More

Social Media

Light
Dark

রিয়ালের ৯৯তম এল ক্ল্যাসিকো জয়

ম্যাচের তখন ৩২ মিনিট। আক্রমণে মশগুল বার্সেলোন। আক্রমণ প্রতিহত হয়ে বল রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড় ভিনিসিয়াস জুনিয়রের পায়ে। একজনকে কাটিয়ে মাঝমাঠ থেকে মাঠে একটু ডান দিকে পাঠিয়ে দিলেন আরেক তরুণ রদ্রিগোর দিকে। যতক্ষণে বার্সার রক্ষণের মনোযোগ রদ্রিগোর দিকে গিয়েছে, ততক্ষণে রিয়াল ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবা দৌড়ে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন।

একেবারে ফাঁকায় থাকা আলাবার দিকে বল বাড়িয়ে দেন রদ্রিগো। বল নিয়ে একছুটে ডি-বক্সের বাম পাশে ডেভিড আলাবা। সেখান থেকে বাম পায়ের জোড়ালো শটে আদায় করে নিলেন এই মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোর গোল। এরই সাথে নিজের অভিষেক এল ক্ল্যাসিকো ম্যাচে গোলের এক অনন্য রেকর্ড গড়ে নিলেন অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার আলাবা।

ads

মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকো। তারই সাথে মেসি-রোনালদো পরবর্তী যুগের প্রথম এল ক্ল্যাসিকো। আজ ক্রীড়াপ্রেমীদের স্বপ্নের দিন ২৪ অক্টোবর লা লিগার নিজেদের নবম ম্যাচে মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ।  কাতালানদের মাঠ ক্যাম্প ন্যু-তে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দর্শকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

এত দর্শকের ভিড়ে যেন অন্য এক আবহাওয়ার সৃষ্টি পুরো মাঠজুড়ে। স্নায়ুচাপের পারদ তখন সম্ভবত এভারেস্টের বেসক্যাম্প অবধি পৌঁছেছে। মর্যাদার ম্যাচ, নিজেদের সেরা প্রমাণের ম্যাচ, লিগে দাপট বজায় কিংবা নিজেদের খুঁজে পাওয়ার ম্যাচে স্নায়ুচাপই যেন এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

সেই চাপকে দমিয়ে রেখে নিজের স্বভাবচারিত ৪-৩-৩ ফরমেশনে দলের সেরা খেলোয়াড়দের সমন্বয়নে গঠিত একাদশ খেলতে নামান অতিথি কোচ কার্লো আনচেলত্তি। অপরদিকে বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যানও বেছে নেন ৪-৩-৩ ফরমেশন। কিক-অফের আগেই ম্যাচের উত্তাপ যেন ছাড়িয়েছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা।

আক্রমণ, পালটা আক্রমণে খেলা চলতে থাকে। ম্যাচের ২৪ মিনিটের মাথায় সহজ এক সুযোগ পায় লস ব্ল্যাঙ্কোস বয় ভিনিসিয়াস। দুইবার বার্সার গোলরক্ষক মার্ক স্টারস্টেগেনকে কাটিয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়। ঠিক তার মিনিট বাদেই ম্যাচের ২৫তম মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর বিনা পাহারায় থাকা আরেক তরুণ সার্জিও ডেস্টের শট গোলবারের অনেক বাইরে দিয়ে গেলে অতি সহজ এক সুযোগ হাতছাড়া হয় কাতালানদের।

কিন্তু ডেভিড আলাবার ম্যাচের ৩২ মিনিটে করা গোলে উত্তেজনা যেন আরো তীব্র হয়। এরপর একের পর এক আক্রমণপ্রতি আক্রমণ প্রতিহত হলে সেই ১-০ গোলের ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কোম্যান ডিফেন্ডার অস্কার মিনগুয়েজার পরিবর্তে মাঠে নামান ফিলিপ কৌতিনহোকে। তবে আনচেলত্তি বিনা পরিবর্তনে মাঠে নামান তাঁর দলকে। এতে আক্রমণের গতি এবং স্থায়ীত্ব দীর্ঘ হলেও কোম্যানের দল কাঙ্খিত গোলের দেখা যেন রয়ে যাচ্ছিলো আড়ালেই। অপরদিকে রিয়াল বেছে নেয় কাউন্টার অ্যাটাকের পথ। সময়ের সাথে সাথে স্নায়ুচাপ যেন ধীরে ধীরে উঠতে থাকে এভারেস্ট বেয়ে চূড়ার দিকে।

আক্রমণের পর আক্রমণ হয়। ডি-বক্সে জটলা হয়। গোলের দেখা আর মেলে না। সুযোগের সদব্যবহারের বড্ড অভাব দু’দলেই। এই ম্যাচের উত্তেজনার আরেক পরিমাপক হতে পারে শেষের দিকে এসে দুই দলের খেলোয়াড়দের শারীরিক সমস্যা। প্রত্যাশার চাপ, স্নায়ুচাপ আর মর্যাদার চাপ এসব কিছু মিলিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়েরাই চেষ্টা করেছেন নিজের সেরাটুকু নিচের সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দিতে। সেই শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় সময় ব্যয় হওয়াতে, নির্ধারিত সময়ের সাথে যুক্ত হয় অতিরিক্ত সাত মিনিট।

সেই অতিরিক্ত সাত মিনিটের তৃতীয় মিনিটের  মাথায় গোলার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি করে বার্সা। তবে রিয়াল ডিফেন্ডারদের জটলায় তা প্রতিহত হয়। সেখান থেকে দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে যায় লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। মার্কো এসেনসিও বল একাই মধ্যমাঠ থেকে টেনে নিয়ে শট চালালে সেই শট রুখে দেন স্টেগেন।

কিন্তু রিবাউন্ড হয়ে আসা বল জালে জড়িয়ে নিজেদের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন রিয়াল তারকা লুকাস ভাসকুয়েজ। ২-০ তে এগিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। উত্তেজনার পারদে ঠিক হদিস পাওয়া গেলো না।

কিন্তু জয় যখন সুনিশ্চিত রিয়ালের, ঠিক তখনই খেলা শেষের অন্তিম মুহূর্তে একটি গোল করে ব্যবধান কমান বার্সেলোনার তারকা স্ট্রাইকার কুন আগুয়েরো। সেই গোলের খানিক বাদেই রেফারি খেলা শেষে বাশি বাজান। সমাপ্তি ঘটে মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোর। ঘরের মাঠে বার্সেলোনা হারে ২-১ গোল ব্যবধানে। এই জয়ে রিয়াল মাদ্রিদ লিগ টেবিলের শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হলেও, বার্সেলোনা নেমে যায় টেবিলের অষ্টম স্থানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link