More

Social Media

Light
Dark

অন্দরমহলে অন্তর্কলহ

ভারতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের সব উপাসনালয়। প্রায় দেড়শ কোটির দিকে ধাবিত হওয়া জনগোষ্ঠির ধর্মে বৈচিত্র্য থাকা খুব স্বাভাবিক। তবে সব ধর্ম ছাপিয়ে ক্রিকেট যেন পৌঁছে গেছে ধর্মের কাছাকাছি পর্যায়ে। ক্রিকেটার হবার স্বপ্নে কত শিশু-কিশোর যে ভারতের বিভিন্ন ময়দানে ঘাম ঝড়াচ্ছে তাঁর ইয়ত্তা নেই। তাছাড়া ভারত জাতীয় দলের ক্রিকেট ম্যাচকে ঘিরে পুরো ভারত জুড়েই বিরাজ করে স্থবিরতা কিংবা শিথিলতা।

১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জয়ই পরবর্তীতে ভারতীয় ক্রিকেটের এমন অভাবনীয় উত্থানের এক ও অনন্য কারণ বলে মত ক্রিকেট বোদ্ধাদের। তাঁরপর থেকে প্রতিটি দশকে যেন বিশ্ব ক্রিকেটে ভারত নিয়ম করে উপহার দিয়েছে তারকা। যারা কিনা বিশ্বক্রিকেট শাসন করেছেন, দাপট দেখিয়েছেন রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছেন সময়ের পরিক্রমায়। এত সব কিছুর ভিরে বেশকিছু খেলোয়াড়দের অন্তকোন্দল দলের পারফর্মেন্সের গ্রাফ নিম্নমুখী করার পাশাপাশি কালিমা লেপে দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের বিশেষ কিছু অংশে। আজ সেই সকল গল্প থাকছে।

  •  কপিল দেব ও সুনীল গাভাস্কার

ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম দিকের দুই মেগাস্টার কপিল দেব ও সুনীল গাভাস্কার। ক্যারিয়ারের শুরুতে এই দুই খেলোয়াড়দের মাঝে ছিল বেশ ভাল বোঝাপড়া এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু মাঝ পথে সম্পর্কে আসে ভাঙ্গন। ভুল বোঝাবুঝি ছিল প্রধান কারণ। ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ড দল এসেছিলো ভারতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন সুনীল গাভাস্কার।

ads

টেস্টের তৃতীয় টেস্টে কপিল দেবে একাদশ থেকে বাদ পড়া নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা এবং ভুল বোঝাবুঝির। মূলত দ্বিতীয় টেস্টে একটি অনিয়ন্ত্রিত শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান কপিল। ড্র-য়ের পথে থাকা টেস্ট ম্যাচে কপিল দেবের ওমন শট নির্বাচক ও দল ম্যানেজমেন্টের কাছে দৃষ্টিকটু মনে হলে কপিলকে শাস্তি স্বরুপ তৃতীয় টেস্টে একাদশ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই নির্বাচক প্যানলের সদস্য ছিলেন গাভাস্কার। কপিল সন্দেহ করেন গাভাস্কার প্যানেলকে উৎসাহিত করেছিলো তাঁকে দল থেকে বাদ দিতে। ২০০১ সালে গাভাস্কার জানান তিনি এমন কোন কাজ করেননি।

  • দিলীপ ভেঙসরকার ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন

সালটা ১৯৮৯, ভারত গিয়েছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। একটি পূর্ণ সিরিজ খেলতেই ভারতের যাত্রা ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখানে ইতিহাসে অন্যতম বাজে পারফর্মেন্সের প্রদর্শন করে পুরো ভারত দল। ৪-০ ব্যবধানে হেরে যায় টেস্ট সিরিজ এবং ওয়ানডে সিরিজে হয় ৫-০ ব্যবধানে ওয়াইট ওয়াশ। দিলীপ ভেঙসরকার সেই ভারতীয় দলের অধিনায়ক। স্বাভাবিকভাবে তিনি ছিলেন তাঁর খেলোয়াড়দের প্রতি বেশ ক্ষিপ্ত।

বিশেষ করে তাঁর রাগ ছিলো মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের উপর। কেননা পুরো সিরিজ জুড়েই অহেতুক সব শট খেলে আউট হয়েছিলেন আজহার। পরবর্তী সময় কপিল দেব তাঁর বই ‘স্ট্রেইট ফ্রম দ্য হার্টে’ দিলীপ আজহারের মধ্যকার সম্পর্কের অধঃপতন নিয়ে লিখেছিলেন। আজহারের একটি দৃষ্টিকটু আউটের রিয়েকশনে জনসম্মুখে ভেঙসরকার রাগারাগি করেছিলেন আজহারের সাথে এবং দিলীপ এও বলেছিলেন, ‘কেউ যদি ফাস্ট বল খেলতে ভয় পায় তবে তাঁর টেস্ট ক্রিকেট খেলা উচিৎ না।’

ভারতীয় ক্রিকেটের দুই কিংবদন্ততি রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকার। একই সময়ে তাঁরা হাল ধরে রেখেছিলেন ভারতের ক্রিকেটকে এবং শাসন করেছিলেন বিশ্বের বোলারদের। ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন সময়ে এই দুই খেলোয়াড়ের সম্পর্কে ধরে ফাঁটল। বেশ আশ্চর্যজনক এক কান্ডই করে বসেছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়।

পাকিস্তানের মুলতানে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে চালকের আসনে ছিলো ভারত। তাঁদের সংগ্রহ ছিল পাঁচ উইকেটের ৬৭৫ রান। শচীন ছিলেন টেস্টে তাঁর চতুর্থ দ্বিশতকের কাছাকাছি। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেন রাহুল। তখন শচীনের রান ছিলো ১৯৪। শুধু যে শচীন সেদিন অবাক হয়েছিলেন তা নয়। তাঁর সাথে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব সেদিন অবাক হয়েছিল রাহুলের সেই বিতর্কিত কান্ডে। এর পর থেকে শচীন রাহুলের সাথে ব্যক্তিগত জীবনে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন।

  • সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়

ক্রিকেটের ময়দানে কিংবা ময়দানের বাইরে বেশ ভাল একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি ও ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ভারতের সাবেক কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের সময়কালে ভারতীয় ক্রিকেটে ঘটেছে নানানরকমের অবাঞ্ছিত ঘটনা। তাঁর মধ্যে একটি সৌরভ-রাহুল সম্পর্কের চির। ধারণা করা হতো চ্যাপেলে ভারতীয় বেশকিছু সিনিয়র খেলোয়াড়দের সাথে ছিল মতের অমিল।

সেই সকল খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন খোদ অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। কথিত আছে যে গ্রেগ চ্যাপেল নানানরকমের উঁজবুকি পন্থা অবলম্বন করতেন সৌরভকে অধিনায়কত্বের পদ থেকে বিতারিত করতে। পরবর্তীতে তিনি অবশ্য সফলও হন। শুধু অধিনায়কত্ব নয় দল থেকেও বাদ পড়ে যান সৌরভ। তাঁর জায়গায় দ্রাবিড়কে অধিনায়ক বানান চ্যাপেল। এরপর হালকা চির ধরে সৌরভ-রাহুলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে। তবে এ বিষয় তাঁরা দুইজনই সর্বদা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন।

  • বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নতুন অধিনায়ক পেয়েছে ভারত। বিরাট কোহলির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রোহিত শর্মা। বিগত বেশকিছু বছর ধরে এই দুইজন তারকা খেলোয়াড় রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে তাঁদেরকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা আলোচনার বিষয়বস্তু অধিকাংশ সময় ছিল নেতিবাচক। কেননা ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই এই দুই খেলোয়াড়ের মাঝে একটা কোন্দলের আভাস পাওয়া যায় প্রতিনিয়ত।

সেই বিশ্বকাপের সহকারী অধিনায়ক ছিলেন রোহিত শর্মা, বিরাট অধিনায়ক। সেই টুর্নামেন্টে নেওয়া বেশকিছু সিধান্তে নাখোশ ছিলেন রোহিত। সেই নিয়ে কথিত আছে যে বাকবিতণ্ডাতেও জড়িয়েছিলেন দু’জন। সেই থেকে সম্পর্কের ফাঁটল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে ধারণা করা হয়।

এখন যখন বিরাটের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওয়ানডেতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রোহিত তখন পুরোনো সেই কেচ্ছা সামনে আসছে নতুন করে। কথার চালাচালিতে সৃষ্টি হচ্ছে বিরতর্কের, গুঞ্জনে ছেয়ে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link