More

Social Media

Light
Dark

চৌধুরী সাহেব এবার আইপিএল মঞ্চে!

একজন সঠিক মেন্টর জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে। একজন প্রতিবেশি পারে জীবনে চলার পথে বিপদে-আপদে পাশে এসে দাঁড়াতে। আর এই দুই কাজটাই করেছিলেন বৈশালি সাওয়ান্ত। হয়ত চিনতে পারছেন না। চেনার খুব বেশি কারণও নেই। তিনি অতি সাধারণ একজন। তবুও মুকেশ চৌধুরীর গল্পে তিনি অতি অসাধারণ।

মুকেশ চৌধুরি, ভারতীয় বা-হাতি পেস বোলার। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল চেন্নাই সুপার কিংস শিবিরের নতুন মুখ। ইতোমধ্যেই তিনি চলে এসেছেন আলোচনায়। মূলত মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে তিনটি উইকেট নিয়ে সব আলোর দিক যেন এখন মুকেশ চৌধুরীর দিকে। এবারের আইপিএলের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়কে দূর্দান্ত এক ইয়োর্কারে কুপকাত করেছিলেন তিন।

তাছাড়া ভারতের অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রোহিত শর্মার উইকেট যেমন তিনি তুলে নিয়েছেন ঠিক তেমনি পকেটে পুরেছেন উদীয়মান তারকা ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের উইকেটও। সবাই ভাসছে তাঁর বন্দনায়। তাঁকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে ভারতের ক্রিকেট পাড়ায়। অথচ তিনি আর পাঁচটা সাধারণ তরুণের মত প্রত্যাশার চাপে ঘুরে বেড়াতেন বড় বড় শহরে। একটু ভাল থাকার আশায়।

ads

কিন্তু না তা আর হল না। বহু ভাগ্যক্রমে তিনি একজন প্রতিবেশি পেয়েছিলেন। মায়ের রুপে কিংবা কখনো বড় বোন। মুকেশ চৌধুরির আজকের এই পদযাত্রায় অনেকবড় ভূমিকা রেখেছেন তাঁরই প্রতিবেশি বৈশালি সাওয়ান্ত। তাঁর খেয়াল রাখা থেকে শুরু করে উৎসাহ দেওয়া, সঠিক উপদেশ দেওয়া থেকে শুরু করে সবটাই করেছিলেন সেই বৈশালি। কিন্তু এখানটায়ও দৃশ্যপট খানিক ভিন্ন হতে পারত।

কেননা তাঁদের প্রথম পরিচয়ের অভিজ্ঞতা মনে রাখার মত হলেও তা ভাল স্মৃতির কোটায় পড়ে না। বৈশালি সে স্মৃতি মনে করে বলেন, ‘সে (মুকেশ) ক্রিকেটের সাদা জার্সি পরা ছিল। আমি তাঁকে ধোনি বলে সম্বোধন করে জিজ্ঞেস করি, তাঁর ফ্ল্যাটে কি আমার ফার্নিচারগুলো রাখা যাবে কি না। তাহলে আমি আমার ইন্টেরিয়রের কাজটা শেষ করে ফেলতে পারতম। কিন্তু সে নাকোচ করে দেয়। এমনকি সে ফার্নিচার আনা-নেওয়াতেও কোন সাহায্য করে নি।’

তবে খানিকবাদেই তাঁদের ঘর গোছানোতে সাহায্য করেছিল মুকেশ। বৈশালি বলেন, ‘সে যখন সাহায্য করতে অসম্মতি জানায় তখন আমি বলি পরিবার থেকে কোন শিক্ষা দেওয়া হয় নাই? সে হয়ত তাঁর ভুল বুঝতে পারে এবং পরবর্তীতে আমাদের সাহায্য করে।’ এমন অভিজ্ঞতার পর নিশ্চয়ই পরবর্তী সময়ে সুসম্পক হওয়ার সম্ভাবনা অতিক্ষীন। তবে মুকেশ আর বৈশালিদের ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটেছে উল্টো।

সময়ের পরিক্রমায় তাঁদের সম্পর্ক হয়েছে গভীর। বৈশালি নিজের জায়গাটা করে নিয়েছেন মুকেশের জীবনে। তিনি হয়েছেন তাঁর মেন্টর, তিনি হয়েছেন তাঁর বড় বোন কিংবা তিনি হয়েছেন তাঁর অভিভাবক। মুকেশ চৌধুরি একাই থাকতেন ভারতের পুনেতে। বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করা মুকেশ নিজের জীবনে হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। তবে পরিবার আর আর্থসামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে নিজেকে পুরোপুরি সপে দিতে পারেননি ক্রিকেটকে।

মুকেশের পরিবার চেয়েছিল ছেলে যেন মনোযোগ দেয় পড়াশোনায়। তবে ছেলের মনোযোগের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ক্রিকেট। তাই বলে যে একেবারেই তিনি খারাপ ছাত্র ছিলেন না। মুকেশের পড়াশুনা নিয়ে বৈশালি বলেন, ‘সে পড়াশুনায় খুব ভাল ছিল। স্ট্যান্ডার্ড ইলেভেনে সে ৮০ শতাংশ মার্ক পেয়েছিল। তবে সে একদিন এসে আমাকে বলল সে ক্রিকেটে তাঁর ক্যারিয়ার গড়তে চায়।’

সেখান থেকেই শুরু নতুন এক গল্প। সে গল্পের প্রধান চরিত্র মুকেশ চৌধুরি। আর তাঁকে পেছন থেকে পূর্ণ সমর্থন জুগিয়ে গেছেন বৈশালি। শত ঝঞ্ঝা, শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে মুকেশ নিজের স্বপ্নের পথে হেটে চলেছেন।

বৈশালি তাঁর সকল প্রতিকূলতার সমাধান হয়ে হাজির হয়েছেন। মুকেশের অসুস্থতায় তাঁকে সেবা করেছেন। পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। ডায়েট চার্ট করে দিয়েছেন এবং তা মেনে চলতে সব সময় পুশ করে গেছেন। তাছাড়া অনুপ্রেরণামূলক বইও দিয়েছেন।

যখনই মুকেশ তাঁর লক্ষ্যের দিক থেকে খানিক সরে যেতে নিয়েছেন তখনই বৈশালি শক্তহাতে তাঁকে পথে ফিরিয়েছেন বারবার। রক্তের সম্পর্ক ছাড়া কেই বা এমন করে! তবুও বৈশালি কোন প্রকার স্বার্থ ছাড়াই মুকেশকে সহয়তা করেছেন। আজকের এই মুকেশে পরিণত হওয়ার পেছনে বৈশালির অবদান নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার মত নয়। এমন প্রতিবেশির প্রত্যাশাই হয়ত করেন সবাই। তবুও সবার ভাগ্যে তো আর জোটে না।

একজন সঠিক মানুষ যে বদলে দিতে পারে আরেকটি জীবনের গতিপথ তারই আরও একটি প্রমাণ হয়ে রইলো বৈশালি সাওয়ান্তের এমন উদারতা। প্রতিবেশিদের জন্যেও এক দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন বৈশালি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link