More

Social Media

Light
Dark

ফিরে আসুক শুভাগত হোমরা

শ্রীলঙ্কা সিরিজের দুইটি টেস্ট প্রায় শেষ কিন্তু এই সিরিজের জন্য চূড়ান্ত দল নির্বাচনের আগে বিসিবি ২১ সদস্যের দল ঘোষনা করে যেখানে বড় চমকের নাম ছিলো শুভাগত হোম চৌধুরী।

সাম্প্রতিক ঘরোয়া লিগে ১৩৪ ও ৬ উইকেট, এছাড়াও নিয়মিত ভালো ফর্ম, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিবেচনা করে সাকিবের বদলি হিসেবে নেওয়া হয়।  প্রায় ৫ বছর পর দলে ডাক পেলেও চূড়ান্ত দলে জায়গা করতে পারেনি ময়মনসিংহের এই সিনিয়র ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তার জায়গা পাওয়া না পাওয়া এসব নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এখন বলবো সেটি নিয়েই।

শুধু দেশ সেরা নয়, সব ফরম্যাটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এই বছর শেষে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করে তিনি চলমান শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে ছুটি নিয়ে কেকেয়ারের হয়ে আইপিএল খেলছে। প্রথমত সাকিব থাকাটা সব সময় ব্যাটিং ও বোলিংয়ের একটা ভারসাম্য, কোচ-সতীর্থরা যেটা বলে ১১ জন না খেলে ১২ জন খেলা।

ads

কারণ দলে একজন পূর্নাঙ্গ ব্যাটসম্যান ও পূর্নাঙ্গ বোলার হিসেবে খেলেন এবং পারফর্ম করেন। সেই সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে তার বদলি হিসেবে খেলা স্বাভাবিকভাবে চাপের। সেখানে ব্যাটিং বোলিং দুই ডিপার্টমেন্টে ভালো করার প্রত্যাশার ভার তো রয়েছে ই। তার উপর বর্তমান স্যোশাল মিডিয়ায় সৌম্য, শান্ত, লিটন, মিঠুনরা খারাপ খেললে তাদের চরম ট্রল ও বাজে মন্তব্যের শিকার হতে হয়। এই ট্রল ও বাজে মন্তব্যের শিকার গত ২০১৬ থেকে সামলে আসছে শুভাগত হোম চৌধুরী।

২০১৬ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে ম্যাচ জিতিয়ে না আসতে পারার কারণে এখনো তাকে দর্শকদের কথার হেনস্তার শিকার হতে হয়।  সেই ২০১৬ এর পর ৫ বছর পেরিয়ে গেছে, সে বছরই শুভাগত তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু এই ৫ বছরে শুধু বয়সেই বাড়েনি, আরও অনেক পরিণত হয়েছেন এই ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।  দল থেকে বাদ পড়ার পরও ঘরোয়া প্রতিটি টুর্নামেন্টে রান করেছে নিয়মিত।  রানের পাশাপাশি তার কার্যকর অফ স্পিনে উইকেট ও পেয়েছেন নিয়মিত। ৩৫.০৭ গড়ে ৫টি সেঞ্চুরি ও ১৩৪ টি উইকেট নিয়েছেন শেষ ৫ বছরে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের ধারাবাহিক পারফরমার হয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রমাণ রাখতে পারেনি।

ইয়েন চ্যাপেলের একটা বিখ্যাত উক্তি, ‘যে ভালো খেলে সে সব ফরম্যাটেই ভালো খেলে।’ শুভাগত হোমের ঘরোয়া ক্রিকেট পরিসংখ্যান সেই সামর্থ্যের কথাই বলে।  কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাকে তিন ফরম্যাটে খেলিয়ে ও সঠিক সময় সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। সেবার ২০১৬-১৭ পর্যন্ত জাতীয় দলের আশে পাশে থেকেও নিজের যোগ্যতার সঠিক প্রমাণ করতে পারেনি শুভাগত হোম চৌধুরী।  এই ক্ষেত্রে তিনি সময় ও সুযোগ দুটোই পেয়েছিলেন, পাননি শুধু প্রত্যাশা মোতাবেক ভালো রান ও উইকেট।

টেস্টে মূল দলে ডাক না পেলেও এতো বছর পর ডাক পাওয়া টা তার সামর্থ্যেরই প্রমাণ দেয়। আবার আশাবাদী করে সেই সব ক্রিকাটারদের ও যারা এই বয়সেও পারফর্ম করে যাচ্ছে কিন্তু দলে ডাক পাচ্ছে না।  বর্তমান দেশের ক্রিকেটের এই অবস্থায় তৃণমূল থেকে শুরু করে, ঘরোয়া ক্রিকেট, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাঠামোগত অনেক পরিবর্তনের প্রয়োজন হলেও সবার আগে প্রয়োজন বাংলাদেশ ক্রিকেটের কালচার ও মানসিকতার পরিবর্তন। সেই জায়গা থেকে শুভাগত এর অন্তর্ভুক্তি কিছুটা হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন দিচ্ছে!

এই পরিবর্তনে এখন ই যে দলের ফলাফল ভালো হ হবে তা না।  এই পরিবর্তনগুলোর যথার্থ ফলাফল আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ও ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের মধ্যে পাবো।  আলাদা টেস্ট দল গড়ে তোলা, টেস্ট ক্রিকেটারদের ঘরোয়া পারফর্মেন্স মূল্যায়ন, টেমম্পারমেন্ট, ফিটন্যাস ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আরো শক্ত অবস্থানে যেতে হবে।

সাকিবের ‘বদলি’ হিসেবে জায়গাটা বাদ দিলে আমরা শুভাগত হোমের ব্যাক্তিগত পারফর্ম্যান্সে গেলে তাকে অবশ্যই দলে রাখার যোগ্য মনে করতে পারি।  প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু তাকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে দলে রাখার কথা বলেছেন যার অফ স্পিন টাও কাজে আসবে।  এই কারণে নাম্বার ৬ এ মিঠুন- রাব্বির থেকে তারই খেলার সম্ভাবনা বেশি ছিলো।  প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানোর জন্য শ্রীলঙ্কায় টিমের সাথে নিয়ে গেলেও পরে উইকেটের ধরন ও কন্ডিশন বিবেচনায় তাকে মূল দলে রাখা হয়নি।

তরুণ ক্রিকেটাররা তাদের প্রতিভার ঝলক ক্যারিয়ারের শুরুতেই দেখিয়ে পরে অফ ফর্ম, ফিটন্যাস ইস্যু ইত্যাদি কারনে বাদ পড়ে যায়, গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের চাকচিক্যে হারিয়ে যায় অনেকে।  নিজের সামর্থ্য, যোগ্যতার প্রতি সুবিচার করতে পারে না আর। এভাবে অনেক ক্রিকেটাররা এসেছে, হারিয়ে গেছে, তবে গত দেড় দশক ধরে রয়ে গেছে শুধু সেই কিছু সিনিয়র ক্রিকেটাররাই।  বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, সিনিয়র ক্রিকেটার, তরুণ ক্রিকেটার, পাইপলাইন এসব ছাপিয়েও ফিরে আসুক শুভাগত হোমরা যারা এসব আসা যাওয়া ক্রিকেটারদের মাঝে সুযোগ পাননা, আর পেলেও এসব বদলি হিসেবে খেলার চাপ, প্রত্যাশার চাপ, নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ না করতে পারা এসব চাপে আর ভালো করতে না পেরে হারিয়ে যান সেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাওয়ার চক্রে।

কখনোই আর লাইম লাইটে না থেকে হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাংলাদেশ অনেক। নাফিস ইকবাল, রাজিন সালেহ, মেহরাব হোসেন জুনিয়র, তালহা জুবায়ের, হাসিবুল ইসলাম শান্ত, নাজমুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, নাজিম দ্দিন, আফতাব আহমেদ, শাহরিয়ার নাফীস, আব্দুর রাজ্জাকরা। এখন ও হারিয়ে যাচ্ছেন তুষার ইমরান, নাঈম ইসলাম, সানজামুল ইসলাম, সাকলাইন সজীব, নাইম ইসলাম, মার্শাল আইয়্যুবরা।

ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ৯৭ ম্যাচে ৩৮.৪৫ গড়ে ৫২৬৮ রান করা ও ২১৩ উইকেট নেওয়া শুভাগত হোম এখন ও এই টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে কার্যকর হতে পারে টি টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে।  তিনি শুরু থেকেই বিপিএলের প্রতিটি আসরেই বিভিন্ন দলের হয়ে খেলেছেন এবং পারফর্ম করেছেন। টি টোয়েন্টির পাওয়ার প্লে তে ও ডেথ ওভারে রান ঠেকানোর জন্য তার কার্যকরি অফ স্পিনের পাশাপাশি বিশেষ করে তাঁর লোয়ার অর্ডারের ব্যাটিং বেশ কার্যকরী।

সেই সময় দ্রুত রান তোলা, বাউন্ডারি বের করার সামর্থ্য তাকে ফিনিশারের রোল অনুযায়ী স্যুট করে যেটা বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে পায়নি। বিপিএল এ যে দলের হয়ে খেলেছেন সেই দলের লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং এ ফিনিশার হিসেবে বেশ কার্যকর ছিলেন। তার কার্যকরীতা প্রমাণ পায় তার ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটে। গত বমি বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপ টুর্নামেন্টে মাত্র ৭ ম্যাচ খেলে ৭২ রান নিলেও তার স্ট্রাইকরেট ছিলো ১৮৪.৬২ এবং ৬.৬৭ ইকোনমিতে উইকেট সংখ্যা ১০।

২০১১ সালে অভিষেকের পর তাকে ওয়ানডে, টেস্ট, টি-টোয়েন্টিতে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলালেও টিম ম্যানেজমেন্ট তার এই মারকুটে ব্যাটিং এর কথা বিবেচনা করে টি টোয়েন্টি দলে ফিনিশার রোলের জন্য সুযোগ দিতে পারেন। করোনার সমস্যা না হলে এবার টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ সেই ভারতে যেখানে ২০১৬ সালে শুভাগত শেষ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে ব্যর্থ ছিলেন। কিন্তু এই ৫ বছর পর আর ব্যর্থতা না, সাফল্য অর্জনেই ফিরে আসুক শুভাগত হোমরা। আর সব ছাপিয়ে সাফল্য অর্জন হোক বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link