More

Social Media

Light
Dark

স্মরণীয় সিরিজের মলিন সমাপ্তি

দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে প্রথম ইনিংসেই জয়ের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন কুশাল পেরেরা। এরপর বাংলাদেশের ইনিংসে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সেই জয়টা নিশ্চিত করেছেন দুশমান্তা চামিরা। এই দুজনের অনবদ্য পারফরম্যান্সেই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৯৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

কিন্তু আজ হারলেও সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচে একমাত্র প্রাপ্তি বলতে তাসকিন আহমেদের বোলিং। লাইন, লেংথ ও গতির পসরা সাজিয়ে চার উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার।

আজকের মতো প্রথম দুই ম্যাচেও ব্যর্থ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা। দুই ম্যাচেই দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। তবে আজ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইনিংস বড় করতে পারেননি। মুশফিকের ব্যর্থতার দিনে দলের হাল ধরতে পারেননি অন্য কেউও।

ads

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চেষ্টা করলেও সেটা জয়ের জন্য যথেষ্ঠ ছিল না। তাই প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখিয়ে জিতলেও শেষ ম্যাচে হারতে হয়েছে মুশফিক তামিমদের। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যে রকম শুরুর প্রয়োজন ছিল সেটাই পায়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরু থেকেই ধুঁকেছে স্বাগতিকরা।

চামিরার করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে রানের খাতা খোলার আগেই স্লিপে ধরা পড়েন নাঈম শেখ। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া লিটন দাসের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন নাঈম।

এরপর চামিরার করা পরের ওভারে শর্ট বল পুল করতে গিয়ে আউট হয়ে যান সাকিব আল হাসান। আগের দুই ম্যাচে ১৫ রান করা সাকিব আজ করতে পেরেছেন মাত্র ৪ রান। ৯ রানে দুই উইকেট হারানোর পর তামিম মুশফিকের ব্যাটে যখন বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ তখনই আম্পায়ারের বিতর্কিত এক সিদ্বান্তে আউট হয়ে যান তামিম।

চামিরার করা ফুল লেংথ বল ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন তামিম। তখনই একটা শব্দ পাওয়া যায় এবং আবেদন করে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার করা আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে রিভিউ নেন তামিম। কিন্তু আল্ট্রা এজে বোঝা যায়নি শব্দটা বল ব্যাটে লাগার নাকি ব্যাট মাটিতে লাগার। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্বান্ত পরিবতর্ন করার কারণ খুঁজে না পাওয়াতে তৃতীয় আম্পায়ারও আউট ঘোষণা করে তামিমকে।

২৯ বলে ১৭ রান করে তামিম ফিরে যাওয়ার পর চতুর্থ উইকেটে বিপর্যয় সামাল দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে এই জুটি বেশি বড় হয়নি। ২৮ রান করে মুশফিক ফিরে গেলে ভাঙে ৫৬ রানের জুটি। মুশফিক ফিরে যাওয়ার পর মোসাদ্দেকের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও হাফসেঞ্চুরি করার পর ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি।

৭২ বলে ৫১ রান করে মোসাদ্দেক আউট হয়ে যাওয়ার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চেষ্টা করলেও বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তার ৫৩ রানের ইনিংসটি শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৪২.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন চামিরা। ১০ ওভার বল করে ১৬ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। এছাড়া হাসারাঙ্গা দুটি ও মেন্ডিস একটি করে উইকেট শিকার করেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার কুশাল পেরেরা ও দানুশকা গুনাথিলাকা। ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাট করা এই দুই ব্যাটসম্যানকে আটকানোর কোন পথই পায়নি বাংলাদেশের বোলাররা। দুজনই রান তুলতে থাকেন সমান গতিতে। ৬৮ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন দুজন।

দুই জন দ্রুত গতিতে রান তুললেও লাইন এবং লেংথ দিয়ে এই দুই ওপেনারকে অনেক বারই সমস্যয় ফেলেছেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসার সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখায় প্রথম সাফল্য আসে তার হাত ধরেই। অফ স্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ইন সাইড হয়ে ফিরে যান গুনাথিলাকা। ৩৩ বলে ৩৯ করেন তিনি।

প্রথম উইকেট পরার পর দ্বিতীয় সাফল্য পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ঐ ওভারের শেষ বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন পাথুম নিসাঙ্কা। তাসকিনের করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে গিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান তিনি। ৮২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর আবার প্রতিরোধ গড়ে শ্রীলঙ্কা।

তৃতীয় উইকেটে কুশাল মেন্ডিসকে নিয়ে ৬৯ রানের জুটি গড়েন পেরেরা। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙতে আবার তাসকিনকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক। আস্থার প্রতিদান দিয়ে নতুন স্পেলের শুরুতেই মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দেন এই পেসার। তাসকিনের করা অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে তামিমের হাতে ধরা পড়েন ৩৬ বলে ২২ রান করা মেন্ডিস।

তবে এই জুটি অনেক আগেই ভাঙার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিবের বলে দুই বার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান পেরেরা। ক্যাচ নিতে পারেননি আফিফ হোসেন। এরপর ৯৯ রানে মুস্তাফিজের স্লোয়ারে ক্যাচ দিয়ে আবার বেঁচে যান পেরেরা। এবার ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জীবন পেয়ে পরের বলেই সেঞ্চুরি তুলে নেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক।

তবে সেঞ্চুরি করার পর আর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি পেরেরা। তিন বার জীবন পেয়ে শরিফুল ইসলামের লেংথ বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে সেই মাহমুদউল্লাহর কাছেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ১২২ বলে ১১ টি চার ও ১ টি ছয়ের সাহায্যে ১২০ রান করেন তিনি। এরপর শরিফুলের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউটের ফাঁদে পড়েন নিরোশান ডিকওয়েলা।

এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ৫৫ রানে ভর করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন তাসকিন আহমেদ। ৯ ওভার বল করে ৪৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। এছাড়া শরিফুল ইসলাম পেয়েছেন ১ উইকেট।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২৮৬/৬ (ওভার: ৫০; গুনাথিলাকা- ৩৯, পেরেরা- ১২০, নিসাঙ্কা- ০, মেন্ডিস- ২২, সিলভা- ১০, ডিকওয়েলা- ৫৫, হাসারাঙ্গা- ১৮, মেন্ডিস- ৮) (তাসকিন- ৯-০-৪৬-৪, শরিফুল- ৮-০-৫৬-১)

বাংলাদেশ: ১৮৯/১০ (ওভার: ৪২.৩; তামিম- ১৭, নাঈম- ০, সাকিব- ৪, মুশফিকুর- ২৮, মোসাদ্দেক- ৫১, মাহমুদউল্লাহ- ৫৩, আফিফ- ১৬, মিরাজ- ০,) (মেন্ডিস- ৭-০-৪০-২, চামিরা- ৯-১-১৬-৫, হাসারাঙ্গা- ১০-০-৪৭-২)

ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ৯৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link