More

Social Media

Light
Dark

বিষাদনলের বাসিত আলী

বয়স যখন সবে একুশ তখনই দেখিয়েছিলেন অপার সম্ভাবনার দুয়ার। কভার, পয়েন্ট অঞ্চলে তাঁর রাজত্ব কিংবা চোখ জুড়ানো পুল, হুক শটে নিজেকে সেই সময় অনন্য করে তুলেছিলেন। নিজের সময়ে সবচেয়ে নিখুঁত ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন। ভাবা হতো, পাকিস্তানের আরেকজন জাভেদ মিয়াঁদাদ হবেন এই বাসিত আলী। তবে সম্ভাবনার সেই সাগরে ভাটা পড়েছিল দ্রুতই। ফিক্সিংয়ের বিষাদনলে হারিয়ে গিয়েছিলেন অচিরেই।

১৯৭০ সালে করাচিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাসিত আলী। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট প্রতিভা দিয়ে নজর কেড়েছেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ইনিংসে করেছিলেন ৪১ রান। পরের ইনিংসেই অবশ্য জানান দিয়েছিলেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। সেই ইনিংসে করেছিলেন ১০১ রান।

এরপরই সরাসরি ডাক পান পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলে। যুব দলের হয়ে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমে করেছিলেন ১৮৯ রান। সেই বয়সেই বাসিত আলী তাঁর টেকনিক ও টেস্ট টেম্পারমেন্টের পুরোপুরি জানান দিয়েছিলেন।

ads

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা ফেলতেও বেশি সময় নেননি এই ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ২২ বছর বয়সে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। নিজের অভিষেক সিরিজেই পুরো ক্রিকেট দুনিয়াকে নিজের ব্যাটিং জাদুতে মুগ্ধ করেছিলেন বাসিত। প্রথম ম্যাচে ৪৩ বল খেলে করেছিলেন ৩৪ রান। তবে পরের দুই ম্যাচে কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস দের যেভাবে খেলেছিলেন তারপর তাঁকে নিয়ে বড় স্বপ্ন না দেখার কোন কারণ ছিল না।

সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৮৬ বলে ৬০ রানের ইনিংস। এরপর ওই সিরিজের শেষ ম্যাচেও হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। তখন থেকেই বাসিতকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করে পাকিস্তন। পাকিস্তান ক্রিকেটের নতুন জাভেদ মিয়াঁদাদ হিসেবে ভাবা হয় এই ব্যাটারকে।

তবে সেই সিরিজের পরই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন এই ক্রিকেটার। দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মিয়াঁদাদ ও ওয়াসিম মজা করে তাঁকে সুইমিং পুলে ফেলে দিয়েছিলেন। তবে কিছুক্ষণ পর বোঝা যায়া বাসিত আসলে সাতার জানতেন না। পুলের একেবারে গভীর জায়গাটাতে আঁটকে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সৌভাগ্যবশত পরে ওয়াকার ইউনুস সেটা বুঝতে পেরে বাসিতকে উঠিয়ে এনেছিলেন।

সে বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটেও অভিষিক্ত হন তিনি। তবে নিজের প্রথম ও একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন পরের বছর। ১৯৯৪ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পেসারদের তুলোধুনো করে তুলে নিয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে নিজের একমাত্র সেঞ্চুরি। এছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটে বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শারজাহতে মাত্র ৭৯ বলে করেছিলেন ১২৭ রান। অপরাজিত সেই ইনিংসে বাসিত আলির ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ছিল ১৬০.৭৫। তবে দুরন্ত এই সেঞ্চুরির পর ওয়ানডে ক্রিকেটে আর কখনো শত রানের দেখা পাননি। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের হয়ে খেলা ৫০ ওয়ানডে ম্যাচে ৩৪.১৮ গড়ে করেছেন ১২৬৫ রান।

তবে সম্ভাবনাময় এই ব্যাটসম্যান ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে কোথায় এক অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন। জানা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া-এশিয়া কাপ ফাইনালের সকালে বুকির কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে ১০ রানের মধ্যে আউট হয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে প্রায় ১০ লক্ষ রূপিও প্রস্তাব করা হয়েছিল। যদিও পাকিস্তানের এই ব্যাটসম্যান জানিয়েছিলেন তিনি তখনই সেটা পাকিস্তানের ম্যানেজারকে বলেছিলেন।

তবে কমিশনের মতে, তাঁরা বাসিতের বিপক্ষে ফিক্সিং এর প্রমাণ পেয়েছিলেন। এছাড়া তাঁর সাথে বুকিদের কথোপকথনের একটি টেপ রেকর্ডও পেয়েছিলেন তাঁরা। ফলে এসব নানা বিতর্কের মধ্যে দিয়ে বাসিত আলীর ক্যারিয়ারটা আর খুব বেশি লম্বা হয়নি।

১৯৯৬ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সেই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে এর আগে পাকিস্তানের হয়ে মোট ১৯ টি টেস্ট খেলেছেন। সেখানে ২৬.৮১ গড়ে আছে প্রায় হাজারখানেক রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে সবচেয়ে সফল ছিলেন তিনি। সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজে ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা সব বোলাররা। তখন ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৩ টেস্টে ৫৫.৫০ গড়ে বাসিত আলী করেছিলেন ২২২ রান।

তবে সম্ভাবনার যেই জোয়ার নিয়ে এসেছিলেন সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি কখনো। জাভেদ মিয়াঁদাদ পাওয়ার যে স্বপ্ন পাকিস্তান দেখেছিল তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। বাসিত আলী অন্তত একজন বাসিত আলীও হতে পারলেন না। অসাধরণ ক্রিকেট মেধা, টেকনিক এসবকে ছাপিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ফিক্সিংয়েই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link