More

Social Media

Light
Dark

দুর্বল হৃদয়ের জন্য ক্রিকেট নয়!

ম্যাচশেষের সংবাদ সম্মেলনটা দেখে জানতে পারলাম, বাংলাদেশ শুধু জয়ের জন্যই মাঠে নেমেছিল। সেমিফাইনালে খেলতে আগে ব্যাটিং কিংবা পরে ব্যাটিংয়ের যে সমীকরণ, এসব তাঁরা মাথায়ই নেননি।

কিন্তু, আফগানিস্তান যখন ১১৫ রানে তাঁদের ইনিংস শেষ করে, তখন বাংলাদেশ সেমিফাইনালের লক্ষ্যে একটা চেষ্টা চালানো যায় বলে অনুভব করতে পারে। ১২.১ ওভারে ১১৫ তাড়া করার লক্ষ্যে সেই পরিকল্পনাটা ছিল খুবই অল্প পরিসরে, যার স্থায়িত্বও ছিল অত্যন্ত কম সময়ের জন্য।

লক্ষ্যটা ছিল মেরে খেলে প্রথম পাওয়ারপ্লেটা কাজে লাগানোর। তবে যদি সেটা করতে গিয়ে কয়েকটা উইকেট পড়ে যায়, তখন তাতে লাগাম টেনে জয়ের জন্য খেলার পরিকল্পনায় পুনরায় ফিরে যাওয়াই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য।

ads

হলোও তা-ই। প্রথম তিন ওভার সম্পন্ন হওয়ার আগেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সেখানেই তাঁরা সেমিফাইনালে খেলার পরিকল্পনার যবনিকাপাত ঘটান।

তখন তাঁদের একটাই পরিকল্পনা- যেভাবেই হোক ম্যাচটা জিতে মাঠ ছাড়া। খুব সম্ভবত এই পরিকল্পনার একটা অংশ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মাত্র ৬৪ রানের মাথায় অর্ধেক ব্যাটার সাজঘরে ফিরে গেলে ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি।

দশম ওভারের খেলা। ১ বলে ১ রান করে স্ট্রাইকে রিয়াদ। সেমিতে যেতে হলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৯ বলে ৪৩ রান। নূর আহমেদের করা ওই ওভার পুরোটাই মোকাবেলা করেন রিয়াদ। সংগ্রহ করেন মোটে ৪ রান।

অবাক করার বিষয় হলো, ওভারের পাঁচটা বলই তিনি সিঙ্গেল নেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিলেন এবং অফ স্টাম্পের বাইরের বলগুলা কাট করতে নয়তো সফট হ্যান্ডে খেলতে গিয়ে বারবার পরাস্ত হয়েছেন। বাকি একটা বলেই শুধু ব্যাট চালিয়েছেন, যে বলে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।

রিয়াদের ওই অ্যাপ্রোচটা ছিল যারপরনাই অদ্ভুত ও বিবেচনাহীন। এমন না যে তিনি মারতে গিয়ে বলগুলা নষ্ট করেছেন। সেটা হলেও অন্তত মানা যেত তিনি চেষ্টা করেছেন বলে। তিনি আসলে চেষ্টাই করেননি। অবশ্য সে চেষ্টার দায়িত্বে তাঁকে নামানোও হয়নি।

মানলাম, রিয়াদকে ম্যানেজমেন্ট থেকে উইকেট ধরে রাখার দায়িত্বে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেটাও কি তিনি ঠিকঠাক করতে পেরেছেন? পারেননি। পরের ওভারেই যে ৯ বলে ৬ রান করে আউট হয়ে যান তিনি!

বাংলাদেশের রান তাড়ায় এ-রকম আরেকটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের জন্য দলের সবচেয়ে ছন্দে থাকা ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়কে নামানো হয়েছে ছয় নম্বরে, যা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন অধিনায়ক।

এ, কারণে হৃদয়ের আগে নামানো হয়েছে দুই নড়বড়ে ব্যাটার সাকিব ও সৌম্যকে। সৌম্য তাও মন্দের ভালো হিসেবে ১০ বলে ১০ রানের ইনিংস খেলেছেন। আর সাকিব প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে বিদায় হয়েছেন।

মোটাদাগে বাংলাদেশ আজ সেমিফাইনালের সমীকরণ মেলানোর সাহসটা করতে পারেনি। নিজেদের ওপর বিশ্বাস তো রাখেইনি। এসব এড়িয়ে ম্যাচ জেতার যে মূল্যহীন লক্ষ্যের পেছনে ছুটল দলটা, শেষমেশ সেটাও পূরণ করতে পারেনি।

আমার আসলে কোনোভাবেই মাথায় ধরে না, বাংলাদেশ শুধু জয়ের জন্য খেলে আজ কী এমন অর্জন করতে চেয়েছিল! সেমিফাইনালের জন্য চেষ্টা না করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লে তাঁদের কি আদৌ কোনো লাভ হতো? সেই তো টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ই নিতো। তার চেয়ে বরং সকলে মিলে চেষ্টা চালিয়ে হেরে গেলেও দলটা বাহবা পেত।

আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের চেয়ে তুলনামূলক কম সামর্থ্যবান কিংবা কোনো সহযোগী দেশ হলেও সেমিফাইনাল খেলার সমীকরণটা মেলাতেই আজ মাঠে নামত। অথচ ৩৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একটা দল হয়েও এই সাহসটুকু দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link