More

Social Media

Light
Dark

বাংলাদেশ ক্যাচ/ম্যাচ ফেলছে

ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাংলাদেশ কখনোই বিশ্বসেরা ইউনিট হয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু একটা সময় মনে হচ্ছিলো, বাংলাদেশ ফিল্ডিং ইউনিট হিসেবে অন্তত বিশ্বমানের হয়ে উঠেছে।

সেই মনে হওয়াটাকে একেবারেই ভ্রান্তি বানিয়ে ২০২১ সালে ছেলেমানুষী স্তরের ফিল্ডিং শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। এই বছর জুড়েই বিশেষ করে আকাশে ওঠা ক্যাচ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নামকরা ফিল্ডাররা শিশুতোষ সব ভুল করেছেন। আর বছরের শেষ প্রান্তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটানা ক্যাচ মিস করেই খাদে পৌছে গেছে দল।

বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট এখনও ‘ক্যাচ মিস খেলার অংশ’ স্লোগান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে দলের এই শিশুতোষ ফিল্ডিংয়ে উচ্চতর কতৃপক্ষ যে নাখোশ, সেটা বোঝা গেছে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের কথায়। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, এটা একেবারে মেনে নেওয়ার মত ব্যাপার নয়।

ads

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচ পর্যন্ত চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নয়টি ক্যাচ মিস করেছে; যার ৭টিই আকাশে ওঠা রেগুলেশন ক্যাচ ছিল।

গ্রাফিক্স: ইএসপিএন ক্রিকইনফো

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মেহেদী হাসান এক রোস্টন চেজের ক্যাচ ফেলেছেন দু’বার। আফিফ জেসন হোল্ডারের ক্যাচ ফেলেছেন। হোল্ডার এরপর দুই ছক্কা মেরে ক্যারিবিয়ানদের স্কোর ১৪২ রানে নিয়ে গেছেন। ফিল্ডিং মিসের আরও নজীর এই ম্যাচেই ছিলো। লিটন দাস নিকোলাস পুরানের স্ট্যাম্পিং মিস করার পর তিনি ২২ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন।

এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লিটন দুটো ক্যাচ ফেলেছেন আউটফিল্ডে। ভানুকা রাজাচ্ছে ১৪ রানে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। আর আসালঙ্কার ক্যাচ ফেলেন লিটন ৬৪ রানে। এই জুটি পরেন পঞ্চম উইকেটে ৮৬ রান যোগ করে। ৪ উইকেটে ৭৯ রান তুলতে পারা শ্রীলঙ্কা ১৭২ রান তুলে ফেলে এই ফিল্ডিং বদান্যতায়।

পাঁচদিন আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিচে ওমানের যতিন্দর সিংয়ের একেবারে সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন। সেটা অবশ্য খুব প্রভাব ফেলতে পারেনি।

এই ৯টি ক্যাচের মধ্যে ৭টিই ছিলো আকাশে ওঠা বল। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, মেহেদী হাসান, আফিফ হোসেন এই ক্যাচগুলো ফেলেছেন। মজার ব্যাপার হলো, এরা সবাই ভালো ফিল্ডার বলে পরিচিত।

সাধারণত এরকম ধারাবাহিক ক্যাচ ফেলার ঘটনাকে দলের সমন্বয়হীনতা ও সকলের মনোযোগ হারিয়ে ফেলার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বোলিং কোচ ওটিস গিবসন এই ক্যাচ মিসকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজী হননি। তিনি সেদিন বলছিলেন, একটা-দুটো ক্যাচ ড্রপ হতেই পারে, ‘ক্যাচ তো ড্রপ হয়ই। প্রত্যেক ক্রিকেট ম্যাচেই একটা দুটো ক্যাচ পড়ে। অবশ্যই ক্যাচ ধরনা বা না ধরা খেলার ফলাফলে প্রভাব ফেলে। তবে এখন এটা নিয়ে বেশিই কথা হচ্ছে। আমরা অনেক ক্যাচিং অনুশীলন করছি। ছেলেরা শেষ পর্যন্ত মাঠে অনেক চাপে থাকে। ফলে ক্যাচ ফেলার মত ভুল হয়ে থাকে।’

গিবসন অন্তত এই ক্যাচ ফেলার ব্যাপারটিকে বিশেষ দুশ্চিন্তা হিসেবে দেখতে চাইলেন না। তিনি বলছিলেন, ‘এটা দুশ্চিন্তা কিনা? আমি বলবো না যে, এটা বিশেষ দুশ্চিন্তার ব্যাপার। কারণ, আমরা প্রতিদিন অনুশীলন করছি। তবে ঘটনা হচ্ছে, ক্যাচ পড়লে শেষ পর্যন্ত খেলায় তার প্রভাব পড়ে, এটা নিয়ে কথা হয়। আমরা আমাদের এসব স্কিল নিয়ে কাজ করছি, ক্যাচিং নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছি।’

তবে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার এই ক্যাচ ফেলার ব্যাপারটাকে এতো সরল করে দেখতে রাজী নন। দলের সাথে বিশ্বকাপ সফরে থাকা সুমন বলছিলেন, ‘আপনার ব্যাটিং বা বোলিংয়ে একটা খারাপ দিন আসতেই পারে। কিন্তু আপনাকে ফিল্ডিংয়ে তো ধারাবাহিক হতে হবে। বড় টুর্নামেন্টে আমাদের ক্যাচ মিসের ঘটনা এই প্রথম ঘটছে না। মিসফিল্ডিং আমাদের আগেও অনেক ম্যাচ হারিয়েছে। আমরা এর চেয়ে অনেক ভালো ফিল্ডিং ইউনিট। আমি এই জায়গাটায় অনেক উন্নতি দেখতে চাই।’

গ্রাফিক্স: ইএসপিএন ক্রিকইনফো

হাবিবুল স্বীকার করলেন যে, সেরা ফিল্ডাররা এভাবে ক্যাচ খেললে আসলে তার ব্যাখ্যা করা কঠিন, ‘আমরা ফিল্ডিংয়ে অনুশীলনের সময় অনেক সময় দিচ্ছি। আমাদের আসলে মানসিক চাপটা সামলাতে শিখতে হবে। আমার ধারণা আমরা চাপটা নিতে পারছি না। আমাদের সেরা কিছু খেলোয়াড় ক্যাচ মিস করছে। ফলে আমাদের এই সব সময়ে চাপ সামলানো শিখতে হবে।’

বাংলাদেশ দল অবশ্য গত ক’বছর কয়েক ধরেই খুব বাজে ফিল্ডিং করছে এবং আকাশে ওঠা ক্যাচ মিস করছে। ২০১৮ সাল থেকে এটা বাংলাদেশের নিয়মিত চিত্র হয়ে দাড়িয়েচে। গত এক বছরের কথা ধরলে বাংলাদেশ অন্তত আটটা ম্যাচে লড়াই থেকে ছিটকে গেছে এই ক্যাচ মিস করার কারণে।

নিউজিল্যান্ডে গিয়ে মার্চে বাংলাদেশ দল ছয়টা ম্যাচে ১২ টা ক্যাচ মিস করেছিলো। দুটো ওয়ানডেতে খুব গুরুত্বপূর্ন সময়ে ক্যাচ মিস হয়েছে। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে তিন ম্যাচে সাতটা ক্যাচ পড়েছে। অকল্যান্ডে ফিন এলেনের এক ইনিংসের ৪টা ক্যাচ পড়েছিলো।

নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পর তরুণ খেলোয়াড় নাসুম আহমেদ বলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের আকাশ খুব বেশি স্বচ্ছ হওয়ার কারণে তাঁরা ক্যাচ নিতে সমস্যায় পড়ছিলেন।

এর পরের মাসে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা একই টেস্টে বারবার শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দ্বিমুথ করুনারত্নের ক্যাচ মিস করে তাকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌছে গিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশে এলে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৬৮, ৮০ ও ৯৯ রানে কুশল পেরেরার ক্যাচ ফেলে বাংলাদেশ।

এই সময় কালে এক তাসকিন আহমেদের বলে ১০ টি ক্যাচ পড়েছে। মুস্তাফিজ ও সাকিব আল হাসানের বলে ছয়টি করে ক্যাচ পড়েছে। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে পড়েছে পাঁচটি ক্যাচ।

আরেকটু পেছন ফিরে ২০১৯ বিশ্বকাপে আপনি গেলে দেখবেন, সেখানে বাংলাদেশ ডেভিড ওয়ার্নার, রোহিত শর্মা ও বাবর আজমের মত খেলোয়াড়ের ক্যাচ ফেলে ম্যাচগুলো থেকে ছিটকে গেছে।

কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে?

একটা ধারণা করা হচ্ছে যে, খেলোয়াড়রা আসলে খেলায় মনোযোগ রাখতে পারছেন না। সেটা মাঠের বাইরে অনেক বেশি কথার কারণেও মনোযোগ হারাতে পারেন তারা। আবার অনেকে বলছেন, বায়ো বাবলে টানা দিন কাটানোর ফলে খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে গেছেন। এর ফলেই খেলায় মন রাখতে পারছেন না তাঁরা।

কারণ শেষ পর্যন্ত যাই হোক না কেন, এটা আসলে বাংলাদেশের জন্য দূর্ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ, স্কিল নয়, স্রেফ মনোযোগের অভাবে বাংলাদেশ হেরে চলেছে ক্যাচ ফেলে দিয়ে।

– ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link