More

Social Media

Light
Dark

গুণে গুণে তিনখানা, চুম্বক লিভাকোভিচের দস্তানা

এন্ড গোল! মারিও প্যাসালিচ সেন্ডস ক্রোয়েশিয়া ইন টু দ্যা নেক্সট রাউন্ড…

কমেন্ট্রি বক্স থেকে এমন একটা সুরই ভেসে আসছিল জাপান-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ শেষে। কিন্তু একটা চিত্রনাট্যের শেষ দৃশ্যের চরিত্র তো আর সবসময় নায়ক হতে পারে না। জাপানের বিপক্ষে এ ম্যাচের নায়ক ছিলেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ।

গোলরক্ষক হয়েও কিভাবে একটি ম্যাচের নায়ক বনে গেলেন? গোলের খেলা ফুটবল। তাই ম্যাচজয়ের নায়করূপে বেশির ভাগ সময়ে ফরোয়ার্ডদেরই দেখা মেলে। কিন্তু যখন দলের স্ট্রাইকারও প্রতিপক্ষের গোলবারে গোল জড়ানোর নিশানা পেতে বেগ পায় তখন তো ত্রাতা রূপে হাজির হন ঐ গোলরক্ষকই। জাপানের বিপক্ষে ম্যাচেও তেমনই এক দৃশ্যপটের অবতারণা করেছিলেন ডমিনিক লিভাকোভিচ।

ads

যদিও গ্রুপ পর্বে স্পেন, জার্মানিকে হারিয়ে আসা জাপান গোলের দেখা পেয়েছিল শুরুতেই। তাতে ব্রাত্য হওয়ার জোগাড় হয়ে লিভাকোভিচের জন্য। কিন্তু শুরুতে প্রতিহত হওয়া মানেই তো আর হেরে যাওয়া নয়। পেরিসিচের গোলে ক্রোয়াটরা সমতায় এসেছিল পরের হাফেই। আর এর পরের দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন লিভাকোভিচ। ম্যাচের বাকিটা সময় ক্রোয়েশিয়ার গোলবার সামলেছেন একদম নিখুঁত ভাবে।

 

তবে সেখানেই তো আর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি। কারণ ম্যাচের নব্বই মিনিট পেরিয়ে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটও শেষ। কিন্ত স্কোরলাইন সেই ১-১ তেই আটকে আছে। কী আর করার। কাতার বিশ্বকাপে প্রথম কোনো ম্যাচে পেনাল্টি শ্যুটের স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ের সাক্ষী হলো গোটা বিশ্ব।

আর এমন সময়েই সমস্ত লাইমলাইট নিজের করে নিলেন ডমিনিক লিভাকোভিচ। জাপানের হয়ে মিনামিনোর নেওয়া প্রথম শটটি ঠেকিয়ে ফেললেন তিনি। লিভাকোভিচের সেখান থেকেই গল্প লেখা শুরু। গল্পের রেশ ছড়িয়ে দিলেন পরের শ্যুটেও। মিতোমার ডান দিকে নেওয়া শটটিও ঠেকিয়ে দিলেন অবলীলায়।

ততক্ষণে ম্যাচ বলতে গেলে ক্রোয়েশিয়ার দিকে ঝুঁকে গেছে। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার লিভাজো আবার তখন পেনাল্টি মিস করে বসেন। অপেক্ষাটা তাই আবারও বাড়বার শঙ্কা তৈরি হলো। কিন্তু লিভাকোভিচ সেই শঙ্কার মেঘ সরিয়ে যেন সমীকরণটাকে আরো স্বচ্ছ, শুভ্রের ন্যায় স্থাপিত করলেন। জাপানের নেওয়া চতুর্থ শটটিও তিনি ঠেকিয়ে ফেললেন। ৪ শটের মধ্যে তিনটিই সেভ! গোলবারের এমন আধিপত্যের পর কী আর কোনো শঙ্কা থাকে! ক্রোয়াটরাও তাই স্বাচ্ছন্দ্যে ম্যাচটা জিতে নিল। তবে তাদের সে পথটাকে সহজ করার নেপথ্যে ছিলেন এই ডমিনিক লিভাকোভিচ।

পেনাল্টি শ্যুটআউটে অবশ্য ৩ টি সেভ করে লিভাকোভিচ উঠে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে এক ম্যাচে তিনটি পেনাল্টি সেভ করার কীর্তি গড়লেন তিনি। এর আগে এ কৃতিত্ব ছিল ইংল্যান্ডের রিকোর্ডের (২০০৬) আর ক্রোয়েশিয়ার ড্যানিয়েল সুবাসিচের (২০১৮)। এবার কাতার বিশ্বকাপে পেনাল্টি শ্যুটআউটে তিনটি পেনাল্টি সেভ করে তাদের পাশেই নাম লেখালেন ডমিনিক লিভাকোভিচ।

ক্রোয়েশিয়ার রাশিয়া বিশ্বকাপ যাত্রা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একমাত্র ফাইনাল বাদে নকআউট পর্বের প্রত্যেকটি ম্যাচেই তারা সেবার অতিরিক্ত সময়ে খেলা নিয়ে গিয়েছিল। এবং সেই সব ম্যাচগুলো তারা জিতেই ফাইনালে পা রেখেছিল। ৪ বছর আগের বিশ্বকাপের আগের ধারা এবারও তারা অব্যাহত রেখেছে। জাপানের বিপক্ষে তারা ম্যাচটি জিতলো পেনাল্টি শ্যুটআউটে। অর্থাৎ অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ যাওয়া মানেই ক্রোয়েশিয়ার দাপট। অন্তত ইতিহাস সেই বার্তায় দেয়।

ক্রোয়েশিয়ার এবারের বিশ্বকাপ যাত্রা পরের বাঁধার নাম ব্রাজিল অথবা দক্ষিণ কোরিয়া। এই বিশ্বকাপ শুরুর আগে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নদের তালিকায় ক্রোয়েশিয়াকে সম্ভবত কেউই রাখেনি। তবে সেসব প্রেডিকশনের তোয়াক্কা না করে ঠিকই কিন্তু শেষ আটে নাম লিখিয়ে ফেলল লুকা মড্রিচের দল।

গতবার ফাইনাল হারের বিষণ্নতা নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করেছিল ক্রোয়েশিয়া। এবার হয়তো সেই ক্ষত ঠিকই মেটাতে চাইবে ক্রোয়াটরা। কারণ তারা ইতোমধ্যে বিশ্বকাপে শেষ আটের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। আর তিন ধাপ পেরোলেই অধরা সেই শিরোপার স্পর্শ।

হ্যা। পথটা এখনো অনেক কঠিন। তবে লুকা মড্রিচ, পেরিসিচ, লিভাকোভিচদের নিয়ে সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়াতে তো কোনো সমস্যা নেই। বিশ্বকাপের ফাইনালে কিভাবে যেতে হয় সেই অভিজ্ঞতা তো তাদের জানাই আছে। এখন সেই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে শিরোপা স্বপ্ন দেখাও নিশ্চয় খুব বাড়াবাড়ি হবে না।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link