More

Social Media

Light
Dark

তিন ম্যাচ, তিন স্বাদ

ইউরোর তৃতীয় দিন দর্শকদের জন্য সবকিছুই বরাদ্দ রেখেছিল যেন। বড় দুই দলের ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচ, ছোট দুই দলের উত্তেজনাকর ম্যাচ আর মধ্যরাতে টান টান উত্তেজনাকর থ্রিলার। সবমিলিয়ে তৃতীয় দিনে তিনরকম ম্যাচের স্বাদ পেয়েছে সমর্থকেরা।

  • ইংল্যান্ড ১-০ ক্রোয়েশিয়া

ম্যাচের আগেই ইংলিশ মিডিয়াকে তেতিয়ে দিয়েছিলেন লুকা মদ্রিচ। বলেছিলেন, ইংল্যান্ড দলকে নিয়ে যতটা না বেশি হাইপ হয় তাঁর বেশি তৈরি করে ইংলিশ মিডিয়া। কথাটা অবশ্য খুব একটা ভুল নয়, ইংলিশ মিডিয়া নিজেদের খেলোয়াড়দের নিয়ে হাইপ একটু বেশি বেশিই তৈরি করে। ‘ইটস কামিং হোম’ স্লোগান ইতোমধ্যে তৈরি হয়েও গিয়েছে। রেকর্ড দিয়েই সেই হাইপটা বজায় রেখেছে ইংল্যান্ড।

একাদশ দেখে অনেকেই ভ্রূ কুচকে তাকিয়েছিলেন। গত মৌসুমে ইংলিশ খেলোয়াড়েরাই কাপিয়েছে বিশ্ব। আর সেই দল  থেকেই সাউথগেট কীনা চুজ করেছেন এমন একাদশ? দেখেই সকলে ম্যাচ শুরুর আগেই এক দফা দেখে নিয়েছিল তাকে। কিন্তু ৯০ মিনিট শেষে ঠিকই ম্যাচ বের করে এনেছে সাউথগেটের শিষ্যরা।

ads

গতকাল ছিল এক দলের জন্য রেকর্ড ভাঙ্গা, অন্য দলের জন্য তা ধরে রাখার লড়াই। ইউরোতে কখনো জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারেনি ইংল্যান্ড। ওদিকে ক্রোয়েশিয়া কখনো হার দিয়ে শুরু করেনি কোনো ইউরো। এমনই এক ম্যাচে যেন এক্সপেরিমেন্ট করা শুরু করলেন সাউথগেট। দলের লেফট ব্যাক হিসেবে চিলওয়েল, লুক শকে বাদ দিয়ে ভরসা রাখেলন কিয়েরেন ট্রিপিয়ারের উপর। সাঞ্চো-রাশফোর্ডকে বাদ দিয়ে ভরসা রাখলেন স্টার্লিংয়ের উপর। গ্রিলিশের মতন খেলোয়াড়কে বেঞ্চে রেখে শুরু করিয়েছেন ক্যালভিন ফিলিপসকে। চারিদিকে যখন সমালোচনা মাঠে নামার আগেই, মাঠে নেমেই সাউথগেটের শিষ্যরা মান রাখলেন গুরুর। যাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল দর্শকেরা, তারাই হলেন ত্রাতা। ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে ‘ফুটবলকে ঘরে ফেরানো’র আরেকটি যাত্রার শুভসূচনা করল তারা।

সাউথগেটের একাদশ নিয়ে প্রশ্ন করাটা অইভান্তর ছিল না। ১৯৯২ সালের পর প্রথমবারের মতন কোনো বড় টুর্নামেন্টে ইউনাইটেডার লিভারপুলের খেলোয়াড় ছাড়া মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড। লক্ষ্য ছিল অন্যকিছু করে দেখানোর। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে যেমনটা বলা হয়েছিল।  সম্ভাবনা আছে কিন্তু গত বিশ্বকাপের সেরা ৪ তারকার তিনজনকে হারিয়ে সেই কম্ভিনেশনটা এখনও খুঁজে পায়নি তারা। দলে দলের হয়ে পুরো ম্যাচটা খেলে গিয়েছেন যেন মদ্রিচ আর কোভাচিচ। পুরো দলের মধ্যে তারাই যেন ফুটে উঠেছেন, বাকিরা সাক্ষী গোপাল।

প্রথমার্ধটা হয়েছে পুরোপুরি খাপছাড়া। দুই ফল যেন পাল্লা দিয়ে খারাপ খেলেছে। শেষমেশ ৫৭ মিনিটে এসে প্রথম গোলের দেখা পায় ইংল্যান্ড। ডানপ্রান্ত দিয়ে ফিলিপস। ক্রোয়েশিয়ার দুই ফুটবলারকে ছিটকে ফেলে পাস বাড়ালেন স্টার্লিংয়ের দিকে। ক্রোয়াট গোলকিপার লিকাকোভিচ চেষ্টা করেও থামাতে পারলেন না। এই গোলটাই হয়ে রইল পুরো ম্যাচের হাইলাইট।

  • অস্ট্রিয়া ৩-১ নর্থ মেসেডোনিয়া

ইন্টারের ড্রিমটিমের কথা মনে আছে? জোসে মোরিনহোর অধীনে ট্রেবল জেতা দলটার কথাই বলছি। কি ছিল না সেই দলে? সেই দলের স্মৃতি আকড়ে পরে থাকা যে কারো জন্য এই ম্যাচটা অনেকটা আবেগেরই।

অস্ট্রিয়ার মার্কো আরনাউতোভিচ ও উত্তর মেসিডোনিয়ার গোরান পানদেভ, দুইজনেই গোল পেয়েছেন, দুজনেই একসাথে একসময় কাঁপিয়েছেন ইন্টারের জার্সিতে ইউরোপ। আরজ তারাই মুখোমুখি একে অপরের ইউরোপের বিশ্বকাপে। আর সেখানেই উত্তর মেসিডোনিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে অস্ট্রিয়া।

যদি ইউরোর শুরুতে ইউরোর সবচেয়ে দূর্ব ম্যাচের তালিকা করা হলে তাতে অবশ্যই নাম আসত এই ম্যাচটার। বড় কোনো নাম নেই, বড় কোনো নামও নয়। কেন দেখবে কোনো নিরপেক্ষ দর্শক এই ম্যাচ? কেন দেখবে সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছে সেই ম্যাচেই।

দুই দলের ম্যাচে উত্তেজনা উঠেছিল চরমে। ম্যাচের শুরুতে আলোচনায় থাকার মতন একমাত্র খেলোয়াড় ছিলেন সদ্য রিয়ালে আসা ডেভিড আলাবা। ভার্সেটাইল এই খেলোয়াড় কোথায় খেলবেন সে নিয়ে ছিল; প্রশ্নের উপর প্রশ্ন। শেষমেশ ডিফেন্সে খেলেই পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছেন তিনি।

ম্যাচের প্রথম হাসি হাসে অস্ট্রিয়া হাসে। লাইপজিগের মিডফিল্ডার মার্সেল সাবিৎসারের ক্রস থেকে ১৮ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন স্টেফান লাইনার। একট্টু মার্কিংয়ে গড়মিল হয়েছে তো গোল বের করে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। ১০ মিনিটের মাথাতেই গোল পরিশোধ করে নর্থ মেসেডোনিয়া। আর গোল করেন ৩৭ বছর বয়সী পানদেভ। নর্থ মেসেডোনিয়ার ইতিহাসে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম গোল করলেন পানদেভ।

দ্বিতীয়ার্ধে দুটো পরিবর্তন আনে অস্ট্রিয়ার মূল স্ট্রাইকার সাশা কালায়জিচের জায়গায় আরনাউতোভিচ আর উইঙ্গার ক্রিস্টোফ বমগার্টনারের জায়গায় স্ট্রাইকার গ্রেগোরিটশকে। আর সেন্টারব্যাক থেকে আলাবা চলে আসলেন বামপ্রান্তে। এটুকুই যথেষ্ট ছিল ম্যাচ ঘুরানোর জন্য। ৭৮ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় অস্ট্রিয়া। এবার এগিয়ে নিয়ে যান গ্রেগোরিটশ। আলাবার নিখুঁত ক্রসে দূর্দান্ত ফিনিশ করে ২-১ গোলের লিড এনে দেন তিনি।

নর্থ মেসেডোনিয়ার জেতার সুযোগ ওখানেই শষ হয়ে গিয়েছিল তবুও কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন আরনাউতোভিচ। ৮৯ মিনিটে এসে থ্রো-ইন থেকে বল পেয়ে ফিনিশ করেন আরনাউতোভিচ। ম্যাচ শেষ হয়ে তার গোল দিয়ে ৩-১ গোলে।

  • নেদারল্যান্ডস ৩-২ ইউক্রেন

এবারের ইউরোর এখন পর্যন্ত সেরা ম্যাচের তালিকার শুরুতে ইতোমধ্যে উঠে গিয়েছে এই ম্যাচের নাম। অথচ প্রথমার্ধ দেখে কেউই বলতে পারবে না যে এই ম্যাচের অবস্থা এমন হতে পারে। ম্যাচের প্রথমার্ধ যেখানে ছিল বোরিং ম্যাড়ম্যাড়ে এক ম্যাচ, সেখানে শেষ হয়েছে এক থ্রিলার হিসেবে। ৭ বছর পর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফেরা নেদারল্যান্ডস ম্যাচটা জিতে নিয়েছে ৩-২ গোলে।

টানা ইউরো বিশ্বকাপে খেলতে না পারা নেদারল্যান্ডবাসীর জন্য দিনটা অন্যরকম ছিল। আর সে ম্যাচটা অন্যরকম করে রাঙিয়েও রাখল তারা। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধ দেখেছে পাঁচ গোল। এমনটা ইউরোতে প্রথম।

ম্যাচটা ম্যাড়ম্যাড়ে হলেও নেদাল্যান্ড ঠিকই আক্রমণ করছিল। কিন্তু গোল বের করতে পারছিল না। ডিপাই, ডুমফ্রিস, ডি ইয়ং; সকলেই সামনে গিয়ে  মুখ থুবড়ে পছিলেন। ইউক্রেনের ব্যাপারটাও ঠিক তেমনই। ফিনিশিংটা ঠিক হচ্ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নামতেই যেন সব বদলে যায়। ৮ মিনিটেই দুই গোলে এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ড।

প্রথম গোল আসে ৫২ মিনিটে। ডুমফ্রিসের লো ক্রস থামাতে গোলবার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ইউক্রেনের গোলকিপার। কিন্তু বল গ্রিপ না করতে পারার খেসারত দিতে হয় গোল হজম করে। বল তার হাত থেকে ছুঁতে চলে যায় ওয়াইনালদামের কাছে। জিনি কোন ভুল করেননি। ১-০ গোলে এগিয়ে নেন নেদারল্যান্ডসকে। ছয় মিনিট পর আবারও আমস্টারডামকে উল্লাসে মাতালেন ভেগহর্স্ট। এবারও বল বানিয়ে ফিয়েছেন ডুমফ্রিস। তার ক্রস সামলাতে না পেরে ভুল করে বসেন ইউক্রেনের ডিফেন্ডার। আর সেটাই কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান ২-০ গোলে।

নেদারল্যান্ডসের জয় তখন সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল, কিন্তু কে জানতো এখনও রোমাঞ্চ আরও বাকি?

৭৫ মিনিটে ইউক্রেনকে ম্যাচে ফেরান ইয়ারমোলেঙ্কো। ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া ইয়ারমোলেঙ্কোর শট, এবারের ইউরোর সেরা গোলের তালিকাতে থাকতে যাচ্ছে তা প্রায় নিশ্চিতই। ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি তিনি। পুরো আমস্টারডাম অবাক হয়ে দেখেছে সেই গোল।

চার মিনিট পর আবারও গোল পায় ইউক্রেন। এবার ম্যাচ সমতায়। ডি-ভক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি কিকে মাথা ছুইয়ে দলকে সমতায় ফেরান স্ট্রাইকার ইয়ারেমচুক। ম্যাচের মাত্র বাকি আর ১০ মিনিট। কিছু করতে হলে নেদারল্যান্ডসের এখনই করতে হবে। সমতায় ফিরলেও মনোবল ধরে রাখতে পেরেছিল তারা।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে আবারও হিরোরূপে আবির্ভূত হলেন ডুমফ্রিস। এবার আর গোল বানিয়ে নয়, নিজেই গোল করলেন। বাঁ দিক থেকে আসা আকের ক্রস হেড করে জালে পৌছে দিলেন ডুমফ্রিস। সেই সাথে ম্যাচটাও নিজেদের করে নিলো নেদারল্যান্ডস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link