More

Social Media

Light
Dark

দরাজ কণ্ঠের মোহনীয়তা

স্কটিশ পিতা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মায়ের কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে এসেছিলেন টনি গ্রেগ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। এরপর দেশ-বিদেশের নানা কমেন্ট্রি বক্স থেকে ভেসে আসতো তাঁর ধ্রুপদী কণ্ঠস্বর। টনি গ্রেগ আদতে কাঁটাতারের বেড়াটাই মুছে দিয়েছিলেন।

তিনি হয়ে উঠেছিলেন একান্তই ক্রিকেটের। না, আসলে ক্রিকেট আর তিনি মিলে মিশে একাকার হয়েছেন। যতদিন ধারাভাষ্য দিয়েছেন – ততদিন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ক্রিকেটটা তাঁর কণ্ঠেই যেন পূর্ণতা পেয়েছে বারবার।

ব্যাট-বল হাতে দাপট ও সমালোচনাকে সঙ্গী বানিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। আবার ক্রিকেট মাঠকে বিদায় জানানোর পর হয়ে উঠেছিলেন অন্যতম সেরা ধারাভাষ্যকারদের একজন। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা অন্যতম সেরা টেস্ট অলরাউন্ডারের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও আসবে টনি গ্রেগের নাম।

ads

ক্রিকেটীয় পরিবার থেকে উঠে টনি গ্রেগ আদতে পুরো ক্রিকেট ইতিহাসেরই স্বর্ণাক্ষরে লেখা এক নাম। মায়ের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৪৬ সালের ৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন টনি গ্রেগ। তবে ক্রিকেটার খেলার জন্য বেঁছে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকেই।

তাঁর আগে পরে গ্রেগের পরিবারের অনেকেই ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। তাঁর ভাই ইয়ান গ্রেগও খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের হয়ে নিজেকে প্রমাণ করার পর ১৯৭২ সালের অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের হয়ে ডাক পান তিনি। নিজের অভিষেক ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৪৯ রানে অল আউট হয়ে গেলেও দলের সর্বোচ্চ স্কোর এসেছিলে টনি গ্রেগের (৫৭) ব্যাট থেকেই।

এছাড়া বল হাতেও নিয়েছিলেন অজি অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেলের উইকেটে। এখানেই থামেননি তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাঁর ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৬২ রানের ইনিংস। পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন আরও চার উইকেট। তাঁর এই কীর্তিতে ৮৯ রানের জয় পায় ইংল্যান্ড।

ব্যাট-বল হাতে যতটা দুর্ধর্ষ ছিলেন তাঁর সমালোচনার তীরও ততটাই নিখুঁত ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক টেস্ট ম্যাচে দিনের খেলা শেষ হওয়ার পরেও রান আউট করা নিয়ে প্রথম বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। এরপর নানা সিরিজেই বিভিন্ন রকম বেফাঁস কথা বলে সমালোচিত হয়েছেন।

তবে অধিনায়ক হিসেবে টনি গ্রেগ ছিলেন ক্যারিশমাটিক একজন। যদিও সংখ্যা দিয়ে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর মর্যাদাটা এই সময়ে বিচার করা কঠিন। তাঁর নেতৃত্বে খেলা ১৪ টেস্টের তিন জয়ের বিপরীতে হার ছিল পাঁচটি। তবুও সেইসময় অধিনায়ক হিসেবে দারুণ শ্রদ্ধার ও সমাদ্রিত ছিলেন তিনি।

ছয় ফুট ছয় ইঞ্চির এই ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের হয়ে মোট ৫৮ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। সেখানে ব্যাট বল দুই ডিপার্টমেন্টেই সমান ভূমিকা রেখেছেন। সেখানে ব্যাট হাতে ৪০.৪৩ গড়ে করেছেন ৩৫৯৯ রান। এছাড়া বল হাতেও নিয়েছিলেন ১৪১ টি উইকেট।

ফলে ক্রিকেটে নিখুঁত অলরাউন্ডার বলতে যাদের বোঝায় তাঁদেরই একজন ছিলেন টনি গ্রেগ। ওই সময়ের গ্রেট অলরাউন্ডারদের ছোট্ট তালিকাতে অনায়াসে রাখা যায় তাঁকে।

ক্যারি প্যাকারের আলোচিত ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের অন্যতম ‘সেলিং পয়েন্ট’ ছিলেন এই টনি গ্রেগ। তাকে ওই ক্রিকেট বিপ্লবের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা কিংবা নেতাও বলা যায়। নাইন নেটওয়ার্কের সাথে তাঁর বোঝাপড়ার শুরু সেই তখন থেকেই। এরপর মৃত্যুর আগের দিন অবধি তিনি ছিলেন নাইন নেটওয়ার্কের কর্মী।

ধারাভাষ্যকার  হিসেবে আরও বেশি সমাদৃত ছিলেন তিনি, এখানেও তিনি বিপ্লবী। তাঁর সময়ে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ধারাভাষ্যকারদের একজন তিনি। আসলে ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরাদের একজন তিনি। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তাঁর কণ্ঠে বিভোর থাকতো ক্রিকেট ভক্তরা। জীবনের সাথে ক্রিকেটকে যেন মিশিয়ে ফেলতে পারেন এই ধারাভাষ্যকার।

ক্রিকেটের আরেক বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার রিচি বেনোও ও টনি গ্রেগ জন্মগ্রহণ করেছিলেন একই তারিখে, ভিন্ন বছরে। দুজনই ক্রিকেট ইতিহাসের সেরাদের একজন বলে বিবোচিত। চ্যানেল নাইনে দুইজন একসাথে কাজ করেও দারুণ সুনাম কুড়িয়েছিলেন।

শেষ বয়সে আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যান্সারে। ক্যান্সার ধরা পড়ার কয়েক মাস বাদেই ২০১২ সালে পৃথিবীকে বিদায় জানান এই কিংবদন্তি। সিডনির একটি হাসপাতালে ৬৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন তিনি।

থেমে গিয়েছিল ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম বলিষ্ট এক কণ্ঠস্বর। আজ তিনি নেই, দরাজ কণ্ঠের সেই মোহনীয়তাও নেই!

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link