More

Social Media

Light
Dark

দ্রাবিড়ের তুলনায় টেস্টের কঠিন পরিস্থিতিতে শচীন কি একেবারেই ব্যর্থ?

অনেকেই বলে থাকেন যে কঠিন পরিস্থিতিতে রাহুল দ্রাবিড় যতবার ভারতকে বাঁচিয়েছেন, শচীন ততবার পারেননি এবং এই কারণে তাঁরা টেস্টে দ্রাবিড়কে শচীনের থেকে এগিয়ে রাখেন। এটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে প্রথমেই যেটা মনে হলো, যে দ্রাবিড় যেহেতু অনেক বেশি রক্ষণাত্মক খেলতেন, দর্শকদের মনে একটা ধারণা হয়েছিল যে মাটি কামড়ে ম্যাচ বাঁচাতে হলে দ্রাবিড়কে দরকার, এবং টেস্ট ম্যাচে এই ধরণের ব্যাটিংই উপযোগী।

একথা সত্যি যে দ্রাবিড় শচীনের থেকে অনেক কম টেস্ট খেলেও টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড অর্জন করেছেন যা এখনো অটুট। অন্যদিকে, কম বল খেলেও দ্রাবিড়ের থেকে বেশি রান করেছেন শচীন। অর্থাৎ, দ্রাবিড় বল খেলবেন বেশি, আর শচীন কম বল খেললেও বেশি রান করবেন। কিন্তু সেটা যার যার খেলার ধরণ। কিন্তু দলের বিপদের সময় সচিন কতবার রুখে দাঁড়িয়েছেন – কিন্তু দ্রাবিড় পারেননি – এমন কতবার হয়েছে? দেখা যাক কিছু উদাহরণ।

১৯৯৮ ভারত অস্ট্রেলিয়া সিরিজের তৃতীয় টেস্টে শচীন ১৭৭ করেন, প্রথম ইনিংসে, দ্রাবিড় করেন ২৩, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সিধুর ৭৪! দল ৪২৪ রানে অলআউট হয়।  ১৯৯৮ সালেই নিউজিল্যান্ড সফরে বেসিন রিসার্ভ দ্বিতীয় টেস্টে শচীন দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৩ করেন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল ৪৮! সৌরভ ও আজহার যুগ্মভাবে করেন, দ্রাবিড় করেন ২৮! ১৯৯৯ চেন্নাইয়ে ১৩৬ – দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মোঙ্গিয়া – ৫২! দ্রাবিড় ১০!

ads

মেলবোর্ন বক্সিং ডে টেস্ট ১৯৯৯, শচীন ১১৬, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গাঙ্গুলি ৩১, দ্রাবিড় মাত্র ৯ রান করেন! ২০০১ ব্লুমফন্টেন টেস্টে যদিও শেবাগকে পাশে পেয়েছিলেন, তবে ৬৮/৪ থেকে ১৫৫ রানের ইনিংস খেলেন, যখন কঠিন পিচে দল বিপদে। মিস্টার ডিপেন্ডেবল দ্রাবিড় ২ রানে আউট হন। ২০০৫ সালে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে দিল্লিতে দ্বিতীয় টেস্ট, সচিন করেন ১০৯, দ্রাবিড় ২৪! দল ২৯০ তে অলআউট হয়।

২০০৮ সালের অ্যাডিলেড টেস্ট। শচীন করেন ১৫৩, ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান কুম্বলের ৮৭! দ্রাবিড় করেন মাত্র ১৮! সৌরভ গাঙ্গুলির শেষ টেস্টে শচী ১০৯ ও সৌরভ ৮৫ করেন। দ্রাবিড় ০ রানে আউট হন। চেন্নাইতে ২০০৮ সালে ৩৮৭ তাড়া করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জেতার সময় শচীন ১০৩* করেন, সহায়তা পেয়েছিলেন শেবাগ ও যুবরাজের থেকে, কিন্তু দ্রাবিড় গুরুত্বপূর্ণ চেস এ ‘০’ রানে আউট হন।

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে প্রথম টেস্টে হেরে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে শচীন একা লড়াই করে ১০০ করেন, দলের বাকি কেউ ৪০ পেরোননি। দ্রাবিড় যদিও এই টেস্টে ছিলেন না, তবে শচীন কঠিন পরিস্থিতিতে একা লড়াই করেছিলেন, যেটা দ্রাবিড় করে থাকেন বলে অধিকাংশের ধারণা! শ্রীলঙ্কায় মেন্ডিসকে সামলে ২০৩ করার সময় দলের বাকিদের থেকে সাহায্য পেলেও, দ্রাবিড় মাত্র ৩ রানে আউট হয়েছিলেন। ভারত ৭০৭ করে, টেস্ট ড্র হয়।

২০১০ সালের ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে শচীন ২১৪ করার সময় দ্রাবিড় ১ রানে আউট হন। মুরালি বিজয় ১৩৯ করেন, আর কেউ ৩২ এর বেশি রান করতে পারেননি। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে জীবনের শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি ১৪৬* করার সময় গম্ভীরের ৯৩ থাকলেও, দ্রাবিড় মাত্র ৫ রানে আউট হন।

এই পরিসংখ্যানে দ্রাবিড়ের অভিষেক এর আগের টেস্টগুলো ধরিনি, ধরলে সেখানেও এরকম উদাহরণ অনেক পাওয়া যাবে। সেঞ্চুরি ছাড়াও যদি ৭০-৮০ রানের ইনিংস গুলি ধরা হয়, তাহলেও আরো কিছু ইনিংস পাওয়া যেতে পারে। তবে আমার লেখার উদ্দেশ্য এই নয় যে দ্রাবিড়কে ছোট করা বা দ্রাবিড় বড় ব্যাটসম্যান ছিলেন না এটা প্রমান করা।

আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, কঠিন পরিস্থিতি, বিদেশের মাঠে, দলের অন্যেরা রান পাচ্ছেন না, এরকম পরিস্থিতির অন্তত দুটি যেখানে সত্যি, সেখানে এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে শচীন দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু দ্রাবিড় ব্যর্থ হয়েছেন। এরকম আরো কিছু ইনিংস আছে যেখানে শচীন সেঞ্চুরি করেছেন, দ্রাবিড় ও ৫০+ করেছেন, সেগুলো এখানে ধরা হয়নি, সেখানে শচীন দ্রাবিড় দুজনেই সফল। আবার একইভাবে খুঁজলে এরকম বেশ কিছু ইনিংস পাওয়া যাবে যেখানে দ্রাবিড় দলকে বাঁচিয়েছেন, শচীন ব্যর্থ।

কিন্তু একমাত্র দ্রাবিড়ই দলের বিপদে রুখে দাঁড়াতেন, শচীন শুধু সহজ পরিস্থিতিতে বা অন্যেরা যেখানে রান করছেন সেখানেই শুধু রান একুমুলেট করতেন, দলের স্বার্থে অবদান রাখতে পারতেন না, এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভুল কথা এবং সঠিকভাবে স্ট্যাটিসটিক্স না পর্যালোচনা করার ফল। এখানে উদাহরণে তুলে আনা বেশ কিছু টেস্ট ভারত শচীনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হেরেছে, হয়তো দ্রাবিড় একটু পাশে দাঁড়িয়ে গেলে ম্যাচের রেজাল্ট অন্য হতেও পারতো?

আর দ্রাবিড় যদি সব সময়ই দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়াতেন, তাহলে কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর এতগুলো ব্যর্থতার উদাহরণ তুলে আনা যেত না, যেখানে শচীন এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে দলের বাকিরা সফল হয়েছেন। সাফল্য ব্যর্থতা সবার থাকে, একজনের ব্যর্থতা আর আরেকজনের সাফল্য খুঁজে এনে তুলনা করলে সেটা সঠিক তুলনা হয় না। সাফল্যের সাথে সাফল্যের এবং ব্যর্থতার সাথে ব্যর্থতার তুলনা হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link