্য। দূর্ভাগ্যজনক যে করোনার কারণে দর্শক অ্যালাউ না। এখন বিসিএসের তো নিয়ম মানতেই হবে। যেখানে দেশের বাইরে আমরা মাঠে থাকি সেখানে অনেক কষ্টকর যে নিজের দেশে খেলা হচ্ছে আর আমরা মাঠে যেতে পারছি না। বিসিবির সিদ্বান্তকে সম্মান জানাচ্ছি। তবে আমরা দল বেঁধেই আমাদের অফিসে খেলা দেখবো।’

দেশের আরেক বৃহত্তম ক্রিকেট সমর্থকদের গ্রুপ ক্রিকেটখোর। ক্রিকেটখোরের প্রেসিডেন্ট এ.কে.এম. কাউসার বাস্তবতা মেনে নিয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মাঠে ফিরেছে তাতেই খুশি তাঁরা; মাঠে যেতে না পেরে হতাশ হলেও বাংলাদেশকে মাঠে দেখেই দূর হয়েছে সব হতাশা।

কাউসার বলছিলেন, ‘মাঠে খেলা গড়াচ্ছে, এটা এই মুহূর্তে স্বস্তিদায়ক ব্যাপার, বেশ কিছু টিম ক্রিকেট শুরু করলেও দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের খেলা দেখতে না পেরে হতাশ ছিলাম, এখন হতাশ লাগছেনা। মাঠে যেতে না পেরে কিছুটা খারাপ তো লাগছেই তবে এখন যেহেতু বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্তিতি সেক্ষেত্রে খেলা দেখতে পেরেই আনন্দ লাগছে। ক্রিকেটটা আমাদের কাছে অনেকটা অক্সিজেনের মত কাজ করে। তাই খেলা দেখতে পেরে এখন অনেকটা ভালো লাগছে।’

তবে হতাশ নয় ফ্যানস অব বাংলাদেশ ক্রিকেট – এফবিসি টাইগার্সের সদস্যরা। বিসিবির সিদ্বান্তকে সম্মান জানিয়ে সংগঠনটির পরিচালনা পরিষদ সদস্য মাসুদ রানা জানিয়েছেন তাঁরা হতাশ নয়। ঘরের মাঠে ক্রিকেট ফিরেছে এটাই স্বস্তির।

তিনি আরো বলেন, ‘এশিয়ার দেশ হিসেবে ঘরের মাঠে আমরাই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সাহস দেখিয়েছি। যদিও সীমিত পরিসরে দর্শক প্রবেশের অনুমতি দিতে পারতো তবে বছর জুড়ে ব্যস্ত সূচী, পরবর্তীতে সমস্যা ছাড়া ফ্রেশ রূপে সিরিজ আয়োজন এবং সামগ্রিক দিক বিবেচনায় বিসিবি দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেয় নাই। বিসিবির এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। হতাশার কিছু নাই, বরং দেশের মাটিতে ক্রিকেট ফিরেছে এটাই স্বস্তির যায়গা।’

বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে নিয়মিতই মাঠে দেখা যায় দৌড়া বাঘ আইলো সংগঠনকে। তবে তাঁরাও বিসিবির সিদ্বান্তকে সম্মান জানিয়েছেন। সংগঠনটির সদস্য এলাহী শুভ বলেন, ‘মাঠে ক্রিকেট ফিরেছে। আমাদের ইচ্ছে ছিলো মাঠে গিয়ে দলকে সমর্থন দেওয়া। কিন্তু করোনার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। বিসিবির সিদ্বান্তে সাধুবাদ জানাই।’

বাংলাদেশের খেলা থাকলে নিয়মিতই মাঠে যাওয়া হয় আসিফ হাসানের। তবে এবার যেতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনিও। এই টাইগার সমর্থক বলেন, ‘যখন থেকে খেলা দেখি সব সময়ই চেষ্টা করেছি মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে, সে হিসেবে সব মিলিয়ে সেঞ্চুরি হয়ে গেছে মিরপুরে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম,খুলনা,বিকেএসপি,ফতুল্লা গিয়ে খেলা দেখা হয়৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটটা এমনই আবেগ,ভালোবাসা পুরোটা জুড়েই বাংলাদেশ। তবে প্রথমবার একটু খারাপ লাগছে ইচ্ছে থাকলেও মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারছি না করোনার কারনে। তবে ভালো লাগছে সাকিব আল হাসান ফিরেছে ও দেশের মাটিতে ক্রিকেট ফিরেছে৷’

গত মার্চে মাশরাফি ওয়ানড অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের যাত্রা শুরু হচ্ছে এই সিরিজ দিয়েই। দেশে তামিম ইকবালেরও রয়েছে অনেক ফ্যান গ্রুপ। তাঁরাও অপেক্ষায় ছিলেন তামিমের নতুন যাত্রাতে সঙ্গী হওয়ার। তবে তাদের সব আয়োজন ভেস্তে গেছে বিসিবির এমন সিদ্বান্তে। তামিমিয়ান্স ফ্যানস অফ তামিমের প্রেসিডেন্টস মারুফ ইসলাম ইফতি জানিয়েছেন তামিমের অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচে মাঠে থাকতে না পেরে হতাশ তাঁরাও।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলাম, অথচ বিগত সময়ের মতো গ্যালারিতে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে গর্জনটা করতে পারছি না। এটি হতাশার। তবে বাস্তবতাকে মেনে নিচ্ছি। বিসিবির এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এই সিরিজ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা। আজকের ম্যাচ দিয়ে আমাদের আইকন তামিম ইকবাল অধিনায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন। তাই গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ও খান সাহেবকে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ব্যানার সহ মাঠে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। করোনার এই অন্ধকার সময় খুব তাড়াতাড়ি মুছে যাক, আমরা আবারো মাঠে যেতে চাই।’

আইসিসির দেওয়া এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ। পরিস্তিতি স্বাভাবিক থাকলে সাকিবকে বরণ করে নিতে মাঠে উপস্থিত থাকতো সাকিবের ফ্যান গ্রুপের সদস্যরাও।

১৬ কোটি মানুষের প্রাণ সাকিব আল হাসান গ্রুপের সদস্য নাজমুস সাকিব রুম্মন বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছে। এবারই প্রথম যে দর্শকরা মাঠে বসে খেলা দেখতে পারছে না। বাংলাদেশের ফুটবলে দর্শক ফেরার পর সবাই আশা করেছিল ক্রিকেটেও দর্শক ফিরবে। কিন্তু বিসিবি অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থানে থাকায় কপাল পুড়েছে দর্শকদের। দীর্ঘ ১৬ মাস পর সাকিব ফিরলো জাতীয় দলে। সবারই ইচ্ছা ছিল মাঠে বসে প্রিয় তারকার খেলা দেখার। কিন্তু তা হচ্ছেনা। একজন সাকিবিয়ান হিসেবে এটি অবশ্যই দুঃখের। সাকিবকে বরণ করে নিতে তাদেরও আয়োজনের কমতি ছিলো না। তবে হতাশ হলেও ক্রিকেট ফেরাতেই খুশি তাঁরা।’

ফ্যানস অব সাকিব৭৫ এর প্রেসিডেন্টস আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘হতাশাটা অবশ্যই কাজ করছে। সবচেয়ে বড় ব্যপার হচ্ছে প্রেক্ষাপটটা এমন না হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের ফেরার মূহুর্তটা সমর্থকদের পক্ষ থেকে অন্যরকম হতে পারতো। এই ব্যপারটাই সবচেয়ে বেশি মিস করছি। তবে এখানে ভালো লাগার ব্যপারটাও কম না। বিশেষ করে দীর্ঘ দিন আমাদের প্রিয় ক্রিকেটটা যে আমাদের থেকে দূরে ছিলো সেটা মাঠে গড়াচ্ছে এটাও কিন্তু কম পাওয়া না আমাদের জন্য । তাই এখন স্বস্তির ব্যপার এটাই যে আমাদের প্রিয় ক্রিকেটটা মাঠে ফিরছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link