More

Social Media

Light
Dark

ডান হাতের শিল্পী ব্যাটসম্যান

টেক্সটবুক ঘরানার টেকনিক্যালি গ্রেট ব্যাটসম্যান ক্রিকেটে অনেক এসেছেন। পাওয়ার হিটার কিংবা ন্যাচারাল স্ট্রোকমেকারেরও অভাব নেই। তবে খুব কম ব্যাটসম্যানই আছেন যারা তাদের স্কিলের সাথে আর্ট, স্টাইল এবং ফ্লেয়ারের সমন্বয় ঘটাতে পেরেছেন।

‘টিপিক্যাল লেফট হ্যান্ডার্স এলিগেন্স’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে ক্রিকেটে। যার কারণে নান্দনিক, এলিগ্যান্ট স্ট্রোকপ্লেয়ারদের বেশিভারভাগই দেখা যায় বাঁহাতি। যেমন- ব্রায়ান লারা, ডেভিড গাওয়ার, সাঈদ আনোয়ার, সৌরভ গাঙ্গুলি প্রমুখ। ডানহাতি ‘পিওর স্টাইলিস্ট’দের সংখ্যাটা একেবারেই হাতেগোনা। তাদেরই একজন হলেন ডেমিয়েন মার্টিন।

ডেমিয়েন মার্টিন বিখ্যাত ছিলেন তাঁর সিল্কি স্মুথ টাচের জন্য। বিশেষ করে অফসাইডে খেলা তাঁর গ্লোরিয়াস ব্যাকফুট ও ফ্রন্টফুট ড্রাইভগুলোর জন্য। সফট হ্যান্ডে খেলা সামান্য একটা ডিফেন্সিভ পুশকেও শুধুমাত্র পিওর টাইমিংয়ের গুণে বাউন্ডারিতে পরিণত করতে পারতেন তিনি।

ads

মার্টিনের ব্যাটিংয়ে এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীল ব্যাপার ছিল, ক্রিকেটের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘এফোর্টলেস বিউটি’। পেশি শক্তির ব্যবহার প্রায় ছিলই না বলতে গেলে, ছিল নমনীয় কব্জির হস্তশিল্প। তাঁর টাইমিং নাকি এতটাই মোলায়েম ছিল যে দেখে মনে হত বলকে পেটানোর বদলে আদর করছেন! ক্রিকেটের সৌন্দর্যপিপাসুদের কাছে, ইট ওয়াজ পোয়েট্রি ইন মোশন!

ডেমিয়েন মার্টিন ছাড়াও ডানহাতি ‘মিস্টার এলিগ্যান্ট’দের ভেতর আরও আছেন মার্ক ওয়াহ, মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, মোহাম্মদ ইউসুফ এবং মাহেলা জয়াবর্ধনে। এই ধরনের প্লেয়ারদের খেলায় একটা অদ্ভুত মাদকতা আছে; বারবার দেখলেও মন ভরে না।

মার্টিনের কথাই যদি বলি, তাঁর গ্রেসফুল স্কয়ার ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভ, ওয়ান লেগড পুল, কব্জির মোচড়ে দৃষ্টিনন্দন ফ্লিক ও ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মারা ছক্কাগুলো দেখে মুগ্ধ হন নি এমন দর্শক বোধ হয় খুঁজলেও পাওয়া যাবে না।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৯৮৭২ আন্তর্জাতিক রানের মালিক ডেমিয়েন মার্টিনের জন্ম ১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর, ডারউইনের নর্দান টেরিটরিতে। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ তিনি খেলেন ২০০৬ সালে।

নিষিদ্ধ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগেও (আইসিএল) নাম লিখিয়েছিলেন। সেখান থেকে ২০১০ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) হঠাৎ করেই নিলাম থেকে তাঁকে হুট করেই দলে টেনে নেয় সতীর্থ শেন ওয়ার্নের দল রাজস্থান রয়্যালস। যদিও, খেলতে পেরেছিলেন মাত্র একটা ম্যাচ, র‌য়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ২৪ বলে করেছিলেন ১৯ রান। এরপর আর তাঁকে একাদশেই রাখেনি রাজস্থান।

ম্যাচটা মার্টিনের ক্যারিয়ারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেবারই শেষবারের মত কোনো প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচে দেখা যায় মার্টিনকে। এরপর যা খেলেছেন তার সবগুলোই স্রেফ অপেশাদার প্রদর্শণী ম্যাচ।

ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই মার্টিনের। ২০১৩ সালে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘কোনো কিছু নিয়ে আক্ষেপ করি না। খেলাটা আমাকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। যত বয়স হয়েছে, তত আমাকে একটু একটু করে বুঝতে শিখিয়েছে। একটা ভুল হয়তো করেছি, আরেকটু ভালভাবে মিডিয়ার সাথে কথা বলা শেখাটা জরুরী ছিল। তাহলেও ওরাও হয়তো আমাকে বুঝতো। খেলোয়াড়ী সময়ে অনেকবার নিজেকে অভাগা মনে হয়েছে, তবে খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে বুঝি কতটা সৌভাগ্যবান হলে অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে খেলা যায়!’

ব্যাগি গ্রিনটা আজো যত্ন করে বাক্সবন্দী করে রেখে দিয়েছেন মার্টিন। খেলোয়াড়ী জীবনে অর্জিত কিছু ট্রফি আছে তাঁর ছেলের ঘরে। বসার ঘরে বিশ্বকাপজয়ী দলের সাথে একটা ফটোগ্রাফ ঝুলছে।

মাঝেমধে সেই ছবিটায় তাকিয়ে মার্টিন হারিয়ে যান অতিতে। কে জানে, অস্ট্রেলিয়ান বোর্ডও হয়তো মার্টিনের কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। দলের এখন যে অবস্থা, তাতে মার্টিনের মত কেউ থাকলে তো বর্তেই যাওয়া যেত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link