More

Social Media

Light
Dark

দুরন্ত দিনের আলোকচ্ছটা

একটু স্বচ্ছলতার অন্বেষণে দূর দেশে পারি জমানোর গল্পগুলো কোন কালেই খুব নতুন কিছু নয়। এমন হাজারটা উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে স্বচ্ছলতার অন্বেষণের একটা পর্যায় যদি স্বপ্নের মত এক জীবন হয় তবে নিশ্চয়ই তেমন ঘটনা খুব বেশি নেই পৃথিবীর ইতিহাসে। তেমনই এক জীবন তো পার করছে বুকায়ো সাকার পরিবার। ছেলে যে বিশ্ব মাতাচ্ছে ফুটবলের অনন্য মায়ায়।

বুকায়ো সাকার জন্ম লন্ডনে। সেই লন্ডনেই উত্থান তাঁর। আর্সেনাল ক্লাবের হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ারের যত অর্জন। সেই অর্জনের সিঁড়ি বেয়ে আজ তিনি বিশ্বকাপের মত এক মহামঞ্চে, থ্রি-লায়ন্সদের আস্থাভাজন সেনানী। নাইজেরিয়া থেকে তাঁর পরিবার পারি দিয়েছিল পৃথিবীর উন্নত দেশ ইংল্যান্ডে।

সেখানেই ২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সাকা জন্মেছিলেন। তিনি যেন পরিবারটির জন্যে খুশির এক বার্তা নিয়ে এলেন। ঠিক যেমন বার্তা তিনি এবার দিলেন গোটা ইংল্যান্ডকে।

ads

বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে, এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি ইরানের মুখোমুখি ইংল্যান্ড। ম্যাচটায় বেশ একটা লড়াই হবে সবাই ভেবেছিল। তবে লড়াইয়ের শুরুতেই ইরানের দলে আঘাত। সেখানে কোন দোষ নেই ইংল্যান্ডের।

তবুও নাকের ইনজুরিতে রক্ত ঝড়লো ইরানের গোলকিপার আলিরেজা বেইরানভান্দের। তিনি চেষ্টা চালালেন মাঠে টিকে থাকার। তবে সেটা আর বেশিক্ষণ পারলেন না। ইরানের প্রতিটা খেলোয়াড়ের মানসিকতায় খানিকটা আঘাত পেলো।

ব্যাস! সে সুযোগটাই লুফে নিলো গোটা ইংল্যান্ড দল। গোল উৎসবে মেতে উঠলো গোটা ইংল্যান্ড। শুরুটা অবশ্য ১৯ বছর বয়সী জুড বেলিংহাম। এরপরই দৃশ্যপটে হাজির বুকায়ো সাকা।

২১ বছর বয়সী এই তারকার এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। স্মরণীয় এক যাত্রার সাক্ষী হতে কে-ই বা না চায়! সাকাও চাইলেন। কোন কিছু খুব করে চাইলে নাকি তা পাওয়া যায়। সাকাও পেয়ে গেলেন জালের ঠিকানা। দুর্দান্ত এক ভলি। ইরানের বলদি গোলরক্ষক শুধু তাকিয়ে রইলেন। তাঁর যেন কিছুই করবার ছিল না।

দৃষ্টিনন্দন শট বলতে যা বোঝায় আরকি! কর্ণার থেকে আসা বল হ্যারি ম্যাগুয়ের হেডে নামিয়ে দিলেন। বল একটা বাউন্স খেলে সজোরে সাকার পায়ের আঘাত। ভাসতে থাকা বলটা গোলবারের উপরিভাগ দিয়ে জালের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিলো গোল বন্যার ম্যাচে দ্বিতীয়বার।

প্রথমার্ধের শেষভাগে আবারও ইরানের জালে গোল। এবার রাহিম স্টার্লিংয়ের। নিজের দশম বিশ্বকাপ ম্যাচে এসে প্রথম গোলের দেখা পেলেন স্টার্লিং। তিনিও হয়ত বহুকাল স্মৃতিতে আকড়ে ধরে রাখবেন তাঁর সেই গোল। কৃতজ্ঞতা জানাবেন হ্যারি কেইনকে।

ড্রেসিংরুমে যেন কোচ গ্যারেথ সাউথগেট দিয়েছিলেন কিছু টোটকা। সেই টোটকা কাজে লাগিয়ে আবারও স্কোরশিটে নাম তুললেন আর্সেনালের তারকা খেলোয়াড়। এবার স্টার্লিংয়ের বাড়ানো বলে নিয়া কাটব্যাক করে সাকা ঢুকে পড়েন ডি-বক্সে।

দুইজন ডিফেন্ডারের ফাক গলে সাকার বা-পায়ের শটটি খুঁজে নেয় জালের ঠিকানা। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই দুইখানা গোল সাকার নামে। তারুণ্যের এক উড়ন্ত সূচনা। এরপর যদিও পোর্তোর স্ট্রাইকার মেহেদি তারেমি।

কিন্তু তাতে অবশ্য কাজ হয়নি। বেলিংহাম ও সাকার শুরু করে দেওয়া গোল উৎসবে পরবর্তীতে নাম যুক্ত করেছেন মার্কাস র‍্যাশফোর্ড ও জ্যাক গ্রিলিশ। শেষদিকের পেনাল্টিতে মেহেদির আরেক গোল ইরানের হৃদয় ক্ষতকে খানিকটা প্রশমিত করেছে স্রেফ।

ম্যাচের ভাগ্য বদলায়নি। ইংল্যান্ডে ৬-২ গোলের বিশাল জয়ের দিনে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরষ্কারটাও দখল করেছেন সাকা। তিনটি গোলবারে করা শটের দুইটিতে গোল আদায় করেছেন গানার্সদের প্রাণ ভোমরা।

বিশ্বকাপ এই অভাবনীয় শুরুটা নিশ্চয়ই একেবারে শেষদিন অবধি অব্যাহত রাখতে চাইবেন সাকা। গোটার ইংল্যান্ড দলের এমন অসাধরণ ছন্দ কোচ সাউথগেটকে নিশ্চয়ই আশা জোগাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন হবার। সাকা, বেলিংহামরাও নিশ্চয়ই তেমন স্বপ্নে বিভোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link