More

Social Media

Light
Dark

হৃদয় দিয়ে খেলবেন হৃদয়

ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে বড় কোন আসরকে সামনে রেখে দল ঘোষনায় মাঝেমধ্যেই চমক লক্ষ্য করা যায়। প্রাথমিক দলে না থেকেও কেউ কেউ চুড়ান্ত দলে সুযোগ পেয়ে যান। আবার অপ্রত্যাশিতভাবে কারো বাদ পড়ার খবরে ভক্তকুলে নেমে আসে রাজ্যের হতাশা। তবে সাফ ফুটবলের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ দলে তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি।

চমক যা ঘটেছে সেটি মোহাম্মদ হৃদয়ের দলে সুযোগ পাওয়া। ঘরো লাগা এই স্বপ্নপূরণে নিজেই যেন চমকে গেছেন। অথচ ৩৫ জনের প্রাথমিক দলে ছিলেন না এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। এরপর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের বিশেষ অনুরোধে দলে নেওয়া হয় ১৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়কে।

তাঁর নামটি যখন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) ও মালদ্বীপ ফুটবল অ্যাসোসিশেয়নে পাঠানো হয় তখনি বোঝা গিয়েছিল দলে থাকাটা নিশ্চিত তার। যদিও তখনো বাংলাদেশের চুড়ান্ত দল ঘোষনা করা হয়নি। অথচ সর্বশেষ মৌসুমে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডেও খুব বেশি ম্যাচে শুরুর একাদশে নামার সুযোগ ঘটেনি তাঁর। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএল ফুটবলের দ্বিতীয় পর্বে হৃদয়ের সাথে বেশ ভালভাবেই পরিচিত হতে থাকেন সতীর্থ থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষ আর সংবাদকর্মীরা।

ads

আবাহনীর তেমনি এক ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্ধী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের এক কর্মকর্তা হৃদয়কে দেখিয়ে বলেছিলেন, আগামী মৌসুমে তাকে দলে নিতে ক্লাবগুলো প্রতিযোগিতায় নামবে! সেটি যদিও নামা শুরু হয়নি, তবে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে নিজেদের একটা জায়গায় প্রমাণও করে ফেলেছেন। মামুনুল ইসলাম মামুনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া হৃদয়কে আবাহনী কোচ মারিও লেমোস দ্বিতীয় পর্বের প্রায় সব ম্যাচেই খেলিয়েছেন।

হ্যাংলা পাতলা গড়নের এই খেলোয়াড় প্রতিটা ম্যাচে যেমন উন্নতি করেছেন তেমনি নিজেকে প্রমাণের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করে গেছেন। সেই চেষ্টা এখন শুরু হয়েছে। নতুন মিশন লাল সবুজ জার্সিকে নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য। ক্লাবের হয়ে পারফরম্যান্সের প্রতিদানটা এত দ্রুততম সময়েল মধ্যে পেয়ে যাবেন ভানেননি। ’দক্ষিন এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন হৃদয়।

আগামী ১-১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারত, নেপাল এবং স্বাগতিক মালদ্বীপের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে ১৩তম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এবারের মালে সাফের ২৩ সদস্যের অন্যতম হলেন নারায়ণগঞ্জের ছেলে হৃদয়। অনেকটাই অপ্রত্যাশিত খেলোয়াড়রাই এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কোচ অস্কার ব্রæজোনের দলে জায়গা করে নিয়েছেন। দলে চমক বললে বলতে হবে হৃদয়ের সুযোগ পাওয়া।

এরপর বাফুফের জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটি যাচাই-বাছাই করে সবশেষ যে ২৬ জনের প্রাথমিক দল ঘোষণা করে; সেই তালিকায় হৃদয়ের নাম ছিল না। পরে তাকে ২৭ নাম্বার খেলোয়াড় হিসেবে যুক্ত করা হয়। তখন অনেকেই চমকে গিয়ে বলেছিলেন, হৃদয় কেন সাফের দলে!

কে এই হৃদয়, সেটা নিয়েও শুরু হয়েছিল আলোচনা। ফুটবলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, আবাহনীর কোটায় জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন হৃদয়! পরে অবশ্য বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যায়, বাফুফে সভাপতির চাওয়াতেই নাকি দলে নেয়া হয়েছে তরুণ মেধাবী এ ফুটবলারকে। আর সে কারণেই জাতীয় দলে এমন অন্তর্ভূক্তিতে হৃদয় নিজেও চমকে গেছেন। ভাবতে পারেননি এত তাড়াতাড়ি লাল-সবুজ জার্সিটা তার গায়ে উঠার সুযোগ তৈরি হবে। সেটা আবার বাংলাদেশের জন্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মতো বড় আসরে।

সুযোগ পাওয়ার পর নিজের অুনভুতি ব্যক্ত করে হৃদয় বলেন, ‘২০১৮ সালে যোগ দিয়ে আমি টানা তিন মৌসুম ধরে আবাহনীর হয়ে খেলছি। সবশেষ মৌসুমটা আমার জন্য দারুণ কেটেছে। সতীর্থ বলি আর বড় ভাই বলি সবাই বলাবলি করত, তুই শিগগিরই জাতীয় দলে ডাক পাবি। আমারও তাই বিশ্বাস ছিল একদিন জাতীয় দলে ঠিকই জায়গা করে নেব। কিন্তু সাফেই যে ডাক পাব এতটা আশা অবশ্য আমার ছিল না। আমাকে যারা দলে নিয়েছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এখন যদি আমি সেরা একাদশে জায়গা করে নিতে পারি, যারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন তাদের মুখ তো রক্ষা করবই, চেষ্টা থাকবে দেশ এবং দশের মুখও উজ্জ্বল করা।’

এদিকে জাতীয় দলে নতুন মুখ হলেও ফুটবলে কিন্তু নতুন নয় নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ হৃদয়। যদিও পরিবারের কেউ ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তারপরও খেলাটির প্রতি ভালবাসার কারণে সবারই সাপোর্ট পেয়েছেন। বাবা, মা আর ছোট এক ভাই নিয়ে হৃদয়ের ছোট্ট সংসার। যদিও এর আগে এ তরুণ ফুটবলার বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে নিজের মেধা-যোগ্যতা, দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৪ মক কাপ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে। ২০১৫ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ সাদউদ্দিনের সঙ্গে। বসয়ভিত্তিক সাফে খেলা এবং শিরোপা জেতার যেহেতু অভিজ্ঞতা তার আগে থেকেই রয়েছে। এবার বড়দের আসর অর্থাৎ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও জাতীয় দলের হয়ে ভালো খেলবেন বলে বিশ্বাস হৃদয়ের। এখন শুরুর একাদশে জায়গা করে নেওয়াই মূল লক্ষ্য তার। ফিফার ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে নাইজেরিয়ান থেকে বাংলাদেশি হয়ে যাওয়া এলিটা কিংসেলের হতাশার সন্ধ্যাটা আলোকিত হয়ে আসে হৃদয়ের জন্য।

ক্যারিয়ারটা পাইওনিয়ার ফুটবল দিয়ে শুরু হয় তার। এরপর তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগে খেলার পর ঢাকা আবাহনীতে নাম লেখান হৃদয়। ক্লাবটির জার্সিতে নিয়মিত না হলেও লিগের দ্বিতীয় পর্বে বেশ কয়েকটি ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স করেন এ ফুটবলার। এখন সিনিয়র দলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মতো ফুটবলের বড় মঞ্চে সুযোগ পাওয়ার পর বলেণ, ’আসলে আমার বয়স এখনো অনেক কম। ফুটবল ক্যারিয়ার তো মাত্র শুরু করলাম। এরই মধ্যে জাতীয় দলের সফরসঙ্গী হতে পারায় বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করছি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link