More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

নিপুণ ধারাবাহিকতা

১৬ ওভার পর্যন্ত বোলিংয়ে আসেননি। হয়ত অধিনায়কের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। তবে পরিকল্পনা দলের কিংবা অধিনায়কের যাই থাকুক মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুণ প্রতিটা ম্যাচেই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নামেন। এদিনও তাই হল।

তিনি এলেন ১৭ তম ওভার করতে। আর এবারো দলকে তিনি নিরাশ তো করেননি বরং আবারো মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে না পারার আক্ষেপে পুড়ে নিখাঁদ এক স্বর্ণে পরিণত হয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চিটাগাং পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় চিটাগাং চ্যালেঞ্জার্স ও ফরচুন বরিশাল। টসে জিতে ব্যাট করার সিধান্ত নেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তে ঠিকঠাক প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি বরিশালের ওপেনিং জুঁটি। শুরুতেই শরিফুল ইসলামের বলে সেই মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মুনিম শাহরিয়ার। সেখান থেকে হাল ধরার চেষ্টা করেন ক্রিস গেইল ও নাজমুল হোসেন শান্ত।

ads

তাঁরা নিজেদের মতো করে সময় নিয়ে ইনিংসের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিতে শুরু করেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকে থাকা হয়নি গেইলের। শান্তও এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বলি হয়ে হাঁটা ধরেন সাজঘরের পথে। হয়ত চিটাগাং ভেবেছিল বরিশালকে চাপে ফেলে আটকে ফেলা সম্ভব অল্প রানে।

কিন্তু তা যেন হতেই দিচ্ছিলেন না সাকিব আল হাসান। চিটাগাং স্পিনারদের বল মাঠ ছাড়া করে সাকিব তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারে ২০তম অর্ধশতক। ১৬১ স্ট্রাইকরেটে রান করা সাকিব বেশ হুমকির কারণই হয়ে যাচ্ছিলো চিটাগাং এর জন্যে।

কিন্তু সেই যে মৃত্যুঞ্জয়ের ভিন্ন পরিকল্পনা। তিনি যেন আর বেশিদূর এগোতে দিতে নারাজ সাকিবকে। হয়ত আগে বলটা হাতে পেলে মৃত্যুঞ্জয় সাকিবকে প্যাভিলনে ফেরানোর প্রচেষ্টাটা আগেই করতে পারতেন। কিন্তু সেই যাই হোক এখন ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে থিতু হওয়া সাকিব হাত খুলে খেলতে চাইলেন নবাগত মৃত্যুঞ্জয়কে।

কিন্তু বিধিবাম! ব্যাটে বলে সংযোগটা ঠিক হলো না সাকিবের। দূর আকাশের দিকে অগ্রসর হওয়া বল জমা পড়লো মাটিতে থাকা আফিফ হোসেনের হাতে। ব্যাস! নিজের বিপিএল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই দেশের সবচেয়ে বড় তারকাকে নিজের উইকেটে পরিণত করলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।

এখানেই তো ক্ষান্ত হওয়া কথা না মৃত্যুঞ্জয়ের। বিপিএলের অভিষেক ম্যাচেই হ্যাট্রিক করা বোলার তো আর অল্পতেই সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়। তিনিও হলেন না স্বাভাবিকভাবে। কার্যত আর একটি মাত্র ওভারই করতে পারতেন মৃত্যুঞ্জয়। সেই একটি ওভারেই আজকের দিনের নায়ক হওয়ার একটা সুযোগ ছিল তাঁর। তিনি কাজেও লাগালেন। বুদ্ধিমান ছেলে! হেলায় কি করে হারিয়ে যেতে দেন একটি সুযোগ?

ফরচুন বরিশালের ইনিংসের ১৯তম ওভারে আবার বল করতে এলেন মৃত্যুঞ্জয়। আগের ওভারে পাঁচ রান দেওয়া মৃত্যুঞ্জয় নিজের দ্বিতীয় ওভারে যেন আরো বেশি কৃপণ হওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়েই তিনি বল হাতে তুলে নিলেন। সেই ওভারে প্রথম বলেই নিজের বলে নিজেই দূর্দান্ত এক ক্যাচ ধরে তুলে নেন জাতীয় দলের উইকেট রক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানের উইকেট। মাঝে একটি রান ব্যয় করেন।

তারপর পর পর দুই বলে দুই উইকেট পেয়ে যান মৃত্যুঞ্জয়। প্রথমে ফেরান ইরফান শুক্কুরকে। সহয়তা করেন সেই চ্যাডউইক ওয়ালটন। তারপরের বলে ফেরান মুজিব-উর রহমানকে। ক্যাচ ধরেন আফিফ। মৃত্যুঞ্জয়ের রুপকথার গল্পে আবারো সুযোগ হ্যাট্রিক করবার।

কি অভূতপূর্ব এক রেকর্ডের দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে তরুণ মৃত্যুঞ্জয়। পর পর দুই ম্যাচেই হ্যাট্রিক। হতে পারতো হয়ত। কিন্তু নবাগত মৃত্যুঞ্জয় নিজের নার্ভটা ধরে রাখতে পারেননি কিংবা বিষন্ন শীতের রাতের কুয়াশা মৃত্যুঞ্জয়কে সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিতে দিতে চায়নি। নো বল করেন মৃত্যুঞ্জয়।

রেকর্ড বইয়ে নাম লেখানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলো মৃত্যুঞ্জয়ের। তবুও নিশ্চয়ই এই ম্যাচও মনে রাখার মতোই এক ম্যাচ হয়ে রইলো মৃত্যুঞ্জয়ের জন্যে। শেষমেশ তিনি ম্যাচ শেষ করেলন ২-০-১২-৪ এমন এক ম্যাচ ফিগার নিয়ে। সেই সাথে মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই তিনি চলে এসেছেন বিপিএলের অষ্টম আসরের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায়।

যথাযথ সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই মৃত্যুঞ্জয় সবোর্চ্চ উইকেট শিকারি হতে চাইবেন। নিজের জন্যে স্মরণীয় একটা টুর্নামেন্ট করে রাখতে চাইবেন তিনি। ভুলে যেতে চাইবেন অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল না খেলতে পারার গল্প। নতুন গল্পের কেন্দ্রে সর্বদাই থাকবেন হার না মানা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link