More

Social Media

Light
Dark

আজব ইনজুরি সমগ্র

জুলাই ২০১২। দক্ষিণ আফ্রিকা ইংলিশ সামারে ইংল্যান্ডের আতিথেয়তা নেবার জন্য নিজেদের শেষবারের মতো ঝালিয়ে নিচ্ছিলো সমারসেটের মাঠে, সমারসেটের বিপক্ষে এক গা গরম করার ম্যাচে। ইমরান তাহিরের একটা ফ্লিপার গামাল হুসেইনের ডিফেন্স ভেঙে ভাঙলো অফস্ট্যাম্প, বেল গিয়ে সরাসরি আঘাত করলো বাউচারের চোখের মনিতে। মাঠ থেকেই হাসপাতাল করা হয় বাউচারকে, সফর শেষ হয়ে যায় তাঁর।

আরো বড় দু:সংবাদ অপেক্ষা করছিলো প্রোটিয়াদের জন্য। মেডিকেল রিপোর্ট পরে জানান দেয় এ ইনজুরি যবনিকা টেনে দিয়েছে বাউচারের ১৪ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারটারও।

‘প্রচণ্ড দু:খের সাথে আমাকে বলতে হচ্ছে, আমি আর কখনোই ক্রিকেট মাঠে ফিরতে পারছিনা। চোখের ইনজুরিটার ভয়াবহতা এতোটাই বেশি যে, তা আমাকে আর বাইশ গজে ফিরতে দেবে না।’- বলে বাউচার তাঁর ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।

ads

এমন উটকো ইনজুরির খপ্পড়ে শুধু বাউচারেরই কপাল পুড়েছে, ব্যাপারটা এমন নয়। এমন কিছু বেঢপ ইনজুরির গল্পে আবারো চোখ বোলাতে যাচ্ছি আমরা।

  • গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)

মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে কাউকে টার্গেট করে ঘোষণা দিয়ে দেয়া, প্রত্যেকটা অ্যাশেজের আগে ভবিষ্যতবাণী করাতে গ্লেন ম্যাকগ্রা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সেবারের অ্যাশেজের আগেও দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫০০ উইকেটের মাইলফলকের সামনে। বলেছিলেন তাঁর ৫০০ তম শিকার হবেন মার্কাস ট্রেসকথিক। আর অ্যাশেজের ভবিষ্যতবাণীটা ছিলো ৫-০ এর। আর সেটা যে অজিদের পক্ষেই ছিলো তা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না?

নিজের ৫০০তম শিকার ট্রেসকথিককে বানিয়েছিলেন ঠিকই। অস্ট্রেলিয়াও প্রথম টেস্টটা জিতে তাঁর ভবিষ্যতবাণী সত্যি করার কক্ষপথেই ছিলো। কিন্তু বাঁধ সাধলো অদ্ভুত এক ইনজুরি।

দ্বিতীয় টেস্টকে সামনে রেখে এজবাস্টনে এক ট্রেইনিংপূর্ব ওয়ার্ম আপ সেশনে রাগবি টাচ গেম খেলছিলো অস্ট্রেলিয়া দল। ম্যাকগ্রাও ছিলেন সাথে। খেলার এক পর্যায়ে অসাবধানতাবশত: মাঠে রাখা একপ্টা স্ট্রে বলে বা দিয়ে বসেন তিনি। সাথে সাথে হসপিটালে পাঠানো হয় তাকে, রিপোর্ট থেকে তাঁর ছেঁড়া লিগামেন্টের খবর পায় অজিরা। অ্যাশেজ থেকে ছিটকে পড়েন ম্যাকগ্রা। তাঁকে হারানোর ধাক্কাটা ঠিক ঠাক সামলে নিতে পারেনি টিম অস্ট্রেলিয়া। প্রায় ১৬ বছর পরে অ্যাশেজের শিরোপা ইংল্যান্ডে রেখে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁদের।

  • ক্রিস ওল্ড (ইংল্যান্ড)

ক্রিস ওল্ড তাঁর ক্রিকেটীয় কীর্তির চেয়ে তাঁর অদ্ভুতুড়ে সব ইনজুরির জন্য বেশি পরিচিত। মূলত ক্রিস ওল্ড ছিলেন একজন ইংলিশ ফাস্ট বোলার যিনি কিনা লোয়ার অর্ডারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রান যোগ করতে পারেন। ১৯৮১ অ্যাশেজে হেডিংলিতে ইয়ান বোথামের অবিস্মরণীয় সেই কামব্যাক করার ম্যাচে যে ক’জন টেলএন্ডার বোথামের সঙ্গ দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ওল্ড। ওল্ডকে এখনো স্মরণ করা হয় সে ম্যাচে বোথামের সঙ্গী হওয়ার জন্য নয়, তাঁর এক অদ্ভুতুড়ে ইনজুরির জন্য। একবার এক টেস্টের স্কোয়াড থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন হাঁচি দিয়ে পাঁজর ভেঙে!

  • জিমি অ্যাডামস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

বেতন ভাতা নিয়ে ঝামেলার কারণে সেবার ক্যারিবীয়দের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরই হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিলো। ঝাড়া কয়েকঘন্টা আলাপ-আলোচনা, দর কষাকষির পরে খেলোয়াড়রা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সম্মতি প্রকাশ করেন।

সে সফরে ক্যারিবীয়দের সাথে ছিলেন বর্ষীয়ান খেলোয়াড় জিমি অ্যাডামসও। খেলোয়াড়দের নিয়ে বিমান যখন জোহ্যানেসবার্গের দিকে ছুটছে তখন বিমানে ব্রেড স্লাইস করছিলেন জিমি। এই করতে গিয়েই অসাবধানতাবশত: নিজের হাতে ছুঁড়ি বসিয়ে দেন তিনি।

বিমানের বাকি যাত্রীরা যখন ব্যাপারটা খেয়াল করে তখন রক্তক্ষরণের ফলে নিম্ন রক্তচাপের শিকার হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন অ্যাডামস। পড়ে এক তরুণ ডাক্তার এসে রক্ত পড়া বন্ধ করেন এবং হাতে সেলাই লাগান। এই ইনজুরির ফলে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা সফর তাঁকে সাইডবেঞ্চে বসে কাটাতে হয়। অবশ্য এমন ইনজুরিতে কেবল জিমি একাই পড়েন নি, ২০০০-০২’ মৌসুমে বাউচারও মাংস কাটতে গিয়ে একবার এমন ইনজুরিতে পড়েছিলেন।

  • ট্রেভর ফ্র্যাঙ্কলিন (নিউজিল্যান্ড)

এ তালিকায় ট্রেভর ফ্র্যাঙ্কলিনের ইনজুরিটাই ছিলো বেশি গুরুতর। ১৯৮৬ তে ইংল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড দলের সফর শেষে ঘরে ফেরার পথে এয়ারপোর্টে দলের লাগেজবাহী মোটরচালিত ট্রলির সাথে ধাক্কা লাগে তাঁর। যার ফলে তাঁর পায়ে অনেকগুলো ফ্র্যাকচার ধরা পড়ে, যা তাঁকে দেড় বছর ক্রিকেটের ধারে-কাছে ঘেঁষতে দেয়নি।

ইনজুরি কাটিয়ে পরে যখন তিনি বাইশ গজে ফেরত আসেন এরপরে আর পূর্ণ গতিতে দৌড়াতে পারেননি। এতদসত্বেও তিনি চার বছর পরের অরেকটা ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসে বিরুদ্ধ ইংলিশ কন্ডিশনে করেন এক দুর্দান্ত সেঞ্চুরি যা তাঁর গোটা ক্যারিয়ারেরই একটা প্রতীকী ছবি। প্রতিকূল পরিবেশে-পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যাবার ছবি।

ট্রেভর তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করেন ২১ টেস্টে ২৩.০০ গড়ে ৮২৪ নিয়ে। কিন্তু বোকা পরিসংখ্যানের কি আর সাধ্য আছে তাঁর বীরত্বগাঁথা জানান দিয়ে দেবার?

  • ম্যাথু হেইডেন (অস্ট্রেলিয়া)

২০০৬-’০৭ মৌসুমের শুরুতে আঙুল ভেঙে বসেন হেইডেন। যার ফলে ক্রিকেট থেকেও দূরে থাকতে হয় তাঁকে। দীর্ঘবিরতি যেন তাঁর ফিটনেসে প্রভাব না ফেলতে পারে সেজন্য তিনি সকাল বিকালে জগিংয়ে বের হতেন হেইডেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক সকালে স্থানীয় এক কুকুর তাড়া করে বসে তাঁকে এবং তিনি আক্রান্ত হন। কুকুরটা তাঁর গোড়ালিতে কামড়ায় এবং পাঁচ সেন্টিমিটার ক্ষত সৃষ্টি করে।

হেইডেন পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কুকুরটা আমাকে এভাবে পেয়ে বসবে ভাবতে পারিনি কখনো। মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলাম আর কুকুরটা তাড়া করে বসলো! বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

কয়েক মাসেই হেইডেন সব ইনজুরি থেকে নিস্তার লাভ করেন। বাইশ গজে ফিরে আসেন এবং বোলারদের ত্রাস হয়ে আরো একবার আবির্ভূত হন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link