More

Social Media

Light
Dark

এক্স ফ্যাক্টর বনাম ধারাবাহিকতা

সালটা ২০১৯। লর্ডসে তিলধারণের ঠাই নাই। উত্তেজনার পারদ তখন আকাশ ছোঁয়। সুপার ওভারের শেষ বলে রান প্রয়োজন দুই। সেই দুই রানেই নির্ধারণ হবার কথা বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী হবে কারা। বোলিং এ ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পেসার জোফরা আর্চার ও ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ডের অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাটার মার্টিন গাপটিল। পুরো লর্ডস ততক্ষণে বিশ্ব শিরোপা জয়ের আশায় বেঁধেছে বুক। সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হলে ব্যাটিং ইনিংস-এ সর্বোচ্চ চার মারার বদৌলতে এগিয়ে ছিল ইয়ন মরগ্যানের দল।

আর্চার তাঁর শেষ বলটি করলেন ইয়র্কার লেন্থে। গাপটিল তা ব্যাটে লাগিয়েই ছুটলেন প্রাণপনে। দ্বিতীয় রান নেওয়ার আগ মুহূর্তে রান আউটের শিকার হলে নিউজিল্যান্ডের শিরোপা জয়ের আশার পরিসমাপ্তি। ভাঙ্গে আশা হৃদয়ে হয় রক্তক্ষরণ। অন্যদিকে ইংলিশ শিবিরে তখন আনন্দ উল্লাসের বাঁধ ভাঙা উদযাপন।

আবার আইসিসির একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। আরো একবার সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে কেইন উইলিয়ামসন ও ইয়ন মরগ্যানের দল। ১০ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি হবার দাঁড়প্রান্তে দুই দল।

ads

টুর্নামেন্টের ফেভারিট তকমা নিয়ে খেলতে আসা ইংল্যান্ড ইনজুরির থাবায় খানিক হোচট খেয়ে আসন্ন সেমিফাইনালের ভরসা করবে তাঁদের এক্স-ফ্যাক্টর খেলোয়াড়দের উপর। যেহেতু ইংল্যান্ডের গায়ে ছিল ফেভারিটের তকমা সেহেতু টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ থেকেই প্রভাব বিস্তার করে খেলতে থাকে তাঁরা। সফলতা আসে গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচে। অন্যদিকে নিজেদের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হার এটা প্রমাণ করে যে তাঁরা অজেয় নয়।

এর পাশাপাশি প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জেসন রয়ের কাফ ইনজুরি তাকে ছিটকে দিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে। সেই সাথে ভাঙ্গন এসেছে ইংল্যান্ডের বিধ্বংসী ওপেনিং জুঁটি। এই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ওপেনিং জুঁটি নিঃসন্দেহে রয় এবং জশ বাটলার জুঁটি। এখন ইংল্যান্ডের ভাবনার কারণ ওপেনিং। সেক্ষেত্রে জনি বেয়ারস্টো পেতে পারেন প্রমোশন। তাঁর কাছ থেকে একটি ম্যাচ উইনিং পারফর্মেন্স আশাই করতে পারে ইংলিশরা। অন্যদিকে মিডেল অর্ডার ব্যাটার স্যাম বিলিংসের অন্তর্ভুক্তি হতে পারে একাদশে।

কিন্তু ইংল্যান্ডের মূল চিন্তার কারণ বোলিং আক্রমণ। টাইমল মিলসের থাই ইনজুরি ফেলেছে এই দুশ্চিন্তায়। শেষের দিকের ওভারগুলোতে মিলস বেশ কার্য্যকরী ভুমিকা রেখেছেন। তাঁর অবর্তমানে প্রতিপক্ষ নিশ্চয়ই ইংল্যান্ডের এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে শেষের দিকে রান তোলার মাত্রা বাড়ানোর পরিকল্পনা করতে পারে। তাঁর পরিবর্তে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা মার্কা উড় গতিশীল হলেও তিনি মিলসের মতো কার্যকরী বুদ্ধিদীপ্ত বোলার নয়। যার প্রমাণ প্রোটিয়াদের বিপক্ষের ম্যাচেই মিলেছে। ইংল্যান্ড হয়ত এক্ষেত্রে উডের সেদিনের পারফর্মেন্সকে নেহায়েৎ একটি খারাপ দিন বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে আরেকটি সুযোগ দেবে।

তবে ইংলিশ স্পিনারদের উপর থাকবে বিশাল দায়িত্ব। মঈন আলী ও আদিল রশিদের মূল কর্তব্যই থাকবে পাওয়ারপ্লেতে এবং ইনিংসের মধ্যভাগে উইকেট তুলে নেওয়া। তাঁদের উপর ভর করেই সেমিফাইনালে জয় তুলে নিতে চাইবে ইংল্যান্ড। তাছাড়া ২০১৯ এর ফাইনাল জয়ের সুখস্মৃতি অবশ্যই বাড়তি প্রেরণা জোগাবে ইংলিশ খেলোয়াড়দের।

২০১৯ সালের সেই ফাইনাল হারার পর থেকে নিউজিল্যান্ড রীতিমত নিজেদের ধারাবাহিকতার অনন্য প্রদর্শন দেখিয়েছে বছর জুড়েই। তাঁদের ধারাবাহিক পারফর্মেন্সের ফলও তাঁরা আদায় করে নিয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিওয়নশীপ জিতে। ভারতের বিপক্ষে ২০২১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সেই ফাইনালে ভারতকে আট উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ব্ল্যাকক্যাপসরা।

ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটের সত্যিকারের ভদ্রলোক নিউজিল্যান্ড এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের প্রদর্শন করেছে তাতে সন্দেহ বা তর্কের অবকাশ খুব একটা রয়েছে বলে মনে হয় না। তাঁরা শক্তিশালী ভারতকে কেবল ১১০ রানে রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে আনপ্রেডিক্টেবল আফগানিস্তানকেও বেঁধে ফেলেছিল ১২৫ রানেই।

নতুন বলে ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি বোলিং জুঁটিকে খেলতে যেন ব্যাটারদের নাভিশ্বাস উঠে যাবার উপক্রম হয়। তাঁরা একনাগারের নির্দিষ্ট লাইন এবং লেন্থ বজায় রেখে বল করে যান এবং ব্যাটারকে তাঁর রানের চাকা সচল করার সুযোগ খুব একটা দেন না। যদিও লকি ফার্গুসনের অনুপস্থিতি নিউজিল্যান্ডের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটাবে নিশ্চয়ই। তবে অ্যাডাম মিনলে কিছুটা স্বস্তি জোগাবে ব্ল্যাকক্যাপস শিবিরে তাঁর সাম্প্রতিক পারফর্মেন্সের জোড়ে।

তাছাড়া পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনার মিশেল স্যান্টনার ও ইশ সোদি নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। ইশ সোদি ইনিংসের মধ্যভাগে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে হাতখুলে খেলা যাবে না।

ব্ল্যাকক্যাপস ব্যাটাররাও দারুণ প্রভাব বিস্তার করে খেলেছেন টুর্নামেন্টের শুরু থেকে এখব অবধি। ওপেনিং ব্যাটার মার্টিন গাপটিল তাঁদের পক্ষে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন আরেক ওপেনার ডারেইল মিশেল। তাছাড়া শেষ ম্যাচে অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনও ফিরেছেন রানে। তিনিও হয়ত সেমিফাইনালে দলের প্রত্যাশা মিটিয়ে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যাবেন।

দুই দলের লড়াইটা বেশ জমবে। তাছাড়া আবুধাবির উইকেট বেশ ব্যাটিং সহায়ক বাকি দুইটি ভেন্যুর উইকেটের তুলনায়। তাই একটি হাই স্কোরিং ম্যাচের প্রত্যাশা করতেই পারে ক্রিকেট সমর্থকেরা। নিউজিল্যান্ড চাইবে ২০১৯ সালের অদ্ভুত নিয়মে হারা ম্যাচের একটি ক্রিকেটীয় জবাব দিতে অপরদিকে ইংল্যান্ডের ভাবনাতেও জয়ের বিকল্প কিছু থাকবে না। অপেক্ষা ১০ নভেম্বর সন্ধ্যাবেলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link