More

Social Media

Light
Dark

আমি একজন সৈনিক

সেই অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে একটি নতুন কাব্য রচিত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ্যের কাব্য। যে কাব্য়ের মাহাত্ম্য এই মুহূর্তে শব্দ খেলায় বেঁধে ফেলা ভীষণ রকম কঠিন। তবে সেই কাব্য রচনায় দোয়াত-কালি কিংবা ধরুণ পুরো ডায়েরিটা যিনি তিনি তো বাংলাদেশের পেস বোলার এবাদত হোসেন।

স্যার ডন ব্রাডম্যান গড়ের বোলার আখ্যা পেয়ে রীতিমত টিটকারির শিকার হওয়া এবাদত এখন তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন কাব্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গোটা টেস্ট জুড়ে কি দারুণ বোলিং টাই না করে গেলেন এবাদত। প্রথম ইনিংসে উইকেটের দেখা না পেলেও সতীর্থদের উইকেট শিকারে করেছিলেন সহয়তা। ব্ল্যাকক্যাপস ব্যাটারদের পুরোটা সময় জুড়েই রেখেছিলেন চাপে। কিন্তু ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে টাইগারদের বোলিং আক্রমণের সম্পূর্ণ দায়িত্বভার নিজের বলিষ্ট সৈনিকের কাঁধে তুলে নিলেন।

নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের অর্ধেকের বেশি উইকেট পুরেছেন তিনি নিজের ঝুলিতে। শেষদিন সকালবেলা কিউই অভিজ্ঞ ব্যাটার রস টেলরের উইকেটটা নিয়ে নিজের ফাইফার পূর্ণ করার পর নিয়েছিলেন আরো একটি উইকেট। মোট ৪৮ রান খরচায় ছয় উইকেট নিয়ে ব্ল্যাকক্যাপসদের লিডকে আটকে রাখার মূল ভূমিকাটুকু তিনিই পালন করেন। কিন্তু এই পথ এত বেশি সুগম ছিলো না। কত বঞ্ছনা, কত ট্রল সহ্য করে তিনি টিকে ছিলেন নিজের লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন নিজের উন্নতিতে।

ads

নিজের এই ভাল করার স্পৃহা নিয়ে এবাদত হোসেন বলেন, ‘আমি গত বছর দুই ধরে আমাদের বোলিং কোচের সাথে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। ঘরের মাঠের পিচগুলোতে সাধারণত পেসারদের জন্য খুব বেশি সুবিধা থাকে না। তবুও আমি এবং আমার সতীর্থরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যেকোন কন্ডিশনে রিভার্স সুইং ব্যবহার করার কৌশল শিখতে। আমি সবসময় চেষ্টা করি স্ট্যাম্পের উপরিভাগে আঘাত হানতে। আমি জানি সফলতা পেতে হলে আমাকে ধৈর্য্য ধরতেই হবে।’

এবাদতের এমন ধৈর্যশীল পারফরমেন্সই বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিতে। যেই নিউজিল্যান্ডে মাটিতে খাবি খেতে হয় ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে সেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়ন ব্ল্যাকক্যাপসদের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে দারুণ এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলো বাংলাদেশ।

এই অবিস্মরণীয় জয় নিয়ে বেশ প্রফুল্লত এবাদত সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি মহান আল্লাহ তা’য়ালা কে ধন্যবাদ দিতে চাই আমাদের এই টেস্ট জয়ের জন্যে। বিগত ২১ বছরেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁদের মাটিতে আমাদের কোন জয় নেই। আমরা এবার একটা লক্ষ্য ঠিক করে এসেছিলাম। আমরা শপথ করেছিলাম যে আমরা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারাবোই। আমরা তাদেরকে হারালাম এবং নতুন প্রজন্মের জন্যে এক দৃষ্টান্ত রেখে গেলাম।’

আজকের হিরো, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এবাদত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন সদস্য়। সেই বাহিনীর হয়ে জাতীয় পর্যায়ে ভলিবল খেলারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। যেহেতু তিনি একজন সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন সেহেতু তিনি খুব ভাল করেই রপ্ত করেছিলেন স্যালুট দেওয়ার কলাকৌশল। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি সেই সামরিক স্যালুটকেই বানিয়েছেন নিজের সিগনেচার সেলিব্রেশন।

এ নিয়ে একবার বেশ আলাপও করেছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নেওয়া প্রায় প্রতিটি উইকেট পাওয়ার পর তিনি  তাঁর সেই সিগনেচার সেলিব্রেশন করেই উদযাপন করেন। দিনশেষে তাঁর এমন উদযাপন সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করে এবাদত বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন সৈনিক সুতরাং আমি জানি কি করে স্যালুট দিতে হয়। ভলিবল থেকে ক্রিকেটে আসা বাংলাদেশে বিমান বাহিনী থেকে জাতীয় দলে আসা এসব কিছুই বেশ বড় এক গল্পের অংশ।তবে আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটেকে এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে প্রতিনিধিত্ব করার এই যাত্রা বেশ উপভোগ করছি।’

হার না মানা এই যোদ্ধা তাঁর ক্রিকেটীয় লড়াই অব্যাহত রাখবে নিশ্চয়ই। বাংলাদেশকে এনে দেবে আরো অবিস্মরণীয় সব জয়। এবাদত হোসেন আপনাকেও স্যালুট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link