More

Social Media

Light
Dark

৪৯৮ রানের বিশ্বরেকর্ড!

১৯ জুন ২০১৮। ট্রেন্টব্রিজে রৌদ্রজ্বল আবহাওয়ার মাঝেও দেখা মিলেছিল মুশলধারে বৃষ্টির। না আকাশের বুক চিরে প্রকৃতি ভিজিয়ে দেওয়া বৃষ্টি না, ট্রেন্টব্রিজে সেদিন ক্রিকেটপ্রেমীরা সাক্ষী হয়েছিল ছক্কাবৃষ্টি আর রান বন্যার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটাররা। জনি বেয়ারস্টো, অ্যালেক্স হেলস, ইয়ন মরগ্যানদের তাণ্ডবে সেদিন ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিল ইংলিশরা। ৬ উইকেটে ৪৮১ রানের পাহাড়সম সংগ্রহের রেকর্ড দেখেছিল ক্রিকেট দুনিয়া।

ইংলিশদের সেই তাণ্ডবের চার বছর পূর্তিতে বাকি মাত্র দুই দিন। আবারও যেন দেখা মিলল সেই তাণ্ডবের। ধ্বংসযজ্ঞ ব্যাটিং আর নতুন এক রেকর্ড। এবারের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। খর্বশক্তির নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই নিজেদের গড়া রেকর্ড টপকে ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়েছে ইংলিশরা।

এবারের ধ্বংসযজ্ঞের পেছনের নায়ক জশ বাটলার, ডেভিড মালান, পিটার সল্ট ও লিয়াম লিভিংস্টোনরা। ডাচ বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে বেধরক পিটুনিতে ২২ গজে তাণ্ডব চালান বাটলার-লিভিংস্টোনরা। চার বছর আগের মতই ছক্কাবৃষ্টি। আমস্টেলভিনের ভিআরএ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ছোট বাউন্ডারিতে যেন বল খুঁজতেই ব্যস্ত ছিলেন ডাচ ফিল্ডাররা। বল ব্যাটে আসতেই সেটিকে বাউন্ডারির বাইরে নিয়ে ফেলছিলেন ইংলিশ ব্যাটাররা। বেশ কয়েকবার তো জঙ্গলে বল খুঁজেই সময় পার করছিলেন ফিল্ডাররা।

ads

ফিলিপ সল্টের মেইডেন সেঞ্চুরির পর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন ডেভিড মালানও। তবে, তাণ্ডবের শুরুটা জশ বাটলারের হাত ধরে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (পঞ্চদশ) আসরে ব্যাট হাতে দাপটে দেখিয়েছেন পুরো টুর্নামেন্ট। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে বনে যান টুর্নামেন্ট সেরা। সেই ফর্ম আর ধারাবাহিকতা টেনে আনলেন জাতীয় দলের জার্সিতেও।

ফরম্যাট পাল্টালেও পাল্টাননি বাটলার। ব্যাট করতে নেমে মারকাটারি ব্যাটিংয়ে রানের ফোয়ারা ছোঁটাতে থাকেন এই ইংলিশ তারকা। বাটলারের ধ্বংসযজ্ঞের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন পিটার সিলার, শেন স্ন্যাটার ও ফিলিপে বইসেভেইনরা। ফিল্ডাররাও ছিলেন দর্শকের ভূমিকায়। বেশিরভাগ বলই আছড়ে পড়ছিল জঙ্গলে কিংবা গ্যালারিতে। ইংলিশ ব্যাটারদের তাণ্ডবে ফিল্ডাররা বনে গিয়েছিলেন দর্শক আর দর্শকরা ফিল্ডার। বাটলার-লিভিংস্টোনদের চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে নিরুপায় হয়ে ডাচ বোলাররা।

মাত্র ৪৭ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন বাটলার। ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। অবশ্য দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও তার নামেই। হাতছানি ছিল দ্রুততম দেড়শো রানের রেকর্ড গড়ার। অল্পের জন্য এবি ডি ভিলিয়ার্সের সেই রেকর্ড নিজের নামে করতে পারেননি তিনি।

বাটলারের সাথে শেষ দিকে যোগ দেন লিভিংস্টোন। মাত্র ১৭ বলে করেন হাফ সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার সুযোগ থাকলেও তাড়াহুড়োয় সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয় লিভিংস্টোনের। তবে বাটলারের ৭০ বলে ১৪ ছক্কা ও ৭ চারে অপরাজিত ১৬২ ও লিভিংস্টোনের ২২ বলে ৬৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ৫০ ওভারে ৪ উইকেগে ৪৯৮ রানের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড। ওয়ানডে ইতিহাসে এটি এখন সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

ফিলিপ সল্ট ৯৩ বলে ১২২ ও ডেভিল মালান খেলেন ১০৯ বলে ১২৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। পুরো ইনিংসে ২৬ ছক্কা ও ৩৬ চার হাঁকান ইংলিশ ব্যাটাররা।

এদিকে রেকর্ড গড়ার ম্যাচে সোনালি হাসের লজ্জা নিয়ে ফিরেছেন অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। ব্যর্থ হন ওপেনার জেসন রয়ও। নিজের খালাতো ভাই শেন স্ন্যাটারের বলে বোল্ড হয়ে মাত্র ১ রানে ফিরেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার দুই ভাই একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলার কীর্তিও গড়েছেন এই ম্যাচ দিয়ে।

একদিকে ইংল্যান্ডের লজ্জার রেকর্ডে, আরেকদিকে নেদারল্যান্ডসের লজ্জা। এর মাঝে ডাচ শিবিরে আরেক লজ্জার রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন স্পিনার ফিলিপে বইসেভেইনরা। ১০ ওভারে ১০৮ রান দিয়ে ওয়ানডেতে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান দেওয়ার রেকর্ডে চতুর্থতে অবস্থান করছেন এই ডাচ স্পিনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link