More

Social Media

Light
Dark

‘একশো স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করে ম্যাচ জিততে পারবেন না’

সেই দূরদেশে উপহার দিতেই যেন হাজির হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। জিম্বাবুয়েকে উপহার দিয়ে এলো প্রথম কোন টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে আর কখনোই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে, ম্যাচ জিতেছিল বেশ কয়েকটা। পাহাড়সম টার্গেটে ব্যাটিং করছিল টাইগাররা, বিষয়টা তেমনও ছিল না।

সিরিজ নির্ধারনী শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের টার্গেট ছিল ১৫৬। আধুনিক টি-টোয়েন্টির যুগে জিম্বাবুয়ের মত বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে অনায়াসে যেকোন দলের জয় তুলে নেওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশ সে ম্যাচটি হেরেছে দশ রানের ব্যবধানে। এদিনের এমন বাজের পারফরমেন্সের দায়টা পুরোপুরি ব্যাটারদেরই দিতে চেয়েছেন বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।

এদিন বিশ্রামে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দলের অভিজ্ঞ এই খেলোয়াড় রয়েছেন অফফর্মে। তাইতো তাঁকে দেওয়া হয়েছিল বিশ্রাম। তবে হঠাৎ এমন প্রত্যাবর্তনে খানিকটা ভ্রু কুচকে গিয়েছিল সবার। এর কারণটা তো আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে যায় ম্যাচ শেষে। রিয়াদ ২৭ বলে ২৭ রানের একটি ধীর গতির ইনিংস খেলেছিলেন।

ads

সেটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্যে। বাংলাদেশের একটা পর্যায়ে আস্কিং রানরেট ছাড়িয়ে গিয়েছিল দশের গণ্ডি। ঠিক তখন রিয়াদের এমন মন্থর গতির ব্যাটিংই ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। এমনটাই মানছেন সুজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জিতাটাই স্বাভাবিক ছিল। আমাদের ওভারে দশ-বার করে লাগবে, কিন্তু কাওকে দেখলাম না একটু চেষ্টা করছে একটা ছয় মারতে। সবাই দুই-এক করে রান নিচ্ছে।’ 

ঠিক এখানটায় বাংলাদেশি ব্যাটারদের দূর্বলতাটা সবচেয়ে বেশি। নিপাট এক ব্যাটিং পিচেও বাংলাদেশি ব্যাটাররা দ্রুত রান তুলতে পারেন না। বাউন্ডারি হাঁকাতেও তাঁদের খুব সম্ভবত একটা ভীতি কাজ করে। বাংলাদেশি ব্যাটারদের সমস্যাটা মানসিকতায়। সেদিকটার কথা উল্লেখ করেই সুজন বলেন, ‘আমি যদি এভাবে বলি, নিজের পজিশন ধরে রাখার জন্য মোটামুটি রান করে নিজেকে সেফ রাখলাম। আপনি যদি ১০০ বা ৯০ বা ১১০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেন তবে ম্যাচ জিততে পারবেন না।’

ইঙ্গিতটা খুব সম্ভবত তিনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ধীরগতির ১০০ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসটাকেই করেছেন। মাহমুদউল্লাহ নিশ্চয়ই জানেন জাতীয় দলে তাঁর জায়গাটা এখন বেশ নড়বড়ে। যেকোন সময় তিনি শেষবারের মত ছিটকে যেতে পারেন বাংলাদেশ জাতীয় টি-টোয়েন্টি দল থেকে। তাই হয়ত কিছু রান করে নিজের ক্যারিয়ারটা বাঁচানোর প্রয়াশটুকু করে গেছেন তিনি। তাতে ক্ষতিটা হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের।

‘নিজে বাঁচো’ এই মানসিকতা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে বহু আগে থেকেই জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে নিজের জন্যে পারফরম করবার প্রবণতাটা সবচেয়ে বেশি। দলকে ম্যাচ জেতানোর চাইতে তাঁদের নিজের ক্যারিয়ারকে বাঁচানোটাই মুখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে সব সময়। যার কারণে টাইগাররা আর যাই হোক ভয়ডরহীন ক্রিকেটটা খেলতে পারে না।

তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটায় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা ব্যাটারের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা যেন স্বাভাবিক। লিটন দাস আউট হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে কোন ব্যাটারের কাছ থেকেই ইতিবাচক বাচনভঙ্গির দেখা মেলেনি। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা খালেদ মাহমুদ সুজন।

তিনি বলেন, ‘ আমি কাওকেই দেখলাম না তেমন এগ্রেসিভ ব্যাটিং করতে। ছেলেদের বাজে বলে বাউন্ডারি হাকানোর কনফিডেন্স আসা দরকার বলে আমি মনে করি।’ এছাড়া তিনি জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটার রায়ান বার্ল ও লুক জংওয়ের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘ওদের দুইজন খেলোয়াড়ের স্ট্রাইকরেট দেখেন। তারা খেলা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেছে।’

বাংলাদেশের ব্যাটারদের এই মানসিক সমস্যা নিয়ে বেশ চটেছেন সুজন। তাঁর মতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে। এমন বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনে বেশ হতাশ তিনি। তবে সুজনের এই হতাশার চাইতেও বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়াচ্ছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ার। খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে তিনি নেই তা আন্দাজ করে নেওয়াটা বেশ সহজ।

প্রথমে অধিনায়কত্ব ও দল থেকে বিশ্রাম পেয়েছেন। এরপর আবার দলে ফিরেছেন কিন্তু অধিনায়কত্ব ফিরে পাননি। অন্যদিকে তাঁর দৃষ্টিকটু ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দলের সংশ্লিষ্টদের কাছেই নেতিবাচকতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঠিক কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন রিয়াদ সেটারই অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link