More

Social Media

Light
Dark

ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা একাদশ

ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের একটি দেশ।

দেশটিতে রয়েছে আর্থসামাজিক ব্যাপক সংকট। তবে কোন কালেই ফুটবল খেলোয়াড়দের সংকটে  ভোগেনি পাঁচ বার বিশ্বকাপ জয়ী দেশটি। ফুটবলের এই পুন্যভূমির সর্বকালের সেরা একাদশ সাজানোটা কষ্টসাধ্য এবং তা তর্কের গোড়াপত্তন করার গুণ রাখে। এসব সম্ভাবনাকে একটু আড়ালে রেখে একটা সর্বকালের সেরা একাদশ সাজানো কিন্তু যেতেই পারে।

৪-৪-২ ফরমেশনে ব্রাজিলিয়ান সর্বকালের সেরা একাদশে জায়গা পাচ্ছেন না হালের ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন নেইমার কিংবা রিভালদো, কাকা, রবিনহোরা। কারণ পারফর্মেন্স ও অর্জনের এই একাদশে খানিকটা ফিঁকে তাঁরা।

ads
  • গোলরক্ষত: ক্লদিও তাফারেল

ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ইতিহাসে দু’জন সেরা গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার ও এডারসন একই সময়ে একাদশে জায়গা করে নেবার মতো প্রতিযোগিতা বেশ বিরল। তবে সেরাদের সেরা গোলরক্ষক কে? – এমন প্রশ্নের জবাবে নাম আসবে ক্লদিও তাফারেলের।

ব্রাজিলিয়াল ফুটবলের পেনাল্টি শ্যুট আউটের বেশ ক’বারের হিরো এই ক্লদিও তাফারেল। ১৯৮৫ সালে শুরু করা ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ২০০৩ সালে। দীর্ঘ আঠারো বছরের ক্যারিয়ারে ব্রাজিলের হয়ে জিতেছেন ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপ। এছাড়াও ১৯৮৯ ও ১৯৯৭ কোপা আমেরিকা জয়ের পেছোনোও গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রেখেছেন গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী ক্লদিও তাফারেল

  • রক্ষণভাগ: কাফু- ডাহলমা সান্তোস- লুসিও- রবার্তো কার্লোস

নি:সন্দেহে ব্রাজিলিয়ান রক্ষণ ইতিহাসে সেরা দুই ফুলব্যাক কাফু এবং কার্লোস। ব্রাজিল জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য এই দুই ফুলব্যাক খেলেছেন একই সময়ে। দু’জনে মিলে জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন দুইটি বিশ্বকাপ, দুইটি কোপা আমেরিকা ও একটি কনফেডারেশন কাপ।

কার্লোস আর কাফুর ওভারল্যাপিং শৈলী ফুটবলে এনে দিয়েছিল নতুন মাত্রা। কার্লোস ছিলেন আক্রমনাত্মক অন্যদিকে কাফুর চেষ্টা ছিলো খেলাতে ভারসাম্য রক্ষা করা। রক্ষণ ও আক্রামণে সমান তালে নিজের অবদান রেখে জেতেন কাফু। তাঁদের পিনপয়েন্ট ক্রসগুলো ছিল প্রতিপক্ষের জন্য বিষ মিশ্রিত এক একটি তীর। আর কার্লোসের ‘বানানা’ ফ্রি-কিক গুলো ছিল দৃষ্টি নন্দন, অকল্পনীয় ও অভাবনীয়!

ডাহলমা সান্তোস মূলত ছিলেন রাইটব্যাক। কিন্তু তাঁর সেন্টারব্যাকে খেলতে পারার দক্ষতাও প্রশংশনীয়। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে চার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে জিতেছেন ১৯৫৮ ও ১৯৬২ এর বিশ্বকাপ। তাঁর শারীরিক গঢ়ন তাঁর পারফর্মেন্স বৃদ্ধিতে সহয়তা করেছে বহুগুণে।

সবচেয়ে মজাদার বিষয় তিনি তিনবার বিশ্বকাপ অলস্টার দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এমন কৃতিত্বের ভাগিদার শুধু জার্মানির ফিলিপ লাম ও ফার্ঞ্চ বেকেনবাওয়ার।

২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন লুসিও। তিনি রক্ষণ আগলে রেখেছেন চৌকস সিপাহির মতো। তাঁর ১০১ ম্যাচের জাতীয় দল ক্যারিয়ারে এক বিশ্বকাপের পাশাপাশি লুসিওর ঝুলিতে আছে দু’টি কনফেডারেশন কাপ ট্রফি

  • মধ্যমাঠ: রোনালদিনহো-কার্লোস দুঙ্গা-জিকো-গ্যারিঞ্চা

৪-৪-২ ডাইনামিক ফরমেশনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে দুঙ্গা ‘অটোচয়েজ’ এই দলে। তিনি তাঁর সাবলীল পার্ফরমেন্সে ও  নেতৃত্বে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েছিলেন ব্রাজিল জাতীয় দলকে।

এছাড়াও ১৯৯৭ এর কোপা আমেরিকা জয়ে ব্রাজিলের অধিনায়কও ছিলেন দুঙ্গা। তাঁর নেতৃত্ব দেবার গুণ সর্বকালের সেরা একাদশের দলনেতা বানাবে নির্দ্বিধায়, সেটা তাঁর নেতিবাচক ফুটবল খেলার ধরণটা মাথায় রেখেই।

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে জিকোর জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া প্লে মেকিং এর গুরু দায়িত্ব তাঁর উপরেই বর্তায়। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে সর্বদা ছিলেন নি:স্বার্থ। বল বানিয়ে ফরোয়ার্ডদেরকে গোল করাতে তাঁর তুলনা মেলা ভার। খেলোয়াড়ি জীবনে এই পজিশনেই খেলেছেন জিকো।

গোল করানোর পাশাপাশি ব্রাজিলের হয়ে ৭১ ম্যাচে গোল করেছেন ৪৮ টি এবং দখল করে আছেন জাতীয় দলের হয়ে সেরা গোলদাতার পঞ্চম স্থান।

রাট উইং কিংবা, রাইট মিডফিল্ডে অর্থাৎ মধ্যমাঠের ডান দিকটায় থাকবেন গ্যারিঞ্চা। অধিকাংশ ফুটবল বোদ্ধাদের মতে তিনি ছিলেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ড্রিবলার। তাঁর সূক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রতিপক্ষ দূর্গে ছেঁদ করতে সক্ষম। তিনি ছিলেন ব্রাজিলের ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্ব শিরোপা জয়ের অন্যতম কারিগর।

গারিঞ্চার যোগ্য সঙ্গী হতে পারেন রোনালদিনহো। কম্প্যাক্ট খেলোয়াড় রোনালদিনহো। তিনি তাঁর ফুটবল শৈলীতের মুগ্ধ করেছেন পুরো ফুটবল বিশ্বকে। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে ছুঁয়ে দেখেছেন সবগুলো মেজর ট্রফি। মাঠের বাম দিকটা থেকে আক্রমণ সংগঠনের কাজটা তাঁর কাঁধে অর্পণ করাই শ্রেয়।

  • আক্রমণভাগ: পেলে-রোনালদো

ব্রাজিল ফুটবল ইতিহাসে সেরা দুইজন স্ট্রাইকার পেলে এবং রোনালদো। কোন রকমের তর্ক ছাড়াই যে কেউ তাদেরকে বেছে নেবেন নিজেদের করা সেরা একাদশে। রোনালদো তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে ব্রাজিলের হয়ে করেছেন ৬২ গোল আর জিতেছেন বিশ্বকাপ। ব্যক্তিগত অর্জন হিসবে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বল। তাঁর মতো ধূর্ত ও পরিশ্রমী একজন স্ট্রাইকার যেকোন দলের প্রথম চাহিদা।

পেলে ছিলেন পুরো বিশ্ব প্রথম স্পোর্টস আইকন। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে জিতিছেন তিন তিনটি বিশ্বকাপে। তাঁরমধ্যে ১৯৫৮ এর  এর বিশ্বকাপে তাঁর পার্ফরমেন্স অবিস্মরণীয় হয়ে রইবে চিরকাল।

এই দল নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হতে পারে, ভিন্নমতও থাকতে পারে। তবে এদেরকে বাদ দিয়ে সেরাদের সেরা একাদশ সাজানো যাবে না কিংবা সাজানো গেলেও তা সকলের মন:পূত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link