More

Social Media

Light
Dark

ফরাসি সৌরভে ম্লান স্প্যানিশ মূর্ছনা

ইতালিকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে শিরোপা জয়ের বড় দাবীদার ছিল স্পেন। কিন্তু তারা থেমে গেছে ফ্রান্সের কাছে। উয়েফা নেশনস কাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ফরাসিরা ২-১ গোলে স্প্যানিশদের হারিয়ে শিরোপা জিতেছে। তাতে বিশ্বকাপের পর আরেকটি বড় শিরোপা দেখা পেয়েছে দিদিয়ের দেশমের দল।

যদিও তাতে ইউরো ২০২০ এর শিরোপা জিততে না পারার হতাশাটা খুব একটা কাটেনি। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আসরে সেমিফাইনালে বিদায় নিতে হয়েছিল বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলটিকে। অথচ ফাইনালের আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত খেলোয়াড় নিয়ে বেশ চাপে ছিল ফ্রান্স। স্কোয়াড থেকে ছিঁটকে গিয়েছিলেন মিডফিল্ডার আদ্রিওঁ রাবিও।

কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় রাবিওকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। দলের সঙ্গে ফাইনালে তুরিন থেকে তাই মিলানে যাওয়া হয়নি তার। দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত নেশনস লিগের শিরোপা লড়াইয়ে থাকতে পারেননি রাবিও। অথচ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারানোর ম্যাচে ফ্রান্সের শুরুর একাদশে ছিলেন রাবিও।

ads

৩-২ গোলের নাটকীয় জয়ের ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে তাকে তুলে নেন কোচ দেশম। সে কারণে ফাইনালেও দলে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তার। জুভেন্টাসের এই মিডফিল্ডারের শূন্যতা পূরণে নতুন কাউকে দলে ডাকেননি কোচ। যদি বলা হয় ডাকার সময় পাননি সেটাকেও সত্য বলতে হবে।

ফ্রান্সের শিরোপা জেতার পথে এসব ছোট ছোট সমস্যাগুলো খুব বড় হয়ে দেখা দেয়নি। কোচের আস্থার প্রতিদান কেলোয়াড়রা বেশ ভালভাবেই দিয়েছেন। অনেকের কাছে ফাইনাল ম্যাচটা ঠিক যেন আগের ম্যাচের চিত্রনাট্য। পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় জাগা এবং দূর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে জয়ের আনন্দে ভেসে যাওয়ার নজির তৈরি করল ফরাসিরা।

তবে, এই জয়টা যেনতেন নয়, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে মেতে ওঠার একটা উপলক্ষ যে। নেশনস লিগে আরেকটি ঘুরে দাঁড়ানোর দৃশ্যপট এঁকে সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করলো করিম বেনজামা, কিলিয়েন এমবাপ্পেরা। মিলানের সান সিরোর ম্যাচে শুরুতে যদিও পিছিয়ে পড়েছিল ফ্রান্স। লিড নিলেও অবশ্য বেশিক্ষণ এগিয়ে থাকতে পারেনি ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন।

দুই মিনিটের মধ্যে ফরাসিরা খেলায় ফেরে করিম বেনজেমার দারুণ এক গোলে। আর শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দশেক আগে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে ফ্রান্স। এই নেশনস লিগের সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মের বিপক্ষে হারতে বসা ম্যাচে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে নেয় ফ্রান্স।

হারতে বসা ওই ম্যাচে ফরাসিরা পিছিয়ে শুরুতে পড়েছিল ২-০ গোলে। সেখান থেকে সমতায় ফেরা এবং একেবারে শেষ মুহূর্তের লক্ষ্যভেদে ফাইনাল নিশ্চিত করা যেন রুপকথার গল্পেরই মঞ্চায়ন। ফাইনালেও তারা পিছিয়ে পড়ে এবং এবারও জয়ের সঙ্গে সোনার পদক গলায় তুলে একই কাজটা করল। যে ইতালি টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত ছিল, সেই দলটিকে হারিয়ে দেওয়া খুব সহজ ব্যপার নয়! স্পেনের পারফরম্যান্সের কারণে তাই বোঝাই যাচ্ছিল ফাইনালে ফ্রান্সকে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা।

সান সিরোর ম্যাচে লড়াইও হয়েছে সমানে সমান। বল পজেশনে স্পেন অনেক এগিয়ে থাকলেও আক্রমণ বা সুযোগ তৈরিতে দুই দলের পরিসংখ্যান প্রায় একই রকম ছিল। যদিও ম্যাচের প্রথমার্ধে কেউই জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। বিরতি থেকে ফিরে আসার পর সব উত্তেজনা যেন জমিয়ে রেখেছিল দু’দলই। ৬৪ মিনিটে ফরাসিদের হতবাক করে স্পেনকে এগিয়ে নেন মিকেল ওয়ারজাবাল। দুর্দান্ত গতিতে ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে গিয়ে বাঁ পায়ের আড়াআড়ি নিচু শটে এই ফরোয়ার্ড বল জড়িয়ে দেন জালে।

গোল হজমের দুই মিনিট পরই বেনজেমার ম্যাজিক। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে দারুণ পারফরম্যান্স করা এই স্ট্রাইকার ডান প্রান্ত থেকে আড়াআড়ি শটে খুঁজে নেন জাল। স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমনের হাত বলে লাগলেও শেষরক্ষা হয়নি। ম্যাচটি ১-১ সমতায় ফেরার পর বাড়তে থাকে উত্তেজনা। আক্রমণ-পাল্ট আক্রমণের এক পর্যায়ে ৮০ মিনিটে সফল হয় ফ্রান্স। বাঁ পায়ে এমবাপ্পের নেওয়া নিচু শট জালে জড়ালে আনন্দে মেতে ওঠে ফরাসিরা। যাতে নিশ্চিত হয়ে যায় নেশনস লিগের শিরোপা জয়।

প্রথমে গোল হজম করে ম্যাচ জিতে নেওয়াটা যেন নিয়মে পরিণত করেছে ফ্রাসিরা। পরিসংখ্যান বলছে, শেষ ৮ আন্তর্জাতিক ম্যাচের ৭টিতেই প্রথমে গোল হজম করে ফ্রান্স। কিন্তু কোনো ম্যাচেই এখন পর্যন্ত হারেনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আরও একবার লেখা হলো সেই একই গল্প, ছড়ালো ফরাসি সৌরভ।

অনেকের কাছে তাই পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখাতেই যেন মজা খুঁজে পেয়েছে ফ্রান্স। স্পেনকে হারিয়ে এবার নেশন্স লিগের দ্বিতীয় আসরের শিরোপা জিতল ফ্রান্স। এই আসরের প্রথম আয়োজনের চ্যাম্পিয়ন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশ পর্তুগাল। ফাইনালে বল দখলের লড়াইয়ে স্পেনের দাপটই ছিল আলাদা।

ম্যাচে ৬৫ শতাংস সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে লুইস এনরিকের শীষ্যরা। গোলেমুখে স্পেন শট নেয় ১২টি, এর মধ্যে ৪টি ছিল আবার লক্ষ্যে। মাত্র ৩৫ শতাংশ সময় বল দখলে রাখা ফ্রান্স গোলমুখে সমান ১২টি নেয়া শটের মধ্যে ৫টি ছিল লক্ষ্যে।

এর আগে উয়েফা নেশনস লিগ জয়ের স্বপ্নে বিভোর স্পেনের ফাইনালে শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলেটি ধরে রাখতে না পেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এই জয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়লো ফরাসিরা। ফুটবল বিশ্বের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ, ইউরো ও নেশন্স লিগ, গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শিরোপাই জয়ের কীর্তি গড়লো ফ্রান্স।

সেমিফাইনালে পরাজিত হয়ে বেলজিয়ামকে ২-১ গোলে হারিয়ে উয়েফা নেশনস লিগে তৃতীয় হয়েছে ইতালি। তুরিনে স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নিকোলো ব্যারেল্লার অসাধারণ এক ভলিতে করা গোলে এগিয়ে যায় আজ্জুরিরা। ৬৩ মিনিটে ডোমেনিকো বেরার্দির পেনাল্টি গোলে ব্যবধান বেড়ে দাড়ায় ২-০। এরপর ৮৬ মিনিটে চার্লস ডি কেটেলায়েরে একটি গোল শোধ দিলেও হাসিটা রবার্তো মানচিনির শিষ্যদেরই থাকে।

টুর্নামেন্ট হিসেবে বিশ্বকাপ বা ইউরোর উচ্চতায় হয়তো পৌঁছাবে না নেশনস লিগ। এরপরও ইউরোপের সেরা দলগুলোই তো এখানে খেলে থাকে। ২০০৮ ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপের পর ২০১২ ইউরো জয়টা রূপকথার মতোই ছিল টিকিটাকা স্পেনের। এরপর একঝাঁক তারকার বিদায়ে বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলা হয়নি এরপর আর। ৯ বছর পর সেই অতৃপ্তি মিটিয়ে নেশনস লিগের ফাইনালে ওঠে যায় লুইস এনরিকের দল। কিন্তু, ফরাসি সৌরভের কাছে হেরে গেল স্প্যানিশ মূর্ছনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link