More

Social Media

Light
Dark

কেউ কেউ ফিরে আসেন হার্শাল হয়ে

উমরান মালিকের বুনো গতি কিংবা মোহাম্মদ সিরাজের সুইং তাঁর বোলিংয়ে নেই। দলের ব্যর্থতায় বাদ পড়াদের তালিকায় সবার প্রথমেই থেকেছে তাঁর নাম। একবার তো ক্রিকেট ছেড়ে কাজ নিয়েছিলেন এক দোকানে। কিন্তু যার শয়নে-স্বপনে ক্রিকেটার হবার বাসনা, তিনি কি করে বাইশ গজ থেকে দূরে থাকেন। হার্শাল প্যাটেলও পারেননি, ফিরে এসেছেন নিজের পুরনো ডেরায়। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন আইপিএলের সেরা বোলারে।

২০০৯ সালে বয়সভিত্তিক ভিনু মানকড় ট্রফিতে আলো ছড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আবির্ভাব হার্শালের। ছোটদের বিশ্বকাপেও অংশ নিয়েছেন ভারত জাতীয় দলের হয়ে। কিন্তু ক্যারিয়ারের সেই শুরু থেকেই অবহেলার শিকার হয়েছেন এই তারকা, নিজের রাজ্য গুজরাটের ঘরোয়া ক্রিকেটের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন। সেই সময়ে অভিমানে একপ্রকার ক্রিকেট থেকে সরে যান, পরিবারের সাথে চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে এক পাকিস্তানির দোকানে কাজ করতেন হার্শাল।

কিন্তু যার মনেপ্রাণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বপ্ন, তাঁর মন কি টিকে সূদুর বিলেতে! হার্শাল ফিরে আসেন ভারতে। নিজের রাজ্যের বদলে খেলতে শুরু করেন হরিয়ানার হয়ে। অভিষেক মৌসুমেই দারুণ বল করে দলকে নিয়ে যান রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে। সেই সুবাদেই কিনা আইপিএলের দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু দলে ভেড়ায় তাঁকে।

ads

হার্শালের বলে কখনোই বুনো গতি কিংবা আগ্রাসন ছিল না, ছিল না সুইংয়ের বিষাক্ত ছোবল। ফলে আইপিএলের শুরুর দিনগুলোতে আসা-যাওয়ার মাঝেই ছিলেন, আলাদা করে নিজেকে চেনানোর মতো কিছুই করতে পারেননি। মাঝে দল বদলে দিল্লী ক্যাপিটালসে নাম লেখালেও গল্পটা বদলায়নি, হার্শাল রয়ে গিয়েছিলেন আড়ালেই। হয়তো দুয়েক ম্যাচে আলো ছড়াতেন, কিন্তু কখনোই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি।

তবে সবকিছু বদলে দেয় ২০২১ আইপিএল। সেবারে মৌসুম শুরুর আগে দিল্লী ক্যাপিটালস থেকে তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনে ব্যাঙ্গালুরু। ততদিনে অভিজ্ঞ হার্শালও বুঝে গেছেন নিজের সীমাবদ্ধতা। ফলে গতি বাড়ানোর চাইতে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনতেই বেশি মনোযোগী হন। ২০২১ মৌসুমে যেন নতুন এক হার্শালকেই দেখেছিল গোটা ক্রিকেটবিশ্ব, ১৫ ম্যাচে ৩২ উইকেট শিকার করে বনে যান আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

তবে উইকেট শিকারের চাইতে হার্শাল বেশি নজর কাড়েন ডেথ ওভারে তাঁর দুরন্ত বোলিংয়ের জন্য। ইনিংসের শেষদিকে মারমুখী ব্যাটারদের সামনে হার্শাল যেন ভয়ডরহীন এক যোদ্ধা। তাঁর লাইন-লেংথ আর স্লোয়ার-কাটারের কোনো জবাব ছিল না প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের।

সেই সুবাদেই কিনা পরের মৌসুমে তাঁকে নিয়ে নিলামে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছিল। শেষপর্যন্ত ১০.৭৫ কোটি রুপির বড় অংকের বিনিময়ে তাঁকে ধরে রাখে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। আগের মৌসুমের পুনরাবৃত্তি করতে না পারলেও ২১ উইকেট নিয়ে দলকে টিকিয়ে রাখেন শিরোপা দৌড়ে।

তবে এবারের মৌসুমের শুরুতে যেন পুরনো ছন্দ খানিকটা হারিয়ে ফেলেছিলেন। শেষদিকে দেদারসে রান হজম করছিলেন, তাঁর বোলিংয়ের রহস্য যেন বুঝে ফেলেছিলেন ব্যাটাররা। লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে তো মানকাড মিস করে সমর্থকদের হাস্যরসের শিকার হয়েছেন। তবে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ম্যানেজমেন্ট হার্শালের উপর ভরসা রেখেছিল। সেই ভরসার প্রতিদান কি দারুণভাবেই না দিলেন এই তারকা!

টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইন আপের দল রাজস্থান রয়্যালস। তাদের বিপক্ষে তিনি জ্বলে উঠলেন আপন মহিমায়। শেষ ওভারে জয়ের জন্য রয়্যালসের বিশ রান দরকার হলেও হার্শাল দশ রানের বেশি করতে দেননি। চার ওভারে ৩২ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার করেন। আর তাতেই বনে যান ব্যাঙ্গালুরুর জয়ের নায়ক।

ভারত জাতীয় দলে পেসারদের জায়গা পাবার লড়াইটা এখন আগের চাইতে অনেক কঠিন। হার্শালও জানেন সেটা, সে কারণেই কিনা তরুণদের সাথে আজো লড়ে যান সেই শুরুর দিনগুলোর মতো। নিজের শেষ বেলাটা রাঙিয়ে তুলতে চেষ্টার কমতি রাখতে চাইবেন না এই পেসার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link