More

Social Media

Light
Dark

প্রথম লঙ্কা বিজয়

আগের ম্যাচের মতোই শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ার পর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং দৃঢ়তায় লড়াই করার পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই পুঁজি নিয়েই লড়াই করে দলের জয় নিশ্চিত করার সাথে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করেছেন বোলাররা।

আজও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ার পর বুক চিতিয়ে একাই লড়াই চালিয়ে ১২৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে জয়ের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মুশফিক। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের অনবদ্য সেঞ্চুরিতেই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্বতিতে ১০৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এই জয়ের ফলে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। আট ম্যাচে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে এখন শীর্ষে রয়েছে তামিম সাকিবরা। আর পাঁচ ম্যাচ খেলেও এখনো কোন পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। তাদের অবস্থান এখন ১২ নম্বরে।

ads

তবে আগের ম্যাচের থেকে আজ একটু ছোট লক্ষ্যই পেয়েছিল সফরকারীরা। কিন্তু ২৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুশাল পেরেরা। অভিষিক্ত শরিফুল ইসলামের বলে মিড অনে তামিম ইকবালের হাতে পেরেরা ক্যাচ দিলে ভাঙে ২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।

১৪ রান করে পেরেরা আউট হয়ে যাওয়ার পর মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান আরেক ওপেনার গুনাথিলাকা। ২৪ বলে ২৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশাল মেন্ডিস জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি সাকিব আল হাসান।

সাকিবের করা একটু দ্রুত গতির শর্ট বল পুল করতে গিয়ে তামিমের হাতে ক্যাচ দেন নিসাঙ্কা।  নিসাঙ্কা ফিরে যাওয়ার পরই মিরাজের বলে  এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন কুশার মেন্ডিস। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি শ্রীলঙ্কার  সহ-অধিনায়ক। ৭৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে সফরকারীরা তখনই শ্রীলঙ্কার ইনিংসে দ্বিতীয় বারের মত আঘাত করেন সাকিব।

ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লিউ করে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় মাশরাফি বিন মর্তুজার পাশে নাম লেখান সাকিব। মাশরাফির সাথে এখন ২৬৯ উইকেট নিয়ে যৌথ ভাবে শীর্ষে রয়েছেন এই অলরাউন্ডার।

এরপর মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে দাসুন শানাকা ফিরে যাওয়ার পর তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান আগের ম্যাচে একাই লড়াই করা   ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। মূলত তখনই পুরোপুরি ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর বান্দারা ও সান্দাকান ফিরে যাওয়ার পর যখন জয়ের অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ তখন আবারো তৃতীয় বারের মত বৃষ্টি হানা দেয় ম্যাচে।

বৃষ্টির কারণে খেলা যখন বন্ধ হয় তখনো জয় থেকে ১২১ রান দূরে ছিল শ্রীলঙ্কা। তাদের হাতে ছিল মাত্র একটি উইকেট। এরপর ৪৫ মিনিট পর যখন আবার খেলা শুরু হয় তখন ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্বতিতে শ্রীলঙ্কার নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ২৪৫ রান। অর্থ্যাৎ দুই ওভারে ১১৯ রান। শ্রীলঙ্কা সংগ্রহ করতে পারে ১৬ রান।

বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান। এই দুজনই তিনটি করে উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়া সাকিব আল হাসান দুটি ও শরিফুল ইসলাম একটি উইকেট শিকার করেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক তামিম ইকবালের ব্যাটে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই তিন বাউন্ডারিতে ১৫ রান সংগ্রহ করেন এই ওপেনার। কিন্তু সেই শুরু আর ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জোড়া আঘাতে তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে দেন দুশমান্তা চামিরা।

চামিরার করা লেগ স্টাম্পের বল ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু ব্যাট মিস করে বল লাগে এই ওপেনারের প্যাডে। শ্রীলঙ্কার করা জোড়ালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে তামিমকে ফিরিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। ৬ বলে ১৩ রান আসে বাংলাদেশের অধিনায়কের ব্যাট থেকে। আগের ম্যাচে ৫২ রান করেছিলেন তিনি।

তামিম প্যাভিলিয়নের পথ ধরার দুই বল পরেই রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাকিব। চামিরার মিডল স্টাম্পে করা লেংথ ডেলিভারিটি সাকিবের ব্যাট মিস করে প্যাডে লাগলে শ্রীলঙ্কার আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। লিটনের সাথে আলোচনা করে রিভিউ নেননি এই অলরাউন্ডার।

শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। আগের সাত ইনিংসে ব্যর্থ লিটন চেষ্টা করছিলেন রানে ফেরার। কিন্তু স্পিনার লাকসান সান্দাকানের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন এই ওপেনার। ৪২ বলে ২৫ রান করে লিটন ফিরে গেলে ভাঙে ৩৪ রানের জুটি।

লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন প্রথম ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে মোহাম্মদ মিঠুনের পরিবর্তে সুযোগ পেয়ে সেটা কাজে লাগাতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। সান্দাকানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দিতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন তিনি। ১২ বলে ১০ রান আসে মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে।

আগের ম্যাচে ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে ১০৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে আজ এই দুজনের জুটি শুরু হয়েছিল ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর। আজও এই দুজনের ব্যাটেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪১তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও এগিয়ে যাচ্ছিলেন হাফসেঞ্চুরির পথে। যখনই তাদের জুটি জমে গিয়েছিল ঠিক তখনই সান্দাকানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে কুশল পেরেরার হাতে
ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ।

৫৮ বলে ৪১ রান করে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ফিরে গেলে ভাঙে ৮৭ রানের জুটি। এই জুটি ভাঙার পর দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে আবার চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দুটি বাউন্ডারি মেরে আত্মবিশ্বাসী শুরু করা আফিফ হোসেন উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ধরা পড়েন। ৮ রান করে আফিফ ফিরে যাওয়ার পর রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

মিরাজের বিদায়ের পর মুশফিকের সাথে জুটি বাঁধেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অষ্টম উইকেটে দুজন যোগ করেন ৫১ বলে ৪৮ রান। সাইফউদ্দিন ২৯ বলে ১১ রান করে রান আউট হয়ে গেলে ভাঙে এই জুটি। তবে এর আগেই মুশফিক তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরি।

সেঞ্চুরির পর শ্রীলঙ্কার বোলারদের উপর তান্ডব চালান এই ব্যাটসম্যান। শেষের দিকে মুশফিকের ঝড়ো ব্যাটিংয়েই ২৪৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ১২৭ বলে দশটি চারের সাহায্যে ১২৫ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে আউট হন মুশফিক।

শ্রীলঙ্কার বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন সান্দাকান ও চামিরা। দুজনই তিনটি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া উদানা  দুটি ও হাসারাঙ্গা একটি উইকেট পেয়েছেন।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২৪৬/১০ (ওভার: ৪৮; তামিম- ১৩, লিটন- ২৫, সাকিব- ০, মুশফিকুর- ১২৫, মোসাদ্দেক- ১০, মাহমুদউল্লাহ- ৪১, আফিফ- ৮, মিরাজ- ০, সাইফউদ্দিন- ১১) (সান্দাকান- ১০-০-৫৪-৩, চামিরা- ৭-২-২৭-২, হাসারাঙ্গা- ৮.৩-১-২৬-১)

শ্রীলঙ্কা: ১৪১/৯ (ওভার: ৪০; গুনাথিলাকা- ২৪, পেরেরা- ১৪, নিসাঙ্কা- ২০, মেন্ডিস- ১৫, সিলভা- ১০, শানাকা- ১১,  বান্দারা- ১৫, সান্দাকান- ৪, হাসারাঙ্গা- ৬, উদানা- ১৮*) (মিরাজ- ১০-০-২৮-৩, মুস্তাফিজ- ৬-১-১৬-৩, সাকিব- ৯-০-৩৮-২, শরিফুল- ৬-০-৩০-১)

ফলাফল: ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্বতিতে ১০৩ রানে জয়ী বাংলাদেশ।

ম্যাচ সেরা: মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link