More

Social Media

Light
Dark

চন্দ্রবিজয়ী চন্দ্রকান্তের পাণ্ডিত্য

১৯৯৯ সাল, ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। ২৩ বছর আগে সেবার কর্ণাটকের বিরুদ্ধে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের নেতৃত্বে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে নেমেছিল মধ্যপ্রদেশ। কিন্তু শিরোপা নিয়ে উল্লাস করা হয়নি তাঁদের। অধিনায়ক চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত পারেননি দলকে ট্রফি জেতাতে। শেষ পর্যন্ত হেরে চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল চন্দ্রকান্ত আর তার সতীর্থদের।

এরপর কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ। ২৩ বছর পর একই পরিস্থিতিতে আবারো অশ্রুজলে ভিজতে হয়েছে চন্দ্রকান্তকে। তবে এখন এটি আনন্দের কান্না। নিজের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার আনন্দ। ব্যাঙ্গালুরুতেই রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে মুম্বাইকে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের নামে করেছে মধ্যপ্রদেশ।

৪১ বারের রেকর্ড চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান মাত্র চার উইকেট হারিয়েই তুলে নেয় মধ্যপ্রদেশ। শাহরুখ খানের অভিনীত ‘কবির খান’ চরিত্রটি বাস্তবেই দেখা গেল চন্দ্রনাথের কল্যানে।

ads

আর এতেই কোচ হিসেবে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মত রঞ্জি শিরোপা নিজের করে নিয়েছেন চন্দ্রকান্ত পন্ডিত। এই নিয়ে রঞ্জির সর্বশেষ ছয় আসরের চারটিই শিরোপা চন্দ্রকান্তের দলই জিতে নিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, তাঁর হাতে দলের দায়িত্ব দিলে শিরোপার সম্ভাবনা আসলেই অনেকখানি বেড়ে যায়।

তবে শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব একাই নিজে নিতে রাজি নন চন্দ্রকান্ত। বরং রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে শিষ্যদের অবদানকেই বড় করে দেখেন এই অভিজ্ঞ কোচ। মধ্য প্রদেশের কোচের মুখে শোনা গিয়েছে আদিত্য শ্রীবাস্তব, রজত পাতিদার, কুমার কার্তিকদের প্রশংসা। কোচ হিসেবে অন্য যে কোনো রঞ্জি শিরোপার চেয়ে, এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি যে ভিন্ন সেটিও জানাতে ভোলেননি তিনি।

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত মুখ এই কোচ। ২০০২-০৩ সালে প্রথমবার কোচ হিসাবে মুম্বাইয়ের সঙ্গে রঞ্জি ট্রফি জিতেছিলেন পণ্ডিত। তার পরের মৌসুমে আবারও রঞ্জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই। সেবারও দলটির কোচ হিসেবে ছিলেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত।

এরপর অনেকটা সময়ই আড়ালে ছিলেন তিনি। ২০১৫-১৬ পুনরায় মুম্বাইকে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন করিয়ে লাইমলাইটে ফিরেন। এরপর আবার অচেনা বিদর্ভ ক্রিকেট দলকে ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮, টানা দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন করে তাক লাগিয়ে দেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত।

সর্বশেষ মধ্যপ্রদেশকে শিরোপা জিতিয়ে ষষ্ঠবার কোচ হিসেবে রঞ্জি জয় করলেন পন্ডিত। দুইযুগ আগে যা করতে পারেননি খেলোয়াড় হিসেবে, তাই এবার করেছেন কোচ হয়ে। যেন শাপমোচনের বাস্তব প্রমাণ। তিনি যে রঞ্জি’র ইতিহাসে অন্যতম সেরা কোচ, সেটি নিয়েও আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না।

খেলোয়াড়ি জীবনে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান ছিলেন চন্দ্রকান্ত পন্ডিত। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ এই সময়টাতে ভারত জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি টেস্ট এবং ৩৬টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এছাড়া ১৯৮৭ সালে ভারতের বিশ্বকাপগামী দলের সদস্য ছিলেন তিনি।

অবশ্য, খেলোয়াড় হিসেবে খুব একটা সফলতা পাননি চন্দ্রকান্ত। নিজের খেলা দুই ফরম্যাটেই তার গড় ছিল পঁচিশেরও কম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেঞ্চুরি কিংবা হাফসেঞ্চুরি দূরে থাক চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস-ই নেই।

হয়তো কোচিং ক্যারিয়ারে এভাবে দুইহাত ভরে দেবে বলেই ‘খেলোয়াড় চন্দ্রকান্ত’কে বঞ্চিত করেছিলেন ক্রিকেট বিধাতা। কোচ আর খেলোয়াড় ছাড়াও আরেকটি পরিচয় রয়েছে চন্দ্রকান্ত পন্ডিতের।

২০১৩ সালে অল ইন্ডিয়া জুনিয়র সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। অন্যতম সফল এই কোচের কোচিংয়ের মূল দর্শন সঠিক পরিকল্পনা এবং দলীয় শৃঙ্খলা। দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কেই আগলে রাখেন চন্দ্রকান্ত।

ভুল ত্রুটি শুধরে দিয়ে গড়ে তোলেন ভবিষ্যতের জন্য। আবার নিজের শিষ্যদের কড়া শাসনেও রাখেন তিনি। সবমিলিয়ে নিজের ছাত্ররূপী খেলোয়াড়দের কাছে চন্দ্রকান্ত পন্ডিত একজন আদর্শ শিক্ষক বটে। আর এই আদর্শটাই হয়তো পাঁচ টেস্ট আর ৩৬ টি-টোয়েন্টির আক্ষেপ কিছুটা হলেও কমাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link