More

Social Media

Light
Dark

বন্ধু চল, বলটা দে!

সময়ের সাথে সাথে বিশ্বের আনাচে কানাচে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। ক্রিকেটটা হয়েছে আরো বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ, আরো বেশি পেশাদার। পেশাদারিত্বের পরও ক্রিকেটাররাও মানুষ। যাদের দূর আকাশের তারা ভাবেন দর্শকরা – তাঁদেরও ঠিক আমাদের মতই একটা জীবন আছে।

আর সেই জীবনে বন্ধুও আছে। আর যেহেতু তাঁদের জীবনে ক্রিকেট মিলেমিশে একাকার হয়েছে, তাই ক্রিকেট মহলেই বন্ধুত্বের শিকড় গেড়েছেন তাঁরা। আজকে এমনই কিছু বন্ধুত্বের কথা বলবো – যাদের বোঝাপড়া কেবল মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও বেশ দৃঢ়। বন্ধত্বের এই গল্পগুলো পাঠকদের জন্যও খুব মুখরোচক।

  • ইয়ান বোথাম ও ভিভ রিচার্ডস

ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই প্রাপ্তির নাম স্যার ভিভ রিচার্ডস ও স্যার ইয়ান বোথাম। দুজনই ক্রিকেটের সৌন্দর্য্যে যোগ করেছেন রঙিন এক পালক। তবে দুজনের দেশ, সংস্কৃতি, বেড়ে ওঠা সবই যে আলাদা। এমনকি ব্রিটিশরা কম পয়সায় ক্যারিবীয়দের দিয়ে অমানবিক পরিশ্রম করাতেন সেই ইতিহাসও আছে।

ads

ভিভ রিচার্ডস ব্রিটিশদের প্রতি তাঁর ক্ষোভের কথা সংবাদ মাধ্যমে বলেছেনও। তবে জাতিতে জাতিতে এই বিভেদ, ফারাকের অবসান ঘটিয়ে দুজন যেন মিলে মিশে একাকার। এখনো ক্রিকেট জগতে বন্ধুত্ব বললে প্রথম যে নাম দুটি আসে সেটা হলো ভিভ-বোথাম।

ক্যারিয়ারের শুরুতে সামারসেটের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে থাকার জায়গা নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন ভিভ। সেদিন বোথাম ভিভের কাঁধে হাত রেখে বলেছেন বন্ধু চল। আবার বোথাম যখন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ক্রিকেট খেলতে যেতেন তখন স্বপরিবারে উঠতেন ভিভের বাড়িতে।

কে বলবে মাঠে এই দুজনই পরের দিন কঠিন প্রতিপক্ষ। আবার সমারসেট ভিভকে দল থেকে ছাটাই করলে বন্ধু বোথামও সামারসেটকে বিদায় বলেছিলেন। সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন লৌহমানব ভিভ রিচার্ডস। আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান করেও ভিভ উদযাপন করেননি প্রতিপক্ষ দলে বন্ধু বোথাম আছে বলে।

  • বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স

নাম দুটো দেখে হয়তো অবাক হতে পারেন। দুজনই ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। এছাড়া দুইজন ক্রিকেট খেলেন দুই দেশের হয়ে। তবুও এই দুইজনের বন্ধুত্ব ক্রিকেট পাড়ায় বেশ জনপ্রিয়।

তাঁদের বন্ধুত্বের শুরুটা মূলত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। বিরাট কোহলি আইপিএলের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়ক। ২০১১ সালে কোহলির দলে খেলতে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সও। সেখান থেকেই দুজনের বন্ধুত্বের শুরু। আজ দশ বছর পরে এসে তাঁদের বন্ধুত্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এছাড়া বেঙ্গালুরুর হয়ে দুজনে মিলে কত বিধ্বংসী সব জুটি গড়েছেন।

  • মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মানজারুল ইসলাম রানা

মাশরাফি ও মানজারুল ইসলাম রানার বন্ধুত্বটা ক্রিকেট দুনিয়ার আবেগী এক ঘটনা। দুজনই লম্বা সময় ঢাকার ক্লাব আবাহনীর হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে দুজনে একসাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন। সবসময়ই এই দুই বন্ধু এক রুমে থাকতেন।

তবে একসাথে থাকতে গিয়ে দুজনের একটা সমস্যাও হতো। রানা অন্ধকারে ঘুমাতে পারতেন না, ওদিকে মাশরাফি আবার ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া ঘুমাতে পারতেন না। তাই আগে লাইট বন্ধ করে মাশরাফি ঘুমাতেন আর সেই ঘরে রানা জেগে বসে থাকতেন।

মাশরাফি ঘুমিয়ে পড়লে পরে রানা আবার আলো জ্বেলে ঘুমাতেন। এছাড়া ২০০৭ বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান রানা। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া মাশরাফি যখন খবর পান এরপরের দিন বাংলাদেশের ম্যাচ ভারতের সাথে। বন্ধুর মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেই মাশরাফি সেদিন ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ ধবসিয়ে দিয়েছিলেন।

  • মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সুরেশ রায়না

দুজনই ভারতের ক্রিকেটের মহাতারকা। সাবেক অধিনায়ক ধোনি দেশটিকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপও। সেই বিশ্বকাপ দলে ছিলেন ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়নাও। দুজনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন একই দিনে। এমনকি সুরেশ রায়না এটাও জানিয়েছেন যে ধোনি আইপিএলকে বিদায় জানালে তাঁরও আর আইপিএল খেলার ইচ্ছা নেই।

ফলে মাঠের বাইরে তাঁদের বন্ধুত্বটা কত দৃঢ় সেটা বোঝাই যাচ্ছে। বাইশ গজেও দুজনে মিলে দারুণ সব জুটি গড়েছেন। একসাথে চেন্নাইয়ের হয়ে খেলেছেন লম্বা সময়। বিশ্বকাপে তাঁদের দুজনের সেই জুটি এখনো ক্রিকেট ভক্তদের মনে গেঁথে আছে।

  • সৌরভ গাঙ্গুলি ও শচীন টেন্ডুলকার

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই রত্ন। একজন তাঁদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান আরেকজন সেরা অধিনায়ক। দুজনের বন্ধুত্বটাও ভারতের ক্রিকেট পাড়ায় বহুল আলোচিত। দুজনে একসাথে ক্রিকেট খেলেছেন বয়সভিত্তিক দল থেকেই। ভারতের হয়ে দুজনে কত রেকর্ড গড়া জুটিও গড়েছেন।

তবে মাঠের বাইরেও দুজনের বন্ধুত্ব ছিল অমলিন। দুজনে নাকি কোন এক অনুষ্ঠানে গিয়ে কাঁকড়া খাওয়ার প্রতিযোগিতা করেছিলেন। পুরো টেবিল ভরে ফেলেছিলেন কাঁকড়ার খোল দিয়ে। আবার শচীন নাকি একবার দাদাকে কোন এক হোটেলে খেতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে মুরগির মাংস বলে সৌরভকে কুমিরের মাংস খাইয়ে দিয়েছিলেন শচীন।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link